Advertisement
০১ মে ২০২৪
Life Imprisonment

রানাঘাটের স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতিকাণ্ডে চার জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড, নির্দেশ দিল রানাঘাটের আদালত

দোষীদের তিনটি ধারায় যাবজ্জীবন, তিনটি ধারায় ১০ বছরের সাজা, অস্ত্র আইনে সাত বছর ও আর কয়েকটি ধারায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবারই পাঁচ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

An image of Jail

—প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:১৫
Share: Save:

রানাঘাটের স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতিকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হওয়া পাঁচ জনের মধ্যে চার জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল রানাঘাট ফাস্টট্র্যাক আদালত। এক জনের আগেই মৃত্যু হয়েছে। দোষীদের তিনটি ধারায় যাবজ্জীবন, তিনটি ধারায় ১০ বছরের সাজা, অস্ত্র আইনে সাত বছর ও আর কয়েকটি ধারায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবারই পাঁচ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু সাজা ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছিল। আদালত সূত্রে খবর, বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মাত্র এক মাস ২২ দিনের মধ্যে মামলা শেষ সাজা ঘোষণা দেশের মধ্যে ‘নজির’। তথ্যপ্রমাণের জন্য প্রথম বার ব্যবহৃত হয়েছে ‘বিআইএস কেয়ার’ অ্যাপ। খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, একত্রিত হয়ে অপরাধ সংগঠন, অস্ত্র আইন-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে অভিযুক্তদের।

দোষী সাব্যস্ত অভিযুক্তেরা অল্পবয়সি হওয়ায় তাঁদের শাস্তি মকুবের আবেদন জানিয়েছিলেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। বিচারক তা খারিজ করে দেন। প্রকাশ্য দিবালোকে ভয় ও সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে ডাকাতির ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছিলেন সরকারি আইনজীবী। বৃহস্পতিবার রানাঘাট ফাস্টট্র্যাক আদালতের বিচারক মনোদীপ দাশগুপ্তের দেওয়া রায়ে তা-ই প্রতিফলিত হল। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ভাবনাচিন্তা করছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী।

গত বছর ২৮ অগস্ট রানাঘাট মিশন রোডের পাশে থাকা একটি প্রসিদ্ধ স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতির ঘটনায় আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হন তিন জন। তাঁদের মধ্যে এক জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অন্যতম অভিযুক্ত মণিকান্ত যাদবের। ধৃত চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে তদন্ত শেষ হয়। গত বছর ২৯ নভেম্বর চার্জ গঠনের পর শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। আট দিনে শেষ হয় ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ। চার্জ গঠনের পর থেকে মাত্র এক মাস ২২ দিনের মধ্যে বুধবার ২৪ জানুয়ারি শেষ হয় বিচারপ্রক্রিয়া। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ধৃত চার জনকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭, ৩৯৫, ৩৯৭, ৩৫৩, ৪১২, ১২০ (বি ) এবং অস্ত্র আইনের ৩৪, ২৫ ও ২৭ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের অপরাধ কোনও ভাবেই খাটো করে দেখা উচিত নয়, এই যুক্তি মেনে নিয়েছে আদালত। পৃথক পৃথক ধারায় আলাদা সাজা ঘোষিত হয়েছে। সন্ত্রাসের পরিস্থিতি বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা ঘোষণা করেছেন বিচারক। বেশ কতগুলি দিক থেকে এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচারপ্রক্রিয়ায় মোট ১৬৪টি সাক্ষ্য প্রমাণ গৃহীত হয়েছে। এক সঙ্গে ৪০টি মেটেরিয়াল এভিডেন্স গৃহীত হয়েছে। ৩৫০ পাতার বক্তব্য আমাদের পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রায় ১৫০টি রায় বক্তব্যের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল। সেন্ট্রাল সায়েন্স ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের একাধিক তথ্যপ্রমাণ গৃহীত হয়েছিল। সিসিটিভির ফুটেজ অন্যতম প্রমাণ হিসেবে আদালত গ্রহণ করেছে।’’

অন্য দিকে, আসামি পক্ষের আইনজীবী বাসুদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তদন্তে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। সাক্ষীদের বয়ানে স্ববিরোধিতা আছে। মক্কেলের বাড়ি এ রাজ্যে না হওয়ায়, প্রতিকূলতার মধ্যে মামলা লড়তে হয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে মক্কেলদের বেকসুর খালাস পাওয়া উচিত ছিল। উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভেবেছি।’’

ডাকাতির ঘটনার ৭২ দিনের মাথায় রানাঘাট আদালতে প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট আদালতে জমা দেয় পুলিশ। মোট ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তবে তিন অভিযুক্ত এখনও পর্যন্ত অধরা। তাদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। বসিরহাটের বাদুড়িয়ার বাসিন্দা হাসনুর জামান, হাওড়ার বাসিন্দা অঙ্কিতকুমার যাদব, ক্লোজ় সার্কিট ক্যামেরার টেকনিশিয়ান সৌরভ চক্রবর্তী, গয়নার দোকানের কর্মী পম্পা কুণ্ডু ও সুস্মিতা দাস এবং রানাঘাট থানার সাব-ইনস্পেক্টর আলতাব হোসেন সাক্ষ্য দেন। অঙ্কিতকুমার যাদব ও হাসনুর জামান বিচারককে জানান, তাঁদের মোটরবাইকের নম্বর হুবহু এক রেখে পৃথক নম্বর প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে। ডাকাতির দিন পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা মোটরবাইক দু’টি তাঁদের নয়। তৃতীয় সাক্ষী ছিলেন সৌরভ চক্রবর্তী।

পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েন পাঁচ অভিযুক্ত। ধৃতদের নাম কুন্দনকুমার যাদব, রাজুকুমার পাসোয়ান, ছোট্টু পাসোয়ান, মণিকান্ত যাদব ও রিক্কি পাসোয়ান। ধৃতদের প্রত্যেকের বাড়ি বিহারে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে মণিকান্তের। তবে তাঁর নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। পুলিশের দাবি, যে তিন অভিযুক্ত এখনও পর্যন্ত অধরা, তাঁদের বিহারের ঠিকানা পাওয়া গেলেও, সেই ঠিকানায় তাঁরা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE