জাফিকুলের কলেজে সিবিআই হানা। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়িতে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের হানার পরে এলাকায় কৌতূহল ছড়ালেও, অনেকেই দাবি করছেন, তাঁরা অবাক হননি। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মাত্র কয়েক বছরে জাফিকুলের যে ভাবে উন্নতি হয়েছিল, তাতে এমন কিছু ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলাম।’’ আর এক জনের বক্তব্য, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত তৃণমূলের বড় নেতাদের সঙ্গে জাফিকুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে আমরা জানতাম। ওরা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই জাফিকুলের ক্ষেত্রেও ডাক আসবে বলে মনে করা হচ্ছিল।’’ জাফিকুল অবশ্য বলেন, ‘‘ব্যবসা চালাতে গিয়ে অনেক সময় অনেক মানুষের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক হয়েছে, কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
ডোমকলের মানুষ জাফিকুল সম্পর্কে বলছেন, ‘‘ছিল বিড়াল হয়ে গেল রুমাল, জীবনের উত্থানটা ঠিক এভাবেই হয়েছিল ডোমকলের গোবিন্দপুর এলাকার গৃহস্থ পরিবারের যুবক জাফিকুল ইসলামের।’’ আর সেই একই ভাবে রাজনীতিতেও খুব কম সময়ের মধ্যে রকেটের গতিতে উত্থান ঘটেছিল তাঁর। কলেজের লেখাপড়া শেষ করেই আটা পেশাই মিল থেকে মুড়ির মিল। আর তার পর শুরু হয়ে যায় শিক্ষা ব্যবসা। একের পর এক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে একেবারে ফুলে ফেঁপে ওঠেন সামান্য গৃহস্থ পরিবারের ওই যুবক। আর রাজনীতির উত্থানটাও সেই একই ভাবে। কলেজ মাঠে শাসকদলের বড় সভা করতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে আলাপ তৃণমূলের জেলা নেতাদের সঙ্গে। তাঁদের হাত ধরেই রাজনীতির ময়দানে পা বছর সাতেক আগে। ডোমকল পুরসভার কাউন্সিলর হিসেবে রাজনীতিতে পা রেখে আড়াই বছরের মধ্যেই পুরপ্রধান। আর তার পর গত বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দলের হয়ে লড়ে ডোমকলের বিধায়ক।
রাজনীতির ময়দানে এই উত্থান নিয়ে ডোমকল জুড়ে একটা চর্চা ছিল জাফিকুলকে নিয়ে। তাঁর বাড়ি সংলগ্ন এলাকাতেই একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিএড ডিএলএড কলেজ ছাড়াও ফার্মাসি কলেজ, পলিটেকনিক কলেজের একচ্ছত্র অধিপতি তিনি। কাউকে সঙ্গে না নিয়েই কোটি কোটি টাকার এই কারবার কী ভাবে গড়ে তুললেন, তা এখনও সাধারণ মানুষের কাছে রহস্যের মতো। যদিও একটা অংশের দাবি, মোটা অঙ্কের ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়েই শিক্ষা ব্যবসায় পা রেখেছিলেন জাফিকুল। যদিও এলাকায় এ ছাড়াও নানা রকমের গল্প ছড়িয়ে রয়েছে আনাচ-কানাচে। অনেকেই বলেন, ভিন্ রাজ্যের কোনও এক ব্যক্তির বিশেষ সাহায্যেই জীবনের আঙিনায় এত বড় উত্থান হয়েছিল জাফিকুলের।
বিজেপির জেলা সভাপতি শাখারভ সরকারের দাবি, ‘‘বিএড কলেজে ডাকাতি করা হয় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। নির্দিষ্ট যে অর্থ নেওয়ার কথা তার থেকে অনেক বেশি অর্থ দিতে হয় এখানকার কলেজে ভর্তি হতে হলে।’’ যদিও জাফিকুলের দাবি, ‘‘লেখাপড়া শেষ করার পর থেকেই কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে একটু একটু করে গড়ে তুলেছি আমার প্রতিষ্ঠান। যা হয়েছে একেবারে সরকারি নিয়ম মেনেই হয়েছে। শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক হয়েছে, কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। এখন তৃণমূল করছি বলেই সিবিআই হানা দিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy