Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Krishnanagar

কোভিড ওয়ার্ডে ‘আয়া’ বাড়ির লোকই

নিয়ম অনুযায়ী, কোভিড হাসপাতালের ওয়ার্ডে হাসপাতালের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বাদে আর কারও থাকার কথা নয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ০৭:০৬
Share: Save:

কোভিড হাসপাতালে করোনা রোগীদের সঙ্গেই থাকছেন তাঁদের পরিবারের লোকজন। কারও ছেলে তো কারও স্ত্রী। পিপিই না পরেই রোগীকে শৌচাগরে নিয়ে যাওয়া, স্নান করানো, খাওয়ানোর কাজ সামলাচ্ছেন তাঁরা। অন্তত এমনই অভিযোগ উঠছে কৃষ্ণনগরের গ্লোকাল কোভিড হাসপাতালে।

নিয়ম অনুযায়ী, কোভিড হাসপাতালের ওয়ার্ডে হাসপাতালের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বাদে আর কারও থাকার কথা নয়। যাঁরা থাকবেন, সকলেরই পিপিই পরা বাধ্যমূলক। সে চিকিৎসক হোন বা নার্স, সাফাইকর্মী হোন বা খাবার সরবরাহকরী। কিন্তু গ্লোকালে সেই বিধি শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। গ্লোকাল কোভিড হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের যুক্তি, “কিছু রোগীর একেবারেই নড়াচড়া করার ক্ষমতা থাকে না। তাঁদের সুবিধার জন্যই কোনও কোনও ক্ষেত্রে আমরা পরিবারের লোকেদের সঙ্গে থাকার সুযোগ দিচ্ছিলাম।” নদিয়ার জেলাশাসক বিভু গোয়েল অবশ্য বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, “এমনটা কোনও ভাবেই হতে দেওয়া যায় না। রোগী ছাড়া অন্য কোনও সাধারণ লোক কোভিড হাসপাতালের ভিতরে থাকতে পারেন না।”

গ্লোকাল কোভিড হাসপাতাল চালুর একেবারে গোড়ার দিকেই কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েও চিকিৎসা পাচ্ছেন না অভিযোগ করে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন কালীগঞ্জের এক রোগী। গোটা সময়টা তাঁর ছেলে ওয়ার্ডে তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। শুধু একটা মাস্ক দেওয়া ছাড়া সুরক্ষার আর কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এ নিয়ে সেই সময়ে জেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও যে অবস্থার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি বরং সেটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা রোগী বা তাঁদের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কথা বললেই জানা যাচ্ছে।

গত ৫ অগস্ট রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে গ্লোকালে পাঠানো হয়েছিল হাঁসখালির নতুনগ্রাম এলাকার এক অশীতিপর বৃদ্ধকে। ৯ অগস্ট সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি মারা যান। অভিযোগ, ওই ক’দিন ওই বৃদ্ধের সঙ্গে ওয়ার্ডেই ছিলেন তাঁর বছর পঞ্চাশের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর লালারস পরীক্ষা করা হয়। ছেলের দাবি, “পরীক্ষায় আমার করোনা ধরা পড়েনি। তাই পর দিনই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

ধানতলার হালালপুর এলাকার বছর একত্রিশের এক যুবকও বাবার সঙ্গে গ্লোকালে ছিলেন বলে অভিযোগ। গত ১০ অগস্ট তাঁর বাবাকেও রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছিল। পরের দিন বছর একষট্টির ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার পরে যুবকটিরও ললারস পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। বর্তমানে তিনি গ্লোকালেই ভর্তি আছেন। সেখান থেকেই ফোনে তিনি বলেন, “বাবা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। একা কিছুই করতে পারছিলেন না। তাই রানাঘাট হাসপাতাল থেকেই আমি বাবার সঙ্গে ছিলাম।” বুধবার রাতে বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে আসা বছর ষাটেকের এক রোগীর সঙ্গে থাকছেন তাঁর স্ত্রী। মহিলার দাবি, ‘‘গ্লোকাল হাসপাতাল থেকেই তো আমায় থেকে যাওয়ার জন্য বলল!”

গ্লোকাল হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই মেল ওয়ার্ডে ১১ জন রোগী আছেন। পরিবারের লোকেদের শোওয়ার জন্য রোগীর পাশেই একটি করে শয্যা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডে তাঁরা থাকছেন ঘণ্টাই। সুরক্ষার ব্যবস্থা বলতে শুধুই মাস্ক। তাঁদের খাবারও দেওয়া হচ্ছে ওয়ার্ড থেকেই। অর্থাৎ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাতেই একেবারে পাকাপাকি বন্দোবস্ত! রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অনেকেই একই কথা জানাচ্ছেন। প্রশ্ন হল, রোগী পিছু দৈনিক খাবার বাবদ যেখানে সরকার থেকে দৈনিক ১৫০ টাকা বরাদ্দ, তাঁদের বাড়ির লোকেদের খাবার খরচ জোগাচ্ছে কে? নাকি, রোগীদের খাবারের বাজেট থেকেই কাটছাঁট করে সামাল দেওয়া হচ্ছে? গ্লোকালে খাবার সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্তা কুমারদীপ দত্ত বলছেন, “ওয়ার্ডে যত জন থাকছেন, সবাইকেই আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি। রোগীর বাড়ির লোকের খাবারের বিল নিয়ে পরে কথা হবে।”

কেন এমনটা ঘটছে? রোগীর পরিজনদের একাংশের ধারণা, সাধারণত আয়ারা হাসপাতালে যে কাজগুলো করেন, সেগুলো তাঁদের দিয়ে করিয়ে নেওয়ার জন্যই এই বন্দোবস্ত। গ্লোকালের কর্মীদের একাংশেরও বক্তব্য, রোজ গড়ে ভর্তি থাকা ৬০ জন রোগীর জন্য মোটে দুই থেকে তিন জন করে নার্স থাকছেন। তাঁদের পক্ষে সব দিক সামাল দিয়ে অশক্ত রোগীদের শৌচাগারে নিয়ে যাওয়া, স্নান করানো বা খাওয়ানো সম্ভব নয়। তাই বাড়ির লোকেরাই সে সব করছেন। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, এই সব কাজের জন্য রোজ অন্তত চার জন করে ‘ওয়ার্ড বয়’ থাকছে। তাদের ভূমিকা সত্যি করে কী, সেই প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না।

এ দিন গ্লোকাল হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত শচীন্দ্রনাথ সরকার শুধু বলেন, “এ বার থেকে আর রোগীর বাড়ির কোনও লোককে ওয়ার্ডে থাকতে দেওয়া হবে না। ওয়ার্ড বয়দেরই ওই কাজগুলো করতে বাধ্য করা হবে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। আর জেলাশাসকের আশ্বাস, “ঠিক কী হয়েছে, সেটা দেখে সেই মতো পদক্ষেপ করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar Covid Ward Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE