Advertisement
E-Paper

স্থানীয় আর ‘বহিরাগত’, মাঝে ফের ‘চর’ চাপড়ায়

চাপড়া রয়েছে চাপড়াতেই। তিনি নেই।ভুল হল, প্রার্থী ঘোষণার পরে, তিনি এখন নদিয়ার প্রান্তিক এই নির্বাচনী এলাকায় ঘন ঘনই পা ফেলছেন। তবে, গত পাঁচ বছরে তাঁর পাশে ছায়ার মতো যাঁদের দেখা যেত, দলের সেই নেতারা উধাও।তাদের এক জন এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘অনেক হল, আর নয়। এ বার দেখি আমাদের ছাড়া ভোটটা পার করেন কী করে!’’

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০১:৩০
রুকবানুর। নিজস্ব চিত্র।

রুকবানুর। নিজস্ব চিত্র।

চাপড়া রয়েছে চাপড়াতেই। তিনি নেই। ভুল হল, প্রার্থী ঘোষণার পরে, তিনি এখন নদিয়ার প্রান্তিক এই নির্বাচনী এলাকায় ঘন ঘনই পা ফেলছেন। তবে, গত পাঁচ বছরে তাঁর পাশে ছায়ার মতো যাঁদের দেখা যেত, দলের সেই নেতারা উধাও।

তাদের এক জন এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘অনেক হল, আর নয়। এ বার দেখি আমাদের ছাড়া ভোটটা পার করেন কী করে!’’

যাঁকে লক্ষ্য করে এই তির, দু’হাত বুকের কাছে জড়ো করে সেই রুকবানুর রহমান বলছেন, ‘‘আমার পাশে কোনও দিনই স্বার্থান্বেষীদের ভিড়তে দিইনি। যারা কোনও দিন তৃণমূল করত বলে মনে হয় না।’’ এই ‘নেই’ এবং ‘আছে’ নিয়েই এ বার চাপড়া সামাল দিতে নেমেছেন তৃণমূল প্রার্থী।

নদিয়ার নেতাদের তাঁর ‘কালীঘাটের ক্লাসে’ ডেকে ধমক কম দেননি দলনেত্রী। দলের তাবড় নেতারাও জেলায় বলে গিয়েছেন—লড়াইটা হাতে হাত মিলিয়েই লড়তে হবে। সে কথা শুনছে কে?

বরং ভোটের বেলা য়ত গড়াচ্ছে রুকবানুরের উপরে ‘বহিরাগত’ তকমা ততোই প্রকট হচ্ছে। কেন? দলের একাংশ তার একটা ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন— ‘‘একে তো এলাকায় তাকেন না, তার উপরে কর্মীদের সহ্গে তাঁর ব্যবহারও ভাল নয়। কে থাকবে বলুন তো!’’

পাঁচ বছর আগে, প্রথম বার প্রার্থী হওয়ার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে বহিরাগত বলে ক্ষোভটা ক্ষোভটা সামনে এনেছিলেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। সে বার জোট সঙ্গী ছিল কংগ্রেস। দলের অন্দরের খবর, সেই সময়ে চাপড়ার স্থানীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের একাংশ হাত মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থীর মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন। সে যাত্রায় প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো গিয়েছিল বটে, তবে ক্ষোভ রয়েই গিয়েছিল। সেই সময়ে যাঁরা দিনরাত এক করে রুকবানুরের পাশে ছিলেন যাঁরা, এ বার তাঁদের একটা বড় অংশকেও দেকা যাচ্ছে না প্রার্থীর সঙ্গে। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়ে পাল্টা চ্যালে়ঞ্জও ছুঁড়ে দিচ্ছেন কেউ। তাঁদেরই এক জন হরিদাস প্রামাণিক। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় যিনি চাপড়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি। ‘বহিরাগত’ রুকবানুরকে দলের ভিতর বাইরের সমস্ত ঝড়-ঝাপটা থেকে আড়াল করে রেখেছিলেন হরিদাস। একা হাতে সামাল দেন নির্বাচন। সেই হরিদাসেরই দেখা নেই। কোথায় তিনি?

হরিদাস বলছেন, ‘‘আমি আর কোথায় যাব এখানেই আছি। ভোট মিটতেই ওরা আমায় ভুলে গেল। তাই এ বার আর জোর করে আপমানিত হয়ে যাইনি।’’ হরিদাসের মতো সেই ‘দুঃসময়ে’ রুকবানুরের পাসে থাকা অনেকই বলছেন, ‘‘বিধায়ক হওয়ার পরে এখন ওঁর (রুকবানুরের) পাশে এমন লোকজন থাকে যাদের দেখে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন। তাই আর সেই ভিড়ে থাকতে ভরসা পাই না।’’ তবে, হরিদাসবাবুরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন ভাবলে ভুল হবে। রুকবানুরের জয়ের নেপথ্য কারিগরদের অন্যতম গোলাম রসুল হালসানা, চাপড়া ব্লক কমিটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকেও কিন্তু দেখা যাচ্ছে না দলীয় প্রার্থীর ধারে কাছে। পারিবারিত সূত্রে জানা গিয়েছে এই ঘোর ভোট পর্বে তিনি দেশেই নেই। ফোনে ধরলে স্পষ্ট ঝরে পড়ছে অভিমান, ‘‘এখন তো অন্যদের নিয়ে দল সাজাচ্ছেন রুকবানুর। আমাদের তো কেউ ডাকার প্রয়োজনই মনে করেনি।’’ এই তালিকায় রয়েছে আরও কয়েকটি নাম— শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, নাজিমুল হালসানা, বিমল দাস, ফজলুর রহমান, অলোক দত্ত, অমর সিংহ। গত নির্বাচনে তাঁরাই ছিলেন চাপড়া তৃণমূলের মুখ।

তবে প্রার্থীর পাশে এ বার কারা? ব্লক কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি আব্দল রসিদ, সুকদেব ব্রক্ষ্ম, কাংলা শেখ, জেবের শেখ মত লোকজন। দলের এক কর্মী মনে করিয়ে দিচ্ছে, ‘‘সেদিন এই আব্দুল রসিদই রুকবানুরের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে অনতম কারিগর ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে ব্লক সভাপতি হয়ে গিয়েছেন।’’ আব্দুল অবশ্য সে কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। কালীঘাটের ধমকে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল রুকবানুর-হরিদাসকে। তবে তা যে নিছকই লোক দেখানো তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ক’দিনেই। চাপড়া ফিরে গিয়েছিল পুরনো চাপড়ায়। আর দলীয় কর্মীরা বলছেন, ‘‘তিনি (রুকবানুর) ফিরে গিয়েছিলেন পুরনো মেজাজে!’’

rukbanur rahman outsider
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy