Advertisement
E-Paper

গোঁজেই বিপদ দেখছে সব দল

বিরোধী তো বটেই, ভোট-ময়দানে শাসক দলকে রীতিমতো যুঝতে হচ্ছে দলেরই বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের সঙ্গে। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু পুর-এলাকায় জয়-পরায়জয়ের বড় ‘ফ্যাক্টর’ এই গোঁজ প্রার্থীরাই। তাঁদের কেউ জোড়া ফুলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জোড়া পাতা, কেউবা উদীয়মান সূর্যের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীরা তৃণমূলের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে, তার প্রমাণও মিলেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:১৭

বিরোধী তো বটেই, ভোট-ময়দানে শাসক দলকে রীতিমতো যুঝতে হচ্ছে দলেরই বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের সঙ্গে। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু পুর-এলাকায় জয়-পরায়জয়ের বড় ‘ফ্যাক্টর’ এই গোঁজ প্রার্থীরাই। তাঁদের কেউ জোড়া ফুলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জোড়া পাতা, কেউবা উদীয়মান সূর্যের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।

বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীরা তৃণমূলের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে, তার প্রমাণও মিলেছে। সোমবার রাতে বীরনগরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সভা শেষ হওয়ার পরে এলাকার নির্দল প্রার্থীর সমর্থক অন্তত চারটি পরিবারের উপরে হামলার অভিযোগে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। ছ’জন অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন। দু’জন চিকিৎসাধীন। অভিযোগের ভিত্তিতে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুরসভার দু’টি ওয়ার্ডে দুই বিদায়ী কাউন্সিলর জোড়া ফুল ছেড়ে উদীয়মান সূর্যের প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান নন্দদুলাল রায়। তাঁর দাবি, ‘‘পার্থের সভায় ভাল ভিড় হয়নি। এ দিকে, আমাদের প্রচারে ভাল সাড়া মিলছে। সে জন্যই সমর্থকদের সন্ত্রস্ত করছে তৃণমূল।’’

বীরনগরের বিদায়ী পুরপ্রধান তথা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী পার্থকুমার চট্টোপাধ্যায় নন্দদুলালবাবুর দাবি মানেননি। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য অনেকেই মানছেন, সকাল থেকে রাত—বীরনগর পুর এলাকা যে ভাবে সপার্ষদ চষে বেড়াচ্ছেন ৮০ বছরের নন্দদুলালবাবু তাতে উদ্বেগে নেতৃত্ব। সোমবার তাহেরপুরে তৃণমূলের মহাসচিবের উপস্থিতিতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘নন্দদুলালবাবু দলের কেউ নন। অথচ তাঁকেই দলের সম্পদ মনে করে এক সময় তৃণমূলে এনেছিলেন মুকুল রায়!’ বিজ্ঞপ্তিতে রয়েছে তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর গোবিন্দ পোদ্দার, শান্তিপুরের মলয় চক্রবর্তী ও কল্যাণীর দেবাশিস হালদারের নামও। গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘ওদের গুরুত্ত্ব দিচ্ছি না। ওরা নিজেদের তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য বলে মিথ্যচার করছেন বলেই ঘোষণা করতে হল!’’

তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী রয়েছে শান্তিপুর ও কল্যাণীতেও। কল্যাণী পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন দেবাশিস হালদার। স্থানীয়দের দাবি, কল্যাণীর ব্লক সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিরোধের জেরেই তিনি টিকিট পাননি। শাম্তিপুরের গোঁজ প্রার্থীর ব্যাপারটা অন্যরকম। দলেরই এক অংশের দাবি, বিদায়ী পুরপ্রধান তথা বিধায়ক অজয় দে বিরোধী বলে পরিচিত সুব্রত ঘোষকে পরাজিত করতেই নাকি মলয় চক্রবর্তীকে গোঁজ প্রার্থী করেছেন। অভিযোগ মানেননি অজয়বাবু।

অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জে সিপিএমের বিরুদ্ধে গোঁজ প্রার্থী রয়েছে আরএসপি-র। পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ওই প্রার্থী রয়েছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রার্থী পান্থ গোস্বামী। ওই ওয়ার্ডে আরএসপি-র প্রতীকে দাঁড়িয়েছেন সাত্যকী হালদার। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম মনোনীত নির্দল প্রার্থী অনুপ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন উজ্জ্বল রায়। উজ্জ্বলবাবুকে সমর্থনের কথা আরএসপি-র মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মেনেও নিয়েছেন।

‘গোঁজ’ প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আরএসপি নেতৃত্বের কোনও লুকোছাপা নেই। জেলা সম্পাদকের স্পষ্ট কথা, ‘‘আমাদের কাছে আগে দল, পরে ফ্রন্ট। দলকে লাটে তুলে সিপিএমকে ভালবাসতে পারব না।’’ তবে মুর্শিদাবাদ পুরসভায় কোনও রাজনৈতিক দলের গোঁজ প্রার্থী নেই। গোঁজ প্রার্থী রয়েছে কান্দি পুরসভায়। পুরসভার ১৬ নম্বরে সান্ত্বনা রায়, ১২ নম্বরে দেবজ্যোতি রায় এবং ১৮ নম্বরে রাজেশ দাশেরা কেউ কু়ড়ুল কেউ উদীয়মান সূর্যের প্রতীকে লড়ছেন। এঁরা বাম সমর্থিত নির্দল প্রতীকে লড়ছেন। আজ তাঁদের সমর্থনে প্রচারে আসার কথা মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম সাংসদ বদরুদ্দোজা খানের।

বেলডাঙায় তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় প্রথমে অনেকের নাম থাকলেও পরে তাঁদের বহু জনের নাম মূল তালিকা থেকে বাদ যায়। সেই ক্ষোভে তাঁদের মধ্যে দু’জন নির্দল দাঁড়িয়ে পড়েছেন। ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী নিয়ে বেজায় ফাঁপরে শহর তৃণমূল কংগ্রেস। সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হওয়ায় তাঁরা যে দলেরই ভোটে ভাগ বসাবেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তৃণমূল নেতৃত্ব। ভারতীয় ন্যায় বিচার পার্টির হয়ে ১০ নন্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন অভিজিৎ বড়াল। ৯ নম্বরে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন এসরাফিল শেখ। তৃণমূল কংগ্রেসের বেলডাঙা শহর সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় অবশ্য বিক্ষুব্ধদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘দল যাদের বেশি যোগ্য মনে করেছে তাদেরই চূড়ান্ত প্রার্থী করেছে।’’

ধুলিয়ানে কোনও দলেরই বিক্ষুব্ধ প্রার্থী নেই। জঙ্গিপুরে চারটি ওয়ার্ডে দলেরই চার নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোয় অস্বস্তিতে রয়েছে সিপিএম তথা বাম শিবির। প্রায় তিন দশক ধরে বামেদের দখলে রয়েছে জঙ্গিপুর পুরসভা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের বাড়ি ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। বরাবর সেখানে জিতে আসছেন তিনি। এ বার সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য মোহন মাহাতোকে দল প্রার্থী না করায় রাতারাতি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে হাত চিহ্নে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ত্রিমুখী লড়াইয়ে ভোট কাটাকুটির অঙ্কে এই ওয়ার্ডে আশাবাদী বিজেপি।

১০ নম্বর ওয়ার্ডে আরএসপিকে আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ওই ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন সিপিএমের জঙ্গিপুরের সাহেববাজার-মির্ধাপাড়ার শাখা সম্পাদক ইন্তেকাব আলম। একই ভাবে জঙ্গিপুরের ফুলবাড়ি এলাকার সিপিএমের শাখা সম্পাদক সইফুল্লা শেখ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সংরক্ষিত আসনে বাম শরিক আরএসপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন স্ত্রী হাসিনা বিবিকে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের ছোটকালিয়া এলাকার শাখা সম্পাদক অলিপ নিজেই সিপিএম প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দলীয় প্রার্থী হয়েছেন। এই ওয়ার্ড দীর্ঘ দিন সিপিএমেরই দখলে। কিন্তু, বিক্ষুব্ধ নেতা নির্দলে দাঁড়ানোয় মাত্র ১০০ ভোটের ব্যবধানে জেতা বাম আসন কিছুটা হলেও এ বার টলমল।

municipal election rebel candidate trinamool TMC congress cpm bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy