সালিশিতে ধর্ষণের শাস্তি ধার্য হয়েছিল ‘চড়-থাপ্পর’, সঙ্গে, অভিযুক্তের গলায় জুতোর মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানো। ব্যাস।
সুতির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শাসক দলের তপন দাসের বাড়ির চাতালে, সেই সভার রায় অবশ্য মনে ধরেনি ছ’বছরের ধষির্তা মেয়েটির মায়ের। আপত্তি জানাতেই ফিরে এসেছিল শাসানি— ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে এক ঘরে করে দেওয়া হবে!’
তবে, দিন কয়েক গড়াতেই মেয়েটির পেটে ব্যাথা শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, শুক্রবার যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন বাবা-মা। ঘটনাটি জানাজানি হতে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। তবে বছর বাইশের অভিযুক্ত শ্রীমন্ত দাসের খোঁজ মেলেনি। পুলিশ এখন সালিশি তলব করা গ্রামবাসীদের খোঁজ করছে। ঘটনাটি যে দলের মুখ পুড়িয়েছে, মেনে নিয়েছেন সুতির তৃণমূল পর্যবেক্ষক ইমানি বিশ্বাস। তিনি বলেন, “কড়া শাস্তি হওয়া দরকার। সালিশি সভা বসিয়ে বিচার করার দায় ওঁদের কে দিয়েছে? দল এই ঘটনা সমর্থন করে না।’’
সাকুল্যে বছর ছয়েকের ওই বালিকা ধর্ষিত হয়েছিল শিবরাত্রির সন্ধ্যায়। ধর্ষণের পরে, পড়শি ওই যুবকের হুমকি ছিল— ‘কাউকে বলবি না। তা হলে গলা কেটে নেব!’ বাড়ি ফিরে, যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলে ঘটনা অবশ্য চাপা থাকেনি। তবে, পড়শিরা পুলিশে যাওয়ার তোড়জোড় করতেই গ্রামের মাতব্বরেরা জানিয়েছিলেন, থানা-পুলিশ করে কাজ নেই। গ্রামের ব্যাপার সালিশিতেই মিটিয়ে নাও।’
সালিশি বসেছিল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তপনবাবুর বাড়িতে। তাঁর কথায়, “দু’টি পরিবারই আমার পড়শি। তাই ওই বালিকার মামারা এসে আমার কাছে নালিশ জানাতে আমার বাড়িতেই সালিশি বসিয়েছিলাম।’’ পুলিশ থাকতেও নিজের হাতে বিচারের দায় নিলেন কেন? তপনের নির্বিকার উত্তর, ‘‘কেন, চড়-থাপ্পড় তো মারা হয়েছে।”
সালিশিতে হাজির ছিলেন সাদিকপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের দিলীপ সরকার। তিনি বলেন, “মেয়েটির মামারা এসে জোর করায় গিয়েছিলাম। যা ঘটেছে তা সবার সম্মতিতেই।” আর, বালিকার মা বলছেন, ‘‘আমি মানতে পারছিলাম না। কিন্তু পুলিশে যাব বলতেই ওরা বলল, ধোপা-নাপিত বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’ তবে, মেয়েটি ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় শেষতক, শুক্রবার তাকে সুতির আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই নার্সকে ঘটনাটি খুলে বলেন মা। আর তার পরেই শুরু হয় নড়াচড়া। খবর যায় পুলিশে। ঘটনাটি জানতে পেরে থানার ওসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ অবশ্য তৎপর হন। বালিকার মায়ের অভিযোগ এফআইআর হিসেবেই রুজু করান তিনি। সে রাতেই গ্রামে গিয়ে খোঁজ শুরু হয় শ্রীমন্তের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy