—প্রতীকী চিত্র।
কলকাতায় বিড়লা গোষ্ঠীর দুই স্কুলে দু’টি ঘটনা ছবিটা সামনে এনেছে বটে, তবে পরিসংখ্যানের পাতা ওল্টালে পুরনো ব্যধির সংক্রমণে শিউরে উঠতে হচ্ছে।
নিতান্তই শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতনে আইনি ব্যবস্থা নিতে পকসো আইনে অভিযোগের বহর থেকে স্পষ্ট, রোগটার শিকড় অনেক গভীরে। নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ— রাজ্যের দুই প্রান্তিক জেলায় ওই বিশেষ আইনে গত কয়েক বছরে মামলার বহর চোখে আঙুল দিয়ে বুঝি দেখিয়ে দিচ্ছে, রাজ্য জুড়ে হামাগুড়ি থেকে সদ্য বুলি ফোটা ছেলে-মেয়েরাও বিকৃতির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নদিয়ার এক পরিচিত মনোবিদ ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘আসলে পরিসংখ্যান সামনে এলে বোঝা যায় কী করুণ ভাবে বেঁচে রয়েছে আমাদের ছেলে-মেয়েরা। এর আড়ালে নিশ্চয় রয়ে গিয়েছে আরও অজস্র করুণ কাহিনি।’’ যে সব ঘটনা হয়তো সরকারি খাতায় ঠাঁই পাওয়ার সুযোগই পায়নি।
২০১২ সালে ‘প্রিভেনশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়েল অফেন্সসেস’ বা পকসো আইন চালু হলেও কৃষ্ণনগরে এই বিশেষ আদালত চালু হয়েছে তারও দু’বছর পরে, ২০১৪ সালে। পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদে সে আদালত ২০১৩ সালে শুরু হয়েছে ও প্রতি বছর লাফ দিয়ে তার সংখ্যা বৃদ্ধি দেখে আঁতকে উঠছেন বিচারকেরাই।
২০১৬ সাল পর্যন্ত নদিয়া জেলায় শুধু কৃষ্ণনগর আদালতেই বিশেষ পকসো আদালত ছিল। সারা জেলার শিশুদের যৌন নির্যাতনের বিচার হত সেখানেই। পরিস্থিতির চাপে পড়ে এ বছর কল্যাণী, রানাঘাট এমনকী তেহট্টতেও পকসো আদালত বসাতে হয়েছে। সরকারি নথি বলছে, নদিয়া জেলায় ২০১৫ সালে ১১৫টি শিশু নির্যাতনের মামলার হয়েছে। সাজা ঘোষণা হয় ২৯টির। ২০১৬ সালে হিসেবটা দাঁড়িয়েছে, ১৫৯টি এবং ৩০। আর এ বছরে, শুধু কৃষ্ণনগরে ৬০টি অভিযোগ হয়েছে। কল্যাণী ও তেহট্টে যথাক্রমে ১৯ এবং ১৮টি আর রানাঘাটে ইতিমধ্যেই ৫৬টি শিশু নির্যাতনের অভিযোগ জমা পড়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলা আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে পকসো আইনে একটি মাত্র মামলা হয়েছিল। পরের বছর, তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৬টি। ২০১৫ সালে ২৩৪টি এবং ২০১৬তে ২৭৬টি। এ বছরে শুধুমাত্র বহরমপুর আদালতে পকসো আইনে ১০৫টি মামলা হয়েছে। জঙ্গিপুর, লালবাগ ও কান্দি মহকুমা আদালতেও পকসো আদালত বসেছে। সেখানেও মামলার পাহাড় জমেছে।
নদিয়ার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অনিন্দ্য দাস বলেন, “আমরা লক্ষ করেছি যে, শিশুরা বয়স্ক পুরুষের যৌন লালসার শিকার হচ্ছে।’’ প্রায় এক সুর মুর্শিদাবাদের আধিকারিকেরও। কিন্তু বিকৃতিতে রাশ টানা গিয়েছে কি? নদিয়ার বিশেষ পকসো আদালতের সরকারি আইনজীবী নাসিরুদ্দিন আহমেদ মনে করেন, “সাজা ঘোষণার হার বেড়েছে, অথচ শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতন হয়েই চলেছে।” মুর্শিদাবাদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান শবনম রামাস্বামী বলছেন, “বিকৃত মানসিকতা থেকে এই ধরনের কাজ হচ্ছে। আইন তো রয়েছে, দরকার স্কুল কর্তপক্ষ এবং অভিভাবকদের এগিয়ে আসা।’’
তথ্য সহায়তা: সুস্মিত হালদার ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy