Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ভাগাড়-কাণ্ডের জের কৃষ্ণনগরে

বিক্রি বন্ধ কম দামি বিরিয়ানির

ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে বিরিয়ানি দোকানগুলির ঝাঁপ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করছে কৃষ্ণনগর পুরসভা। আজ সোমবার থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর ও কল্যাণী  শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০১:০৯
Share: Save:

রাস্তায়, পাড়ার আনাচেকানাচে বছর দু’য়েক ধরেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছিল বিরিয়ানির দোকানগুলো। দুপুরের পর বিশাল বিশাল হাঁড়ির মুখে লাল কাপড় বেঁধে সাজানো থাকত গরম-গরম মটন আর চিকেন বিরিয়ানি। রেস্তরাঁ বা হোটেলের তুলনায় দামেও কিছুটা সস্তা। ফলে বিক্রিও হত দিব্যি। ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে সেই বিরিয়ানি দোকানগুলির ঝাঁপ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করছে কৃষ্ণনগর পুরসভা। আজ সোমবার থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে।

নদিয়ার কল্যাণীতে সরকারি খাদি গ্রামোদ্যোগ কেন্দ্রের চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের ভিতরে একটি চক্র ভাগাড়-কাণ্ডে জড়িত ছিল বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতার হন এক জন। তার পরেও জেলা জুড়ে বিভিন্ন পুরসভা হোটেল-রেস্তরাঁয় খাবারের মান পরিদর্শন শুরু করতে যথেষ্ট দেরি করেছে বলে সমালোচনা শুরু হয় নানা মহলে। পুরসভাগুলি স্বীকার করেছিল, তাদের পরিদর্শনের পরিকাঠামো নেই, ফুড বা স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের পদও শূন্য। সব মিলিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে অনেক পরে। তা সত্ত্বেও বহু হোটেল-রেস্তরাঁ যে সতর্ক হয়নি এবং খাবারের মান ঠিক করার কোনও চেষ্টা করেনি তা প্রমাণিত হয়েছে পুরসভাগুলির অভিযানে।

শনিবার কৃষ্ণনগরের নামী হোটেলগুলির পাশাপাশি পথের ধারে সস্তা বিরিয়ানির দোকানগুলিতেও হানা দেন পুরকর্তারা। তখনই দেখা যায়, সস্তার দোকানগুলিতে খাবারের মান অত্যন্ত খারাপ। এতে ব্যবহৃত মাংস কোথা থেকে আনা হয় সেটাও অনেক দোকানদার স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। এর পরই পুরসভা ওই দোকানগুলি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যত দিন না মাংস কোথা থেকে আসছে তা জানা যাবে তত দিন দোকান খোলা হবে না।

শনিবার পাত্রবাজারে হোটেলে হানা দেন পুরকর্তারা। রান্নাঘরের দশা দেখে তাঁরা চমকে ওঠেন। ফ্রিজ খুলে দেখা যায়, সেখানে প্রচুর বাসি মাংস রাখা আছে। তার মধ্যে অনেক মাংস পচা ছিল। কিছু মাংসের টুকরোর মধ্যে পোকা হয়ে গিয়েছিল। পুরকর্তাদের দেখে হোটেলকর্মীরা তা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ধরা পড়ে যান। কৃষ্ণনগরের একটি ফুড কোর্টে ফ্রিজের ভিতরেও প্রচুর বাসি মাংস পেয়েছেন অভিযানকারীরা। ফুড লাইসেন্স ছাড়াই চলছিল ফুড কোর্টটি। সেখান থেকে খাবার নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।

ভাগাড়-কাণ্ডে তদন্তকারীরা ধৃত সারাফত হোসেনকে জেরা করে জানতে পেরেছে, গত বছর ৬ জুন তাকে পুর এলাকা থেকে মৃত পশু সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছিল খোদ কল্যাণী পুরসভা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, গয়েশপুর খাদি শিল্প কেন্দ্রের (লেদার ইউনিট) আড়ালে পচা মাংসের কারবারের মূল মাথা ছিল কাঁকিনাড়ার বাসিন্দা সারাফাত হোসেন।

যদিও তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান সুশীলকুমার তালুকদার এখন বলছেন, ‘‘অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি আমার মনে নেই।’’ পুরসভার এক কাউন্সিলর জানাচ্ছেন, শহরের কোনও পশু মারা গেলে তা খাদি শিল্প কেন্দ্রেই পাঠানো হত। এটাই ছিল রেওয়াজ। আসলে পুরসভার নিজস্ব কোনও ভাগাড় নেই। তাই কোনও পশু মারা গেলে খাদি কেন্দ্রের লোকেদেরই শরণাপন্ন হতে হত। এমনকী পড়শি কাঁচরাপাড়া পুরসভাতেও কোনও সরকারি ভাগাড় নেই। ফলে ওই পুর এলাকার অনেক পশু মারা গেলে কল্যাণীতে আনা হয়। আর সে সবই চলে যেত খাদি কেন্দ্রে। তদন্তকারীদের দাবি, এখানে মাংস মাটিতে পুঁতে শুধু হাড় ও চামড়া ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও অবৈধ ভাবে ওই সব পশুর মাংস লরি করে অন্যত্র পাচার করা হত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Biriyani Selling Carcass Meat Rotten Meat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE