Advertisement
E-Paper

টাকা পেল সাগরদিঘি, বন্ধ হচ্ছে না হেঁশেল

গত তিন মাস ধরে মিড ডে মিলের টাকা পাচ্ছিল না সাগরদিঘির প্রায় তিনশো স্কুল। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে ধার করে কোনও মতে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছিলেন শিক্ষকেরা।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৬ ০২:০৫

অবশেষে মিড ডে মিলের বকেয়া টাকা হাতে পেল সাগরদিঘির স্কুলগুলো!

গত তিন মাস ধরে মিড ডে মিলের টাকা পাচ্ছিল না সাগরদিঘির প্রায় তিনশো স্কুল। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে ধার করে কোনও মতে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছিলেন শিক্ষকেরা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁরা বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। এ-ও ঘোষণা করেন, বকেয়া টাকা না পেলে ১ মার্চ থেকে মিড ডে মিল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন তাঁরা। আনন্দবাজার পত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হতেই বিষয়টি নড়ে বসে প্রশাসন। এর পর এ দিন রাতারাতি দু’মাসের বকেয়া টাকা তুলে দেওয়া হয় স্কুলগুলোকে। সরকারি কর্তারা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসের টাকাও এক সপ্তাহের মধ্যেই দিয়ে দেওয়া হবে।

সাগরদিঘি ব্লকের দু’টি চক্রে প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ১৫৫টি। ৬৬টি শিশু-শিক্ষাকেন্দ্র, ১১টি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র এবং প্রায় ৬০টি হাই ও জুনিয়র হাইস্কুল। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি— এই তিন মাসে মিড ডে মিল বাবদ প্রতিটি স্কুলের বকেয়া ছিল গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে।” শুক্রবার মিড ডে মিলের বকেয়ার দাবি নিয়ে ব্লকের বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ। তাঁরা জানান, অবিলম্বে বকেয়া টাকা না পেলে ১ মার্চ থেকে আর মিড ডে মিলের দায় নিতে পারবেন না। তাঁদের এই ক্ষোভকে সমর্থন জানান কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষাসেলের নেতারাও।

শিক্ষকদের এই ক্ষোভের কথা আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশের দু’দিনের মধ্যেই ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের বকেয়া টাকা স্কুলগুলির অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন শিক্ষকেরা। এবিপিটিএ’র জোনাল সভাপতি ওয়ারেশ আলি বলেন, “সবাই খুব অস্বস্তির মধ্যে ছিল। সেই জন্যই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানাই আমরা। সংবাদপত্রে খবরটা বের হতেই শীতঘুম ভেঙেছে সরকারি কর্তাদের। কিন্তু এত দিন তারা কী করছিলেন?”

তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষা সেলের জেলার সহ-সভাপতি ও সাগরদিঘির জেলা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, “রাজ্য সরকার আন্তরিক ভাবেই চান মিড ডে মিল ভাল ভাবে চলুক। গোটা জেলাতেই তা ঠিক ভাবে চলছে। অগ্রিম টাকা পাচ্ছে তারা। সাগরদিঘির ক্ষেত্রে সরকারকে বদনামের ভাগিদার করার পিছনে আমলাতান্ত্রিক শৈথিল্যতা দায়ী। এটা দূর হওয়া দরকার।”

চোরদিঘি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও তৃণমূল নেতা আসাদুল্লা মল্লিক বলেন, “জেলা প্রশাসনের উচিত সাগরদিঘিতে গাফিলতিটা কোথায়, তা খতিয়ে দেখা। টাকা বকেয়া থাকায় বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছিল আমাদের। ব্লক অফিস থেকে সক্রিয় হলে এই বিলম্ব হত না।”

গত ৬ মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দফায় দফায় চিঠি লিখে মিড ডে মিলের ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ মন্ত্রক। মন্ত্রকের অধিকর্তা গয়া প্রসাদ থেকে যুগ্ম সচিব জে আলম একাধিকবার জেলাগুলিতে লিখিত নির্দেশ পাঠিয়ে জানিয়েছেন, কোনও স্কুলে পরপর তিন দিন বা মাসের মধ্যে ৫টি কার্য-দিবসে মিড ডে মিল বন্ধ থাকলে, তা বন্ধের জন্য যিনি দায়ী হবেন, রাজ্য সরকারকে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। বরাদ্দ আর্থিক ফান্ড ও চাল যথাসময়ে স্কুলে না পৌঁছনোটাও কর্তব্যে গাফিলতি হিসেবেই গণ্য করা হবে। যদি এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও কর্মীর গাফিলতি থাকে, তা-ও দ্রুত জানাতে হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে। নির্দেশে এ-ও বলে দেওয়া হয়েছে, মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ অর্থ অন্তত এক মাস আগে স্কুলগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিতে হবে।

গোটা জেলাতেই স্কুলগুলিতে মিড ডে মিল চলছে সেই গাইড লাইন মেনে। কিন্তু সাগরদিঘিতে কেন শিক্ষকদের মিড ডে মিল চালাতে হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে ধার-দেনা করে, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়ে।
সমস্যা মিটে যাওয়ায় খুশি শিক্ষক ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি।

sagardighi school mid-day meal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy