Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সুতি

রাস্তা যেন ডোবা, হুঁশ নেই প্রশাসনের

মোটরচালিত ভ্যান থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে লতিফা বিবি এখন শয্যাশায়ী। মোটরবাইক উল্টে প্রাণে বাঁচলেও সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বিধান দাস। বৃষ্টিতে রাস্তার গর্তে পড়ে মাথা ফেটেছে বছর আটেকের জেবুন্নেসা খাতুনের। গত কয়েক দিনে দুর্ঘটনায় পড়ে কমবেশি আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।

সুতির মদনার মোড় থেকে চক সৈয়দপুর যাওয়ার রাস্তার এমনই হাল। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

সুতির মদনার মোড় থেকে চক সৈয়দপুর যাওয়ার রাস্তার এমনই হাল। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

মোটরচালিত ভ্যান থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে লতিফা বিবি এখন শয্যাশায়ী। মোটরবাইক উল্টে প্রাণে বাঁচলেও সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বিধান দাস। বৃষ্টিতে রাস্তার গর্তে পড়ে মাথা ফেটেছে বছর আটেকের জেবুন্নেসা খাতুনের। গত কয়েক দিনে দুর্ঘটনায় পড়ে কমবেশি আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।

সুতির মদনার মোড় থেকে চক-সৈয়দপুর প্রায় সাড়ে দশ কিলোমিটার পথের বেহাল দশার জন্য এ ভাবেই ঘন ঘন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন এলাকার বাসিন্দারা। ইঞ্জিনিয়ারদের কথায়, মাটি, পাথর, বালি বোঝাই লরি ও ট্রাক্টরের মতো ভারি যানের অবাধ যাতায়াতের ফলে গ্রামের রাস্তাগুলি বেহাল হয়েছে।

সুতি-১ ব্লকের সাদিকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই রাস্তা মদনা থেকে সাদিকপুর, সজনিপাড়া, শেরপুর, ফতুল্লাপুর, চক বাহাদুরপুর, নুরপুর হয়ে শেষ হয়েছে চক সৈয়দপুরে। প্রায় ১০ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি হওয়া ওই রাস্তায় পিচের পলেস্তারা উঠেছে অনেক আগেই। এখন গোটা রাস্তা জুড়ে ছোটবড় গর্ত। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সে সব গর্ত জলে ভরে গিয়েছে। পিচের রাস্তা এখন প্যাচপ্যাচে কাদা। শেরপুরের কাছে কালভার্টের কাছে বিপজ্জনক গর্তে গত একমাসে ছ’টি মোটরবাইক, ১৩টি মোটরচালিত ভ্যান উল্টেছে।

জেলা পূর্ত দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ৫৬৬টি প্রকল্পে ১৪৬০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু রাস্তা নির্মাণ করলেই তো হবে না। তার রক্ষণাবেক্ষণও দরকার।’’ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ১০০০ বসতির এলাকায় রাস্তা তৈরি হয়েছে দৈনিক ৪৫টি ও তার চেয়ে কম বসতি এলাকায় ১৫টি ভারি যান চলাচলের উপযোগী করে। কিন্তু অনেক বেশি যান চলে ওই সব রাস্তায়। যথেচ্ছ মাটি, পাথর, বালি বোঝাই লরি-ট্রাক্টর চলায় রাস্তা দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে। সড়ক পথে নিকাশি, দেড় দু ‘বছর অন্তর সেগুলির নিয়মিত সংস্কার—সে সবের কোনওটাই মানা হয়নি। তাই জেলায় ওই প্রকল্পের ৫০ শতাংশেরও বেশি সড়কের এত বেহাল দশা।

সাদিকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান আরএসপির দিলীপ সরকার এখন প্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘বহু বার ওই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রশাসন ও জেলা পরিষদের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’ তিনি জানান, স্থানীয় মানুষ এতো বোঝেন না। তাঁরা হাতের কাছে গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজনকে পেয়ে রাস্তার বেহাল অবস্থা নিয়ে বার বার নালিশ জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় দু’টো হাইস্কুল, সাতটা প্রাথমিক স্কুল, ছ’টা বেসরকারি স্কুল রয়েছে। নিত্য দুর্ঘটনায় পড়ছে পড়ুয়ারাও।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও দলের প্রাক্তন সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার প্রথম দিকে তৈরি হয়েছিল রাস্তাটি। তারপর আর মেরামত হয়নি। ফলে ক্রমশ তা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। জেলা পরিষদ তৎপর হলে হয়তো এতটা দুরবস্থা হত না।’’

স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য ও শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কংগ্রেসের আশিস তিওয়ারি জানান, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় জেলা জুড়ে অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছে। প্রণব মুখোপাধ্যায় সাংসদ থাকাকালীন এই প্রকল্পের জন্য বাড়তি টাকাও পেয়েছে মুর্শিদাবাদ। পাঁচ বছর পর্যন্ত সে রাস্তা দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সে সব রাস্তা এখন কার্যত ‘ডহর’ ছাড়া কিছু নয়। গত বছর ওই সব রাস্তা সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদকে এক কোটি টাকা দেয় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক প্রকল্প। মদনার ওই রাস্তাটি-সহ অন্যান্য রাস্তাগুলি সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়। নিয়ম মেনে টেন্ডার করা হয়নি বলে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সে টেন্ডার বাতিল করে দেয় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক প্রকল্প দফতর।

আবার টেন্ডার করে এ বছরের মার্চে ওই দফতরে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু আজও তার অনুমোদন আসেনি। জেলা পরিষদ থেকে এমন প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে ওই দফতরকে যে রাজ্য সরকার যদি তার নিজস্ব কোনও ঠিকাদারকে দিয়ে এই সব সংস্কারের কাজ করায় তাতেও কোনও আপত্তি নেই। তারও কোনও উত্তর আসেনি। বর্ষা এসে গিয়েছে। আর তাতেই রাস্তা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE