Advertisement
E-Paper

Subrata Mukherjee death: নবদ্বীপে জন্ম, তাই নাড়ি ছেঁড়া টান

১৯৭২ সালে মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর দেশের বাড়ি ন’পাড়ায় এসেছেন সুব্রত। সঙ্গী নির্মল এবং ষষ্ঠী।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৩৬
কল্যাণীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

কল্যাণীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

রাধাবাজার মোড়ে গাড়ি থেকে নেমে পাঞ্জাবি পরা হাতটা আকাশের দিকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে ছুড়ে দিতেই হাতাটা খানিক গুটিয়ে নেমে এল কব্জির উপরে। ফর্সা মণিবন্ধে ঘড়ি দেখিয়ে হাসতে হাসতে তিনি বললেন, “তা হলে সুব্রত মুখার্জি ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারে, কী বলিস?”

ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় ৪টে। ২০০৮ সালের অগস্ট মাস। সুব্রতবাবু তখন আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি। নবদ্বীপ মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নিজস্ব ভবনের উদ্বোধনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁর অনুগামী এবং সংগঠনের নবদ্বীপের সম্পাদক ব্রজগোপাল বণিক।

শ্রমিক সংগঠনের অ-আ-ক-খ শেখানো ‘সুব্রতদা’ চলে যাওয়ার খবরে বিপর্যস্ত প্রবীণ ব্রজবাবু শুক্রবার ঘুরে-ফিরে সেই গল্পই করছিলেন। “ভয়ে ভয়েই প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম। শুনে এক কথায় রাজি। রাজ্যের অন্তত ছ’জন পদাধিকারীকে আমার সামনেই ফোন করে বলে দিলেন, নবদ্বীপ যেতে হবে ১২ অগস্ট।” আর্থিক ভাবে দুর্বল সংগঠনের সম্পাদক যাতায়াতের গাড়ি ভাড়ার কথা তুলতেই জবাব, “ওই পয়সাটা সংগঠনের জন্য খরচ করিস। আমি ঠিক পৌঁছে যাব।” প্রায় কান্না ভেজা গলায় ব্রজবাবু বলেন, “যখন বললাম, সুব্রতদা খাওয়ার কী ব্যবস্থা করব? বলেছিলেন, দশ টাকার চপ-মুড়ির প্যাকেট করবি। ফেরার সময় গাড়িতে খেতে খেতে ফিরব।”

আসলে নবদ্বীপের সঙ্গে যে নাড়ি ছেঁড়া সম্পর্ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। নবদ্বীপ শহর লাগোয়া বর্ধমানের নাদনঘাটে ন’পাড়ায় তাঁদের আদি বাড়ি। ‘সুব্রতদা’র হাতে গড়া এক সময়ে নবদ্বীপের দাপুটে কংগ্রেস নেতা ষষ্ঠীভূষণ পাল বলছিলেন, “তাঁর জন্ম নবদ্বীপ গ্যারেট হাসপাতালে। এখন সে হাসপাতাল আর নেই। পরে শিক্ষকতার সূত্রে তাঁর বাবা বজবজ চলে গেলে সুব্রতদাকেও চলে যেতে হয়। কিন্তু নবদ্বীপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কোনও দিন ছিন্ন হয়নি।” প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীকে ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতির ভোটে জেতানোর জন্য কলকাতার রাজনীতির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের সূত্রপাত। তখন তিনি নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। “সুব্রত মুখোপাধ্যায় তত দিনে প্রিয়দার ডেপুটি। সেটা ’৬৮ সাল। প্রিয়দা সভাপতি হলেন। আমি ছাত্র পরিষদের একজন রাজ্য সম্পাদক হলাম। ’৭২ সাল পর্যন্ত আমি ওই পদে ছিলাম। পরের দু’বছর সুব্রতদা সভাপতি ছিলেন রাজ্যের।”

এর পর নদিয়ার ছাত্র পরিষদ সভাপতি হয়েছেন, জেলা যুব কংগ্রেসের সম্পাদকও হয়েছেন ষষ্ঠীবাবু। এ দিন কিছুটা বিহ্বল হয়ে বলেন, “বয়স ৭৫ হলেও সুব্রতদা আমাদের চেয়েও সুস্থ ছিলেন। এমন ভাবে যাওয়াটা মানতে কষ্ট হচ্ছে।”

পরবর্তী সময়ে নবদ্বীপের অনেক তরুণকে মহাজাতি সদন চিনিয়েছেন সুব্রতদা। তখন মহাজাতি সদন ছিল ছাত্র পরিষদের প্রধান কার্যালয়। রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে প্রবেশের ছাড়পত্র দিয়েছেন। যেমন নবদ্বীপ পুরসভার বর্ষীয়ান কাউন্সিলর নির্মলকান্তি দেব। কলেজে রাজনীতি শুরুর দিন থেকে তিনি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী। নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

বর্তমানে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা নির্মলবাবু বলেন, “শেষ বার দেখা হওয়ার সময়ে সুব্রতদা আমাকে বলেছিলেন, কাউন্সিলর হয়েছিস, মানুষের জন্য কাজ কর।” সেটা গত মার্চ মাসের শেষ। নবদ্বীপ থেকে বালিগঞ্জের বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন নির্মলবাবু।

১৯৭২ সালে মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর দেশের বাড়ি ন’পাড়ায় এসেছেন সুব্রত। সঙ্গী নির্মল এবং ষষ্ঠী। স্মৃতি হাতড়ে নির্মলবাবু বলেন, “তখন চালের কর্ডনিং চলছে। সুব্রতদা দেশের বাড়ি থেকে কিছু চাল নিয়ে যাবেন। আমাদের বলেছেন, স্থানীয় বিডিও-র থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে।”

ষষ্ঠীবাবুর মনে আছে, “সুব্রতদা বৌদিকে নিয়ে এসেছিলেন। ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন তাঁর শৈশবের স্কুল, খেলার মাঠ। চাল নিয়ে ফিরছেন, নাদনঘাট মোড়ে পুলিশ তাঁর গাড়ি চেক না করে ছেড়ে দিতে নিজেই গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়লেন। কর্তব্যরত অফিসারকে বললেন, আপনি আমার গাড়ি দেখলেন না কেন? তিনি আমতা আমতা করতেই মন্ত্রী বললেন, নিয়ম সকলের জন্যই এক রাখবেন।”

এখন অবশ্য তিনি জাগতিক সব নিয়মের ঊর্ধ্বে।

Subrata Mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy