Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নবান্নের কর্তারা বারণ করেছিলেন মমতাকে

তাঁকে সতর্ক করেছিলেন নবান্নের কর্তারা। জানিয়েছিলেন, দু’একজন গ্রেফতার হলে তবেই যেন তিনি রানাঘাটে যান। না হলে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে। নবান্ন সূত্রের খবর, সেই পরামর্শ কানে তোলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে সোমবার বিকেলেই রানাঘাট রওনা দেন এবং আশঙ্কা সত্যি করে ফেরার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়েন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৭
Share: Save:

তাঁকে সতর্ক করেছিলেন নবান্নের কর্তারা। জানিয়েছিলেন, দু’একজন গ্রেফতার হলে তবেই যেন তিনি রানাঘাটে যান। না হলে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে। নবান্ন সূত্রের খবর, সেই পরামর্শ কানে তোলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে সোমবার বিকেলেই রানাঘাট রওনা দেন এবং আশঙ্কা সত্যি করে ফেরার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। মমতার প্রায় চার বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বে এই প্রথম এমনটা ঘটল।

নবান্নের এক কর্তা জানাচ্ছেন, শুক্রবার গভীর রাতে রানাঘাটের কনভেন্টে বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনী ধর্ষিত হওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তরা ধরা পড়বে বলে আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। তদন্তভার দেওয়া হয়েছিল সিআইডি-কে। রাজ্য পুলিশের ডিজি, এডিজি-সহ সিআইডি-র বড় কর্তারা শনিবার থেকে দফায় দফায় গিয়েছেন রানাঘাটে। কিন্তু নিট ফল শূন্য। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রী এলাকায় গেলে তাঁর কাছ থেকে মানুষ জবাবদিহি চাইতে পারেন এমন একটা আশঙ্কা নবান্নের কর্তাদের ছিলই। তা হলে মমতা গেলেন কেন? মুখ্যমন্ত্রীর নিজের কথায়, দোষীরা ধরা পড়ার পরেই যেতে চেয়েছিলেন। “কিন্তু সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়ে যাওয়ায় যেতে হচ্ছে। তাতে আমার আজকের পুরো পরিকল্পনাই আপসেট হয়ে গিয়েছে।”

নবান্ন সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরের পরে মুখ্যমন্ত্রী রানাঘাট যাবেন বলে মনস্থ করার পরে সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে জানিয়ে দেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। জানানো হয়, সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্তদের ছবি ওঠার পরেও গ্রেফতার তো দূরের কথা, পুলিশ কাউকে শনাক্ত করতে কেন পারল না, তাই নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন রানাঘাটের মানুষ। সাবধানবাণী না শুনে বিকেল ৪টে নাগাদ কলকাতা থেকে রানাঘাট রওনা হয়ে যান মমতা। তার পর ফেরার পথে এই ঘটনা। এক শীর্ষকর্তার মন্তব্য, “সতর্ক করা সত্ত্বেও রানাঘাট চলে যাওয়ার খেসারত এ দিন দিতে হল মুখ্যমন্ত্রীকে।”

প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন, এমনটা ঘটারই ছিল। নবান্নেরই এক কর্তার দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যদি শনিবারই যেতেন তা হলে পরিস্থিতি এত উত্তপ্ত হতো না। তিনি সেটা করেননি। করেননি যখন, তখন আরও সময় যেতে দেওয়া উচিত ছিল। তা না করে এ দিন চলে গিয়ে অস্বস্তির মুখে পড়তে হল। ওই কর্তার কথায়, “বিরোধী দলের নেতারা, এমনকী রোম থেকে সন্ন্যাসিনীরা রবিবার এলাকায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। তখনও মুখ্যমন্ত্রী না যাওয়ায় মানুষের ক্ষোভ জমে গিয়েছিল।”

এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের যুক্তিও কিন্তু নবান্নের কর্তাদের কথার সঙ্গেই মিলছে। মমতাও বলছেন, “আমি চেয়েছিলাম দোষীরা আগে ধরা পড়ুক তার পর যাব। তদন্তের কাজটা আগে। আমি একটু রয়ে-সয়ে যেতে চেয়েছিলাম।” সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও অপরাধীরা ধরা না পড়ায় তিনি নিজেও যথেষ্ট বিব্রত। এ দিন নবান্নে সাংবাদিকদের সামনে তিনি তা গোপন করেননি।

প্রশাসন সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়ে মমতা বলেন, “সরকার সবচেয়ে দক্ষ তদন্তকারী দলকে ওখানে পাঠিয়েছে। ডিজি নিজে রয়েছেন। থাকবেনও। ওরা যেখানেই থাকুক না কেন, ধরা পড়বেই। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কড়া মানে কড়া।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE