Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিড়ি বেঁধে পুরনো স্কুলে ফিরল সাবিয়া  

দিন কয়েক আগে, বাবা মারা যাওয়ার পরে খাঁ খাঁ সংসার সেই বারানো ইচ্ছেটাই ফের সামনে এনে দিয়েছে তার। জড়সড় হয়ে তাই ফের স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘‘আর একটা সুযোগ দেবেন স্যার, স্কুলে এক বার ভর্তি করে নেবেন!’’ সমশেরগঞ্জের সাহেবনগরের বছর ষোলোর সাবিয়ার কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল স্কুল। তাই নতুন করে স্কুলে যাচ্ছে সাবিয়া।

সাবিয়া খাতুন। নিজস্ব চিত্র

সাবিয়া খাতুন। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
ধুলিয়ান: শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০২:০৬
Share: Save:

আবার স্কুলে ফিরল সাবিয়া খাতুন।

মা মারা যাওয়ার পরে, সত্তর উজিয়ে যাওয়া বাবা আর প্রতিবন্ধী ভাই— সংসারটা টানতে গিয়ে ক্লাস এইটে’ই দাঁড়ি টেনে দিয়েছিল সাবিয়া। নিজেই। পরিপাটি সংসারে সবটুকু সাজিয়ে নিজেকে নিঙড়ে দিয়ে সে যখন রাতে ফাঁকা হত একটু, সাবিয়া বলছে, ‘‘শুধু পাঠ্য বই আর সহপাঠীদের কথা ভেবে খানিক চোখের জল ফেলা ছাড়া আর করার তেমন কিছুই থাকত না।’’

দিন কয়েক আগে, বাবা মারা যাওয়ার পরে খাঁ খাঁ সংসার সেই বারানো ইচ্ছেটাই ফের সামনে এনে দিয়েছে তার। জড়সড় হয়ে তাই ফের স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘‘আর একটা সুযোগ দেবেন স্যার, স্কুলে এক বার ভর্তি করে নেবেন!’’ সমশেরগঞ্জের সাহেবনগরের বছর ষোলোর সাবিয়ার কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল স্কুল। তাই নতুন করে স্কুলে যাচ্ছে সাবিয়া।

নয় বোন আর দুই ভাই। মা রিজিয়া বিবি মারা গিয়েছেন বছর সাতেক আগে। দিদিদের সক্কলের বিয়ের পরে দাদাও সংসার পেতেছেন অন্যত্র। গত কয়েক বছরে সে তাই সংসারের জোয়ালটা কাঁধে নিয়ে প়াশোনা ছেড়ে সরে এসেছিল স্কুল থেকে। তখন তার অষ্টম শ্রেণি। সাবিয়া বলছে, “সারাটা সকাল রান্না, নড়তে চড়তে না-পারা দাদাকে দেখভাল আর শয্যাশায়ী বাবা, এর পরে আর স্কুলে যাব কখ!’’ রান্নাবান্নার ফাঁকেই সকালটা বিড়ি বেঁধে সংসার চালাত সে। সাবিয়া জানাচ্ছে, বাবা খুব অসুস্থ। দাদার অবস্থাও প্রায় একইরকম। সেই তীব্র সংসার পালনের মধ্যেই গত ১২ ফেব্রুয়ারি মারা যান বাবা মুর্তজা আলি। এক দফায় কাজ অনেকটা কমে গিয়েছিল তার। সাবিয়া বলছে, ‘‘তাই ভাবলাম, আর এক বার স্কুলে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে কেমন হয়।” বুধবার তাই কিছুটা ইতস্তত করেই চাচন্ড বিজে হাইস্কুলে ফের পা রাখে সে। প্রধান শিক্ষক মিজাউর রহমানের ঘরের পর্দা সরাতেই ডাক পড়ে, ‘‘আয় ভেতরে আয়।’’ মিজাউর বলছেন, ‘‘মেয়েটির কথা শুনে তো তাজ্জাব হয়ে গেলাম। মেয়েটা ফের পড়তে চায়, কি প্রবল ইচ্ছে। তার পরেই কাঁদতে শুরু করে।’’

আর ভাবতে হয়নি তাঁকে, সঙ্গে সঙ্গে সাবিয়াকে ভর্তি করে নিয়েছেন একেবারে, নবম শ্রেণিতে। বলছেন, ‘‘ও বেশ ভাল ছাত্রী ছিল। সরাসরি নাইয়েই পড়বে। সব বই দেওয়া হয়েছে ওকে। সঙ্গে স্কুলের পোশাক , খাতাপত্র কেনার জন্য কিছু টাকাও। এক রত্তি মেয়েটির এই আগ্রহটাই তো আসল।’’

গ্রামের ইদগাহ কমিটির সম্পাদক আলাউদ্দিন খানও বলছেন, “প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়েছে আমাদেরও। ওই কিশোরীর বাড়িও গিয়েছিলাম। সাংসারের দায় যার নেওয়ার কথা ছিল সে দায় এড়িয়ে গিয়েছে। সাবিয়াকে তাই আশ্বাস দিয়েছি, তার পড়াশুনোর জন্য সবরকম ভাবে সাহায্য করব আমরা, গ্রামের সকলেই।” সেই ভরসায় বুক বেঁধে স্কুলে যাবে সাবিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE