প্রায় চার বছর বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন স্বামী। যে সংস্থায় তিনি কর্মরত ছিলেন, তারাও পাশে দাঁড়ায়নি। অসুস্থ স্বামীকে দেশে ফেরানোই স্ত্রীর কাছে হয়ে ওঠে চ্যালেঞ্জ। অবশেষে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের উদ্যোগে অসুস্থ অবস্থায় বিশেষ বিমানে দেশে ফিরলেন নদিয়ার বাসিন্দা সমীর বালা। দমদম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে সরাসরি নিয়ে আসা হয় কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
হাঁসখালি থানার উলাসী পূর্বপাড়ার বাসিন্দা সমীর বালার বয়স ৫৮। ২০১৪ সাল থেকে আবু ধাবিতে একটি সংস্থা তিনি কর্মরত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে শেষ বার ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন সমীর। কিছু দিন ছুটি কাটিয়ে ফিরে যান কর্মক্ষেত্রে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সহকর্মীরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করেন। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারও হয়। তখন থেকেই তিনি ওই হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)-এ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
পরিবারের একমাত্র রোজগারে বিদেশের হাসপাতালে ভর্তি। অসুস্থ স্বামীকে দেশে ফেরানো নিয়ে কম দৌড়ঝাঁপ করতে হয়নি সমীরের স্ত্রী সবিতাকে। সবিতা বলেন, ‘‘বিভিন্ন দফতরে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের, এমনকি ওই সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনে যাই। এক ডাক্তারবাবু আমায় এক মানবাধিকার কর্মীর কাছে পাঠান।’’
মানবাধিকার কর্মী অরুণ দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসা মাত্রই দুই দেশের দূতাবাস, রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ শুরু করি। ২০২৩ সালে সমীরের পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। পরে তা নবীকরণ করা হয়েছে।’’ গত ২৭ এপ্রিল তাঁর দেশে ফেরার কথা থাকলেও শারীরিক অবস্থার কারণে বিমানে পাঠানোর ঝুঁকি নেয়নি সে দেশের সরকার। শেষ পর্যন্ত বিশেষ বিমানে গত ৮ মে সরাসরি আবু ধাবি থেকে দমদমে আনা হয়েছে সমীরকে।
কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যালের অতিরিক্ত সুপার তথা ওই আন্তর্জাতিক সংগঠনর কর্মী অতীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘সমাজকর্মী ও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। তাঁর ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল। বিমানবন্দরে আগে থেকেই আমরা সিসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেছিলাম। হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও প্রস্তুত ছিলেন। যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে সুস্থ করে যাতে বাড়ি পাঠাতে পারি, সেইচেষ্টাই চলছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)