Advertisement
E-Paper

রাত জেগে নদী-গ্রাস দেখছে চর

ভাঙনের গেরোয় এ যাবত খান পনেরো ঘর ঘোলা জলের গভীরে। ছাদহীন পরিবারগুলো চরের প্রাথমিক স্কুলের বারান্দায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। নদী পাড়ের অন্যরা খোঁজ করছে উঁচু ডাঙার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০২:২৪
পদ্মা-রোষ: বাড়ছে উদ্বেগ। নদী চলে এসেছে দুয়ারে। বুধবার ভগবানগোলা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

পদ্মা-রোষ: বাড়ছে উদ্বেগ। নদী চলে এসেছে দুয়ারে। বুধবার ভগবানগোলা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নদী যে জেগে উঠছে, চরের কোল বরাবর তার ক্রমাগত আস্ফালনেই মালুম হচ্ছিল দিন কয়েক ধরে। রাতে সে নদী যেন নিশ্চুপে শ্বাপদের মতো এগিয়ে আসছে চরের গভীরে।

চরবাবুপুর তাই রাত জাগছে লণ্ঠনের আলোয়।

—‘নদী খাইল নাহি গো ও...’ চর জাগানিয়ে গানের উদ্বেগ ভরা সুরে ঘুম আসে না মানুষগুলোর।

নদীর সে দিকে ভ্রূক্ষেপ নেই, নিজের নিয়মে সে এগিয়ে আসছে। ভগবানগোলা ১ ব্লকের চরবাবুপুর তা নদীর সহ্গে না জুঝে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে আরও দূরে।

ভাঙনের গেরোয় এ যাবত খান পনেরো ঘর ঘোলা জলের গভীরে। ছাদহীন পরিবারগুলো চরের প্রাথমিক স্কুলের বারান্দায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। নদী পাড়ের অন্যরা খোঁজ করছে উঁচু ডাঙার। পুরনো আবাসের বাঁশের খুঁটি, দরমার বেড়া, দেওয়ালে টাঙানো ভাঙা আয়না— ভিটের শেষ সম্বলটুকু খুলে নিয়ে নতুন ঠিকানার খোঁজে পা বাড়াচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় বিডিও লোপসান সিরিং নিজেই এসেছিলেন ভাঙন দেখতে। বলছেন, ‘‘হনুমন্তপুর পঞ্চায়েতের পদ্মার পাড় বরাবর প্রায় ৮০০ মিটার যে বাঁধ মেরামতির কাজ হয়েছে, তার পর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন বর্যার জল না কমলে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করাও সম্ভব নয়।’’

তাঁর গলায় স্পষ্ট উদ্বেগ। নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন, কোনও সমস্যায় পড়লে ভাঙনগ্রস্ত মানুষদের উদ্ধারের জন্য টিকলিচর, চরলবণগোলা, চরবাবুপুর, চরবিনপাড়ার জন্য পাঁচটি নৌকা মজুত করে রাখার।

ভগবানগোলা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের মহম্মদ জিয়াউল হক জানান, নৌকার মাঝিদের মোবাইল নম্বর গ্রামবাসীদের দেওয়া হয়েছে। রাতের অন্ধকারে পদ্মায় জল বাড়লে তাঁরা যাতে ফোন করে নৌকা ডেকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছাতে পারেন। প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুত রাখার অনুরোধও করা হয়েছে।

হনুমন্তনগরের পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের তাঞ্জিলা বিবি জানান, ভাঙন প্রতিরোধের বিষয়টি দেখার জন্য প্রশাসনকে লিখিত জানানো হয়েছে। আপাতত এলাকার মানুষ যাতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পায়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি। অন্য দিকে বিডিও জানান, ভাঙনগ্রস্ত মানুষদের রাখার জন্য স্থানীয় চরনবণগোলা জুনিয়র হাইমাদ্রাস ও চরবাবুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত করা হয়েছে। ত্রাণ নিয়ে সমস্যা হবে না। পর্যাপ্ত
ত্রাণ রয়েছে।

পাড়ে দাঁড়িয়ে সদ্য ভিটেহারা জহরুল শেখ উথাল-পাথাল পদ্মার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেন, ‘‘ওই দূরে ছিল নদী, এখন সে দোরগোড়ায়!’’ আসলেমা বিবি, শেফালি বিবিরা বলছেন, ‘‘পাড় ভাঙার শব্দে রাতে ঘুম ভেঙে যায়। নদীর পাড়ে বাস করে কী শান্তিতে ঘুম আসে!’’

চরবিনপাড়া, বালিপাড়া, চর নতুনপাড়া, পেটকাটি চর অনেক আগেই তলিয়ে গিয়েছে। এলাকার মানচিত্রে তাদের আর খোঁজ মেলে না। সে সব চরের মানুষগুলো ভিটে-মাটি হারিয়ে বাঁধে-রাস্তার ধারে-খাস জমিতে নতুন করে বসত গেড়েছে। গ্রামের প্রবীণ মানুষ অশীতিপর সিরাজুল ইসলামের করুণ আর্তি, ‘‘কেমন এমন হল বলেন দেখি!’’

erosion River Panic ভগবানগোলা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy