সোমা পালের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ। -নিজস্ব চিত্র
ঢিল ছুড়লে ‘পাটকেলটা’ তো খেতেই হবে। এ কথা বলেই পাশের বাড়ির দিদি হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গিয়েছিল চার বছরের দস্যি-দামাল ছেলেটাকে। তার পর, রান্নাঘর থেকে গরম খুন্তিটা এনে কষে চেপে ধরে ছোট্ট শরীরটাতে।
শনিবার চাকদহের শিমুরালি সুতারগাছির ঘটনা। দুরন্ত ছেলেটা ঢিল ছুড়েছিল পাড়ার এক জেঠুর গায়ে। একটা ছোট লাঠিও ছুড়েছিল। তারই ‘শাস্তি’ হিসেবে গরম খুন্তির ছেঁকা দেয় প্রতিবেশীর মেয়ে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক মূল অভিযুক্ত সোমা পাল। আহত শিশু শান্তনু ঘোষের বাবা রবিবার চাকদহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ঘটনা জানাজানির পর সোমবার সকালে এলাকার মহিলারা অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ গিয়ে সোমার মা মিঠু পালকে গ্রেফতার করে। তার পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। শান্তনুর মা-বাবার অভিযোগ, পুলিশে জানাতেই সোমা পালেদের বাড়ি থেকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাদের।
চাকদহের পালপাড়ার বাসিন্দা শান্তনুর বাবা সুদীপ ঘোষ নির্মাণ শ্রমিক। মা পূজা চারটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। মাস ছয়েক আগে সুতারগাছিতে একটি বাড়িতে ভাড়া আসেন। কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় বাবা-মা দু’জনেই বাইরে থাকেন। ফলে বেশ কিছুটা সময় বাড়িতে একাই থাকতে হয় শান্তনুকে। একা একা নিজের মতো খেলাধুলো করে সে।
জখম শিশুটি।
এ দিনের ঘটনায় স্তম্ভিত প্রতিবেশীরাও। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ছেলেটা একটু দুরন্ত। তা বলে চার বছর ন’মাসের ওইটুকু শিশুকে এ ভাবে গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দিয়ে দেবে?’’ ওই বাড়িরই আর এক ভাড়াটিয়া মিলন পাল জানান, প্রতিবেশী হিসেবে সুদীপরা খুবই ভাল। শান্তনুও তাঁদের বিশেষ জ্বালাতন করে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার তিনটে নাগাদ শান্তনু একা বাড়িতে ছিল। পাশের বাড়িতেই থাকে বিশ্বনাথ পাল। বিশ্বনাথের ভাইয়ের বাড়িতেই সুদীপরা ভাড়া থাকেন। বাড়ির বাইরে বসেছিল বিশ্বনাথ। পাশে দাঁড়িয়েছিল তার মেয়ে সোমা এবং স্ত্রী মিঠু। খেলতে খেলতে শান্তনু একটি ঢিল ছুড়লে তা বিশ্বনাথের গায়ে লাগে। বকাবকি করলে একটি লাঠি নিয়ে সে বিশ্বনাথের গায়ে ছুড়ে মারে। এর পরেই শান্তনুকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে যায় বছর বাইশের সোমা। একটি গরম খুন্তি দিয়ে শান্তনুর পায়ে-গায়ে-পিঠে-গালে ছেঁকা দিয়ে দেয়।
বিকেলে পূজা বাড়ি ফিরে দেখে বিছানায় শুয়ে কাঁদছে শান্তনু। সে পুরো ঘটনাটা মা-কে জানায়। রাতে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয় তার। রবিবার আত্মীয়দের পরামর্শে থানায় সোমা এবং মিঠুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান সুদীপ। পূজা জানান, ঘটনার পর থেকেই সোমা বেপাত্তা।
এ দিন সকালে পাড়ার মহিলারা সোমার বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ শুরু করে। প্রথমে পুলিশ মিঠুকে গ্রেফতার করেনি। কিন্তু পরে জল গড়াচ্ছে দেখে পুলিশ এসে মিঠুকে গ্রেফতার করে। তারা আশ্বাস দিয়েছে, সোমার খোঁজ চলছে। তাকেও গ্রেফতার করা হবে। এ দিকে মিঠুর কথায়, ‘‘যা হয়েছে, তা মোটেই ঠিক হয়নি। আমি তো ওদের বলেছিলাম, চিকিৎসার সব খরচ আমরাই দেব। কিন্তু ওরা তো থানা-পুলিশ করল।’’ এ কথা বলেই তার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এতে কী ব্যাথা সেরে যাবে? তা হলে এ বার আর খরচই বা দেব কেন?’’
গায়ে দগদগে ফোস্কা নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছটফট করছিল শিশুটি। আধো আধো স্বরে বলে, ‘‘সোমাদিদি জোর করে টেনে নিয়ে গিয়ে বলল, আর করবি বল? বলেই গরম খুন্তির ছেঁকা দিল। আমি বললাম আর করব না। তা-ও শুনল না দিদি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy