Advertisement
E-Paper

মাটি মাফিয়ার মৃত্যু বিষক্রিয়ায়

সন্দেহটা প্রথম থেকেই ছিলই। সন্দেহ ছিল তার পরিবারের লোকেদের। পুলিশের কাছে অবশ্য কোনও অভিযোগ ছিল না। কিন্তু ময়না তদন্তের রিপোর্টে দেখা গেল, কল্যাণীর কুখ্যাত মাটি-মফিয়া দেবুকে খুনই করা হয়েছিল। মদের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে তাকে বলেই পুলিশের অনুমান। খুনের ঘটনায় এক মহিলার জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে উঠে এসেছে।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০২:০৭

সন্দেহটা প্রথম থেকেই ছিলই। সন্দেহ ছিল তার পরিবারের লোকেদের।

পুলিশের কাছে অবশ্য কোনও অভিযোগ ছিল না। কিন্তু ময়না তদন্তের রিপোর্টে দেখা গেল, কল্যাণীর কুখ্যাত মাটি-মফিয়া দেবুকে খুনই করা হয়েছিল।

মদের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে তাকে বলেই পুলিশের অনুমান। খুনের ঘটনায় এক মহিলার জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে উঠে এসেছে। পুলিশ অবশ্য এখনও সেই মহিলার নাগাল পায়নি। দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া দেবুকে সেই ডেকে এনেছিল। খুনের ঘটনায় নাম আসছে আরও এক মাফিয়ার। এক সময় সেই দেবুকে এই কারবারে নামিয়েছিল।

পরবর্তীকালে দেবু তারই প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠেছিল। পুলিশের ধারণা, এই দুজন খুনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও, খুনের পিছনে প্রভাবশালী কেউ রয়েছে। খুনের ঘটনায় জড়িত দেবুর সাগরেদরাও গা ঢাকা দিয়েছে।

গত ১১ এপ্রিল মাঝেরচর এলাকায় নিজের ঠেকের মধ্যেই দেবু দাসের (৩৮) মৃতদেহ মেলে। সেই সময় সে পুলিশের খাতায় এলাকা ছাড়া ছিল। বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হলেও, তার দেহে তার কোনও লক্ষণ ছিল না। ফলে অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ভাবা হয়েছিল। পুলিশও প্রাথমিকভাবে তেমনই মনে করেছিল। তাদের কাছে দেবুর পরিবার থেকে কোনও অভিযোগ সেই মুহূর্তে জমা পড়েনি। ভোটের বাজারে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলেই দেবুর উত্থান। সেই সময় সে সিপিএমের ছত্রছায়াতেই ছিল। চোলাই-সহ বিভিন্ন ধরনের বেআইনি কাজ কারবারে হাত পাকায় দেবু। স্থানীয় এক মাফিয়া তাকে নিজের দলে নিয়ে আসে। তাকেই দেবুর গডফাদার বলা হয়।

জমানা বদলের পর তার গডফাদারের সঙ্গে দেবুও তৃণমূলে যোগ দেয়। তারপরেই তারা শুরু করে বেআইনি মাটির কারবার। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এলাকায় এক সময় আবাসন দফতরের সরকারি ইটভাটা ছিল। বর্তমানে সেই ভাটা বন্ধ। সেখানকার মাটি কেটে সে মাঝের চর এবং আশপাশের এলাকার বেসরকারি ইটভাটাগুলিতে বিক্রি করত। এরই মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে তার গডফাদারের সঙ্গে দেবুর গন্ডগোল বাঁধে। দেবু নিজের দল গড়ে। কিছু দিনের মধ্যে দেখা যায়, দেবুর দলই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তৃণমূলে থাকলেও নানা সময় দলের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়। একবার পুরভোটে সে প্রকাশ্যে দলের বিরোধিতা করে নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছিল। সেই ঝামেলার মাশুলও তাকে দিতে হয়েছিল। পুলিশ অস্ত্র আইনে তাকে গ্রেফতার করে।

শুধু মাটির কারবারই নয়, রাতের ফি রাতে দলবল নিয়ে মদ্যপ অবস্থায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সন্ত্রস্ত করতে শুরু করেছিল সে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি এলাকার বাসিন্দারা (যে দলে তৃণমূলের লোকেরাই বেশি ছিল) গঙ্গার ধারে তার দুটি ঠেক জ্বালিয়ে দেয়। তার পর থেকে সে এলাকা ছাড়া ছিল। কিন্তু, ১১ এপ্রিল ভোরে তার মৃতদেহ মেলে তার নিজের এলাকায়। পুরনো ঠেকেই।

স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পারে গভীর রাতে তার পুরনো ঠেকেই খানাপিনার আসর বসেছিল। রাত বাড়তেই অবশ্য সে এলাকা শুনসান হয়ে যায়। পর দিন ভোরের দিকে দেখা যায়, তার মৃতদেহ সেই ঠেকের বাইরে পড়ে রয়েছে। আর কাউকে সেখানে দেখা যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।

সম্প্রতি ময়না তদন্তের রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসেছে। কল্যাণীর এসডিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য বলেন, ‘‘ময়না তদন্তের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিষক্রিয়াতেই মৃত্যু হয়েছে তার। তার অন্ত্রে মদও মিলেছে।’’ তবে কী ধরণের বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল, তা ময়না তদন্তের রিপোর্টে নেই। কৌস্তভদীপ্ত জানিয়েছেন, ওই বিষ এবং মদের নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ধারণা, এমন ধরণের বিষ মেশানো হয়েছিল, যার লক্ষণ মৃতদেহে দেখা যায়নি। মোবাইল কল ডিটেলস থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, এক মহিলা ফোন করে দেবুকে ডেকেছিল। রাতের সেই আসরে যে সেই মহিলা ছিল, তার প্রমাণ পুলিশ পেয়েছে। তার সঙ্গে দেবুর প্রতিদ্বন্দ্বি মাফিয়ার যে যোগাযোগ হয়েছিল, তার প্রমাণও পুলিশের হাতে এসেছে। পুলিশ যতদিনে তাদের কথা জানতে পারে, ততদিনে পাখি উড়ে গিয়েছে। কোনওভাবেই পুলিশ তাদের নাগাল পাচ্ছে না। তাদেরকে জেরা করলে পুলিশ জানতে পারবে, আসল হাত কার রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, দেবুকে কেন খুন করা হল? বিভিন্ন মহলের মত, দেবুকে দিয়ে কাজ হাসিল করা সহজ। টচজলদি কাজে তার জুড়ি ছিল না। কিন্তু, তাকে দিয়ে কাজ করানোর হাজারো ঝামেলাও ছিল। শেষ দিকে পুলিশের তাড়া খেয়ে সে অনেকের বিরুদ্ধে মুখ খোলার হুমকি দিচ্ছিল। তার জন্যই তাকে সরিয়ে দেওয়া জরুরী ছিল। পুলিশ সবদিকই খতিয়ে দেখছে।

soil mafia police poison
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy