সুতিতে মসৃণ জাতীয় সড়ক, ডান দিকে রঘুনাথগঞ্জে বাস দুর্ঘটনা। —নিজস্ব চিত্র।
দু’লেনের পথ বেড়ে চার লেন হয়েছে। বেড়েছে যানবাহনের গতি। কিন্তু চালক, পথচারী বা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা সেই অর্থে বেড়েছি কি? মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে ফরাক্কায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে একের পর এক দুর্ঘটনা সেই প্রশ্নটাই তুলে দিয়েছে।
এ দিকে, কোনও দুর্ঘটনার পরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে সেই জাতীয় সড়কের উপরেই। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো শুরু হয় রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ ও গাড়ি ভাঙচুর। তাতে দুর্ঘটনা তো কমেই না, উল্টে ভোগান্তি বাড়ে। এই অব্যবস্থা থেকে বেরোতে না পারলে মসৃণ রাস্তাতেও যে পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হবে তা মানছেন প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা এটাও কবুল করছেন যে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়াতে আরও প্রচারের দরকার। চালকেরাও যাতে ট্রাফিক আইন মেনে চলেন সে দিকেও পুলিশের উচিত নজর রাখা।
কৃষ্ণনগর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত প্রায় ১৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় সড়ক পড়ছে মুর্শিদাবাদের মধ্যে। তার মধ্যে বহরমপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তার ৯০ শতাংশে চার লেনের কাজ শেষ। ফলে জাতীয় সড়কের অন্য অংশের তুলনায় ওই অংশে যানবাহনের গতি অনেক বেড়েছে। চার লেনের সড়ক বেয়ে ফরাক্কা থেকে বহরমপুর পর্যন্ত যাতায়াত সহজ হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সড়ক পথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। মালদহ, শিলিগুড়ি, নেপাল, ভুটান, এমনকী, বাংলাদেশে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও এই সড়ক পথ প্রধান অবলম্বন। পরিবহণ দফতরের হিসেব অনুযায়ী, ২০১০ সালে দুই লেনের সড়ক পথে যানবাহন যাতায়াত করত দৈনিক গড়ে ৪৫৮৬টি। এখন তা বেড়ে চার লেন হওয়ায় তা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তা মসৃণ হয়েছে। যানবাহনের গতি বেড়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা কিংবা পথচারীরা ট্রাফিক নিয়মের ব্যাপারে এখনও সে ভাবে সতর্ক ও সচেতন নন। নিয়ম না মেনে কিংবা অসতরর্ক ভাবে রাস্তা পারাপার করছেন অনেকেই। বেপরোয়া ভাবে মোটরবাইক চলছে। জাতীয় সড়কে চলছে রিকশাও! আর এই সব কারণেও বাড়ছে দুর্ঘটনা।
জাতীয় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থার এক কর্তা জানান, গ্রামীণ সড়ক থেকে জাতীয় সড়কে ওঠার সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখছেন না পথচারী ও মোটরবাইক আরোহীরা। এ ছাড়াও জাতীয় সড়কের দু’পাশে অনেক মানুষ পরিবার নিয়ে বাস করছেন। ফোর লেনের রাস্তায় নেমে খেলাধুলো করছে শিশুরা। রাস্তাতে নিয়ম না মেনে অন্য লেনে মোটরবাইক নিয়ে ঢুকে পড়ছেন অনেকে। ফলে বহু ক্ষেত্রেই মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটছে। ফোর লেনে যা ঘটার কথাই নয়! কিন্তু দুর্ঘটনার পর শুরু হচ্ছে মানুষের পথ অবরোধ। অবরোধের ফাঁসে ফোর লেনেও যানজট হচ্ছে!
জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘গতিকে দায়ী না করে সকলেই সতর্ক ও সচেতন ভাবে চলাফেরা করলেই কোনও সমস্যা হবে না।’’ কিন্তু সমস্যা হল ওই সড়ক পথের দু’পাশে জনবসতি রয়েছে। চার লেনের ওই সড়কে পলসন্ডা ছাড়া আর কোথাও আন্ডারপাস নেই। গতিবহুল সড়ক দিয়ে পারাপার হওয়া বা যাতায়াত করার মতো সচেতনতা এখনও এই এলাকায় সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ছোট যানবাহন ট্রাফিক নিয়ম না মেনে চার লেনে ঢুকে পড়ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশ সামশেরগঞ্জ, সুতি ও ফরাক্কার ঘন জনবসতিপূর্ণ মোড়গুলিতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগিয়েছে। তাতে দুর্ঘটনা কিছুটা কমেছে বলেও দাবি করেন ওই পুলিশ কর্তা।
রঘুনাথগঞ্জের অধ্যাপক কাশীনাথ ভকত বলেন, ‘‘যাতায়াতের গতি বাড়লে জীবনের গতি বাড়বে। বাঁচবে সময় ও খরচ দুই-ই। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কমাতে যেমন আন্ডারপাস দরকার, তেমনই দরকার পথ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy