Advertisement
E-Paper

খরচে লাগাম দিয়ে ‘স্মার্ট ক্লাস’ হাংলুর

বিদায়ের সময় হয়ে গেল উপাচার্য রতনলাল হাংলুর। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কে কী দিয়ে গেলেন তিনি? শিক্ষক আর পড়ুয়াদের অনেকে বলছেন, সেরা প্রাপ্তি ‘স্মার্ট ক্লাস।’ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ধরনে আধুনিক ডায়াস, মাইক্রোফোন, সাউন্ড সিস্টেম, পাওয়ার পয়েন্ট দেখানোর সুবিধে, এমন নানা ব্যবস্থা রয়েছে স্মার্ট ক্লাসে।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:২৯
কল্যাণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্মার্টক্লাস রুম। ইনসেটে, উপাচার্য রতনলাল হাংলু।—নিজস্ব চিত্র

কল্যাণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্মার্টক্লাস রুম। ইনসেটে, উপাচার্য রতনলাল হাংলু।—নিজস্ব চিত্র

বিদায়ের সময় হয়ে গেল উপাচার্য রতনলাল হাংলুর। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কে কী দিয়ে গেলেন তিনি?

শিক্ষক আর পড়ুয়াদের অনেকে বলছেন, সেরা প্রাপ্তি ‘স্মার্ট ক্লাস।’ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ধরনে আধুনিক ডায়াস, মাইক্রোফোন, সাউন্ড সিস্টেম, পাওয়ার পয়েন্ট দেখানোর সুবিধে, এমন নানা ব্যবস্থা রয়েছে স্মার্ট ক্লাসে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাস ঘরে রয়েছে উপযুক্ত চেয়ার টেবিলও। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ইতিমধ্যেই সবক’টি বিভাগে একটি করে মোট আটটি স্মার্ট ক্লাস তৈরি হয়ে গিয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ক্লাসঘরেই এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে রাজ্যের মধ্যে প্রথম কল্যাণীতেই চালু হয়েছে স্মার্ট ক্লাস। স্মার্ট ক্লাস পেয়ে খুশি পড়ুয়ারাও। পদার্থবিদ্যার স্নাতকোত্তরের ছাত্রী সোমদত্তা রায় বললেন, ‘‘স্মার্ট ক্লাস আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। বিলাসিতা নয়, এখন বুঝেছি এটা কত প্রয়োজনীয়।’’

পঠন-পাঠনে কী ভূমিকা স্মার্ট ক্লাসের? বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োফিজিক্সের শিক্ষক উৎপল ঘোষ বলেন, ‘‘স্মার্ট ক্লাসে উন্নত প্রযুক্তি থাকায় পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে ছবি, ডায়াগ্রাম, জার্নালের লেখা দেখাতে পারছি, যা ছাত্রদের বোঝাতে সুবিধে হয়। কেবল চক ডাস্টারে যা সম্ভব নয়। এসি ক্লাসঘরে সব দিক বন্ধ থাকায় ছাত্রদের শুনতেও সুবিধে হয়। সব মিলিয়ে পড়াশোনার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয় স্মার্ট ক্লাসে।’’

প্রতিটি স্মার্ট ক্লাসের পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য খরচ পড়ে ৪-৫ লক্ষ টাকা। কোথা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জোগালো এই টাকা? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও খরচের ব্যাপারে যথেষ্ট ‘স্মার্ট’ হতে হয়েছে। আর সেই কাজে পথ দেখিয়েছেন হাংলু।

প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও অনেক কাজ করিয়ে আনা হত বাইরে থেকে। এর ফলে অনেক বাড়তি টাকা খরচ হতো। যেমন, নিজস্ব ছাপাখানা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার কলেজগুলির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সেখান থেকে ছাপানো হত না। পত্র-পত্রিকা এবং অন্য প্রকাশনাও বাইরে থেকে ছাপানো হত। সম্প্রতি সেই রেওয়াজ বদলে কাজে লাগানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাপাখানা। কর্তৃপক্ষের দাবি, এর ফলে প্রায় এক কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

সেই সঙ্গে, বিদ্যুতের অপচয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যেমন, ল্যাবরেটরিগুলিতে ২৪ ঘণ্টা সব রকম যন্ত্র, আলো, এসি চলছিল। নজরদারি বাড়িয়ে এক বছরে সাশ্রয় হয়েছে ৭০ লক্ষ টাকা।

কর্তৃপক্ষের দাবি, টাকা সাশ্রয় হয়েছে কর্মীদের প্রাপ্যের হিসেব কষায় যথাযথ বিধি প্রয়োগ করেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক জানান, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা ৩০০ দিন পর্যন্ত ছুটি জমা করে রাখতে পারতেন। তাঁরা অবসর নেওয়ার সময় ৩০০ দিনের ‘আর্নড লিভ’-এর বিনিময়ে টাকা পেয়ে যেতেন। কিন্তু ছুটির হিসেব ঠিক মতো রাখা থাকত না বলে অনেকেই পুরো ৩০০ দিনের ছুটির বিনিময়ে টাকার জন্য আবেদন করতেন। ওই অধ্যাপক বলেন, ‘‘কেউ কেউ ১২-১৩ লক্ষ টাকাও এই বাবদ পেয়েছেন।’’ উপাচার্য হাংলু সেই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা হয়। পুরনো নথি বার করে, ছুটির হিসেব খতিয়ে দেখে তবেই প্রাপ্য নির্ধারণের বিধি চালু করেন তিনি। তখন দেখা যায়, অনেক কর্মীরই ছুটির বিনিময়ে টাকার আবেদন ধোপে টিকছে না। এরপর প্রশাসনিক দফতরও উন্নত পদ্ধতিতে ছুটির হিসেব রাখছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ মেটানোয় নগদ লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়াতেও লাভ হয়েছে, দাবি কর্তৃপক্ষের। সমস্ত খরচ চেকের মাধ্যমে দেওয়া শুরু হয়েছে। উপাচার্যের দাবি, ১ টাকা ৩৫ পয়সার বিলও চেকে মেটানো হয়েছে। এর ফলে ঠেকানো গিয়েছে অন্দরের দুর্নীতি। সাশ্রয় হয়েছে অনেক টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, উপাচার্যের উদ্যোগে গত এক বছরে সাশ্রয় হয়েছে চার কোটি টাকা। সেই টাকাই কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে স্মার্ট ক্লাস। সেই সঙ্গে আনুমানিক ১.৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠছে নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, এবং ৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজেদের আলাদা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের প্রকল্প চূড়ান্ত করে সরকারি স্তরে অর্থ অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন আর সেই সাহায্যের জন্য তাঁদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। নিজেদের টাকা থেকেই তাঁরা শুরু করে দিয়েছেন প্রকল্পের কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র আগে থেকেই ছিল। কিন্তু, সেখানে ছিল না উপযুক্ত পরিকাঠামো। এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুরোদস্তুর ঝকঝকে। প্রাথমিক চিকিৎসা মেলে সর্বক্ষণ।

সাশ্রয়ে কল্যাণীর দেখানো পথে বাকিরা হাঁটবে কবে?

state news smart class school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy