Advertisement
E-Paper

পড়েই রইল ছেলের পিঠে

আটপৌরে নাথ বাড়ির একচিলতে উঠোনে এখনও জেগে আছে পৌষ-পার্বণের আলপনা। হেঁশেলের কোণে স্টিলের বাটিতে যত্ন করে রাখা পাটিসাপ্টা। রবিবার পিকনিকে যাওয়ার আগে কোনও রকমে একটা মুখে তুলেছিল অংশু। এক ছুটে বাড়ি থেকে বেরোনের সময় বলেছিল, ‘‘রেখে দিও মা। ফিরে এসে খাব।’’

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৭
মৃতদেহ ঘিরে ভিড় দিগনগরে।

মৃতদেহ ঘিরে ভিড় দিগনগরে।

আটপৌরে নাথ বাড়ির একচিলতে উঠোনে এখনও জেগে আছে পৌষ-পার্বণের আলপনা। হেঁশেলের কোণে স্টিলের বাটিতে যত্ন করে রাখা পাটিসাপ্টা। রবিবার পিকনিকে যাওয়ার আগে কোনও রকমে একটা মুখে তুলেছিল অংশু। এক ছুটে বাড়ি থেকে বেরোনের সময় বলেছিল, ‘‘রেখে দিও মা। ফিরে এসে খাব।’’

ফেরা আর হল কই?

গ্রামে একসঙ্গে ঢুকল ছ’টা তাজা লাশ।

গ্রামের হাওয়া ভারী হয়ে আছে বুকফাটা কান্নায়।

এ গ্রামে পিকনিকের মানে এখন অভিশাপ!

কৃষ্ণনগর থেকে মেরেকেটে বারো কিলোমিটার দূরে সেই গ্রামের নাম দিগনগর। রবিবার যে গ্রাম থেকে ১৯ জনের একটি দল পিকনিক করতে গিয়েছিল বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যে। বক্স বাজিয়ে, হইহই করে গ্রাম ছেড়েছিল পিক আপ ভ্যান। ফিরছিলও সে ভাবেই। দুরন্ত গতিতে।

ছেলের মৃতদেহের সামনে

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর নাকাশিপাড়ার যুগপুরে সেই গতিই যেন কাল হল। নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা। বিকট আওয়াজ। হিমে ভেজা পিচ রাস্তায় মুহূর্তে নিথর হয়ে গেল আটটি প্রাণ। সাত জন এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে যুঝছে। বাড়ি আর ফেরেনি বছর বারোর অংশুর। সোমবার রাত পর্যন্ত তার নিথর দেহ রাখা ছিল শক্তিনগরের পুলিশ মর্গে। অংশুর বাবা অমিয় নাথ রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে মুম্বইয়ে গিয়েছেন। তিনি এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। বিকারগ্রস্তের মতো মা অঞ্জুদেবী কেবলই বলে চলেছেন, ‘‘কত বার নিষেধ করেছিলাম। কথা শুনল না।’’

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দুর্ঘটনায় মৃত অংশু নাথের মা

এ দিন বেলা সোয়া ১২টা নাগাদ দিগনগর বাজারের কাছে গাড়িতে থেকে একে একে ছ’জনের দেহ আসতেই ডুকরে উঠেছিল দিকনগর। স্থানীয় হাইস্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া অংশু ও দ্বাদশ শ্রেণির সাগর নাথের দেহ দু’টি এ দিন রাতেও পড়ে রইল মর্গে। দু’জনেরই বাবা বাইরে থাকেন। তাঁরা ফিরে দেহ নিয়ে আসবেন।

অনেকেই চাননি তাঁদের ছেলেরা গাড়িতে অত দূরে পিকনিকে যাক। কিন্তু ছেলেদের আবদারে শেষতক নিমরাজি হন তাঁরা। দশম শ্রেণির ছাত্র সৌরভের বাবা মানিক নাথ বলছেন, “আমি তো স্পষ্ট ‘না’ করে দিয়েছিলাম। তার পরে দেখি, মনখারাপ করে ঘুরছে। কেন যে পরে রাজি হলাম!’’

ওই গাড়িতে ছিলেন শুভজিৎ প্রামাণিক, অরিন্দম চাকি। তাঁদের চোখে মুখে এখনও আতঙ্ক। বাড়ির দাওয়ায় বসে তাঁরা বিড়বিড় করছেন, ‘‘গাড়ির গতি কম হলে বোধহয় এমনটা ঘটত না!’’

পিকনিকের মরসুমে মাত্রাছাড়়া এই গতির সৌজন্যেই ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। কিন্তু সেই গতিতে লাগাম টানবে কে?

(ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য)

Nakashipara Accident Picnic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy