Advertisement
E-Paper

ঋতু বদলে যায়, ছাদ জোটে না

মুর্শিদাবাদের রানিনগর ১ ব্লকের এসেরপাড়ার আব্দুসের বারান্দা নিছক একটা উদাহরণ। ছবিটা অবিকল মিলে যাচ্ছে নদিয়ার ধুবুলিয়া কৃষ্ণচন্দ্রপুর মাঝেরপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে—টিনের ছাউনি দেওয়া ঘুপচি একটা ঘর। প্রসূতি ও শিশুদের রান্নার জন্য সেই ঘরের সামনে দু’টো দাবড়া উনুন গনগন করছে।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২২

খাতায়কলমে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলে।

সাকিন, আব্দুস সালাম মণ্ডলের বাড়ির বারান্দা। তবে সরু এক চিলতে মেঠো সেই বারান্দায় খান পঁচিশেক মা-বাচ্চার কি জায়গা হয়?

বৃষ্টি এলে শাড়ির আঁচলে ছানাদের আগলে মায়েদের সে কী আড়াল খোঁজা! কিংবা ভরা জ্যৈষ্ঠ-দুপুরে এক ফালি ছায়ার খোঁজে মা-বাচ্চা একাকার হয়ে গুটিসুটি।

মুর্শিদাবাদের রানিনগর ১ ব্লকের এসেরপাড়ার আব্দুসের বারান্দা নিছক একটা উদাহরণ। ছবিটা অবিকল মিলে যাচ্ছে নদিয়ার ধুবুলিয়া কৃষ্ণচন্দ্রপুর মাঝেরপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে—টিনের ছাউনি দেওয়া ঘুপচি একটা ঘর। প্রসূতি ও শিশুদের রান্নার জন্য সেই ঘরের সামনে দু’টো দাবড়া উনুন গনগন করছে। গলগলে ধোঁয়া। ককিয়ে উঠছে শিশুরা।

পাশাপাশি দুই জেলা, নদিয়া আর মুর্শিদাবাদে আনাচকানাচে হেঁটে এমনই বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দেখা মিলছে। যে বেহাল দশা কবুল করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের ৮৬৭১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ঘুরে সরকারি আধিকারিকরা জেলাশাসককে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জেলার এক জন বিডিও, তিন জন সিডিপিও, অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা, কর্মী, সুপার ভাইজার-সহ মোট ৬০০ জনকে শো-কজ করা হয়েছে। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলছেন, “সময় মতো কেন্দ্র না খোলা, খাবারের মান খারাপ, দূর্ব্যবহারের মতো নানা কারণে তাঁদের শো-কজ করা হয়েছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মুর্শিদাবাদে ৮ হাজার ৬৭১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে ৩,৩৫৬টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলি কারও বাড়ি কিংবা ক্লাবের বারান্দায়, ভাড়াবাড়ি ও অন্য কোনও সরকারি ভবনে চলে। ছবিটা একই রকম নদিয়াতেও। জেলায় মোট ৬,৬২০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে। তার মধ্যে মাত্র ১৮৮২টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন আছে। ২০০২টি কেন্দ্র অন্য সরকারি ভবনে চলে। ২২৯২টি কেন্দ্র কারও বাড়ির বারান্দা কিংবা ক্লাবের চাতালে চলে। এই সব কেন্দ্রগুলির অবস্থা সব থেকে খারাপ।

অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে হাইস্কুল— সব পাল্টে গিয়েছে। সে সব ভবন দেখলে চমকে যেতে হয়। অথচ যেখানে শিশু ও প্রসুতিরা যাতায়াত করেন সেগুলো নিয়ে যেন কারও মাথাব্যথা নেই। দিনের পর দিন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রই চলে খোলা আকাশের নীচে।

ধুবুলিয়া কৃষ্ণচন্দ্রপুর মাঝেরপাড়া এলাকার আমিরুদ্দিন শেখের বাড়ির ভিতরে পাঁচিলের ওপরে টিন তুলে কোনও রকমে ছোট ঘরটি তৈরি করা হয়েছে। গ্রামের মজিবর শেখ, নুর আলমেরা বলছেন, ‘‘আগে তো খোলা আকাশের নীচে কেন্দ্রটি চলত। এখন এই ঘুপচি ঘরে। সেখানে প্রসূতি ও শিশুদের যে কী কষ্ট হয়, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।’’

নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় আমাদের আধিকারিকেরা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে নিয়মিত পরিদর্শন করেন। তবে মুর্শিদাবাদের মতো একই দিনে সব পরিদর্শন করা যায় কি না দেখছি।’’ মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন বলছেন, “এ বছর আমরা দু’হাজার কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতিমধ্যে এক হাজার কেন্দ্রের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। পাঁচশো কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।”

তাঁর দাবি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবনের জন্য জমি কেনার নিয়ম নেই। কারও দানের জমি বা সরকারি জমিতে ভবন তৈরি করা হয়। সেই মতো জমি জোগাড়ের কাজও চলছে। নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, ‘‘মূলত জমির সমস্যার জেরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণে সমস্যা হচ্ছে। এ বছর ৫০০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।”

Anganwadi অঙ্গনওয়াড়ি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy