E-Paper

ধর্ষণে অভিযুক্তকে ‘পুরস্কার’, বিচারের আশায় তাকিয়ে ছাত্রী 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রাজ্যপালের কাছেও লিখিত ভাবে ঘটনাটি জানিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৪৬
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

ছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা দূরের কথা। পরিবর্তে তাঁকেই ফের বিভাগীয় প্রধান করা দেওয়া হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যও করা হয় অভিযুক্তকে। যার সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে আরজিকর কাণ্ডে অভিযোগের আঙুল ওঠা অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের ঘোষণার পরে ফের তাঁকে আর ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেদ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করায়।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন অভিযোগকারী ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রাজ্যপালের কাছেও লিখিত ভাবে ঘটনাটি জানিয়েছেন তিনি। ধর্ষণে অভিযুক্ত একজন শিক্ষককে কী ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হল তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষকদেরই অনেকের অভিযোগ, শাসক দলের শিক্ষক সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা হওয়াতেই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা দূরে উল্টে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।

অভিযোগকারী ছাত্রী কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের অধীনে গবেষণা করছিলেন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে কল্যাণী থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ জানান। অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত শুরু করে। তদন্তের ভিত্তিতে তৎকালীন কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষককে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়ে শো-কজ করে। ছাত্রীর অভিযোগ, “কমিটি তদন্ত করে বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়কে ছয় মাসের জন্য সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তাঁকে সাসপেন্ড করা দূরের কথা। উল্টে ফের বিভাগীয় প্রধান করা হয়। এমনকি একজিকিউটিউ কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, অভিযুক্ত শিক্ষক হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আসেন। সেই সঙ্গে তিনি তৎকালীন তদন্ত কমিটির মান্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টে মামলা করেন। বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, হাই কোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন তদন্ত কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে সেই কমিটি অবৈধই ছিল না। তাদের সুপারিশও ছিল অবৈধ। যদিও অভিযোগের পর বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কথায়, “এতে শুধু পাঠরত ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল। কারণ ছাত্রীটি সুবিচার পেল না।”

ওই ছাত্রী বর্তমানে অন্য শিক্ষকের অধীনে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, “এই ঘটনায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছি। আতঙ্কে আছি। আমার নিরাপত্তার কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিন্তা করলে এমনটা হত না। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে সর্বত্র জানানোর পরেও সুবিচার পেলাম না।” যদিও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি ভয় পাচ্ছি। জানি না আবার কী ভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হবে। রাজনৈতিক ভাবে চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। তা ছাড়া গোটা বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন।” তাঁর দাবি, “রোটেশনাল পদ্ধতিতে দু’বছর অন্তর বিভাগীয় প্রধান করা হয়। এবার আমার পালা। তা ছাড়া নামের প্রথম অক্ষরের ভিত্তিতে একই ভাবে একজিকিউটিউ কাউন্সিলের সদস্য করা হয়ে থাকে। তাই আমি এবার সদস্য হয়েছি। সবই হয়েছে নিয়ম মেনে।” এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায় বলেন,“যা হলার উপাচার্য বলবেন।” উপাচার্য অমলেন্দু ভুঁইয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

অভিযুক্ত শিক্ষক তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার রাজ্য কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন। তা ছাড়া ওই শিক্ষক নিজের যোগ্যতায় যে পদ পাওয়ার সেটা পেয়েছেন। ওয়েবকুপার সদস্য হওয়ার জন্য আলাদা কোনও সুবিধা পাননি। আর সেটা পাওয়ারও কথা নয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kalyani university

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy