Advertisement
E-Paper

সব ইচ্ছা পূরণ হয় না, জানে সৌরভ

বাঁশ আর ছেঁড়া পলিথিনের আড়ালে চায়ের দোকানটায় খুব সকালে যে ভিড়টা উন্মুখ হয়ে জাতীয় সড়কের দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই ভিড়ে রোজ দেখা যায় তাঁকে। উত্তম সাহা, কাগ্রামের মাঝ বয়সী ভাঙা শরীরের প্রৌঢ়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০২:১৪
সৌরভ সাহা

সৌরভ সাহা

বাঁশ আর ছেঁড়া পলিথিনের আড়ালে চায়ের দোকানটায় খুব সকালে যে ভিড়টা উন্মুখ হয়ে জাতীয় সড়কের দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই ভিড়ে রোজ দেখা যায় তাঁকে। উত্তম সাহা, কাগ্রামের মাঝ বয়সী ভাঙা শরীরের প্রৌঢ়। হাতে বেলচা, মাথায় রং চটা গামছা। দিনভর ইট-বালি-সুড়কি গাড়ি থেকে খালি করে সাকুল্যে দু-আড়াইশোর আয়।

দশ জনের সংসারে সেই আয়, মুড়ি-মোটা চালের ভাতের বেশি জোগাতে পারে না। তাই কি? না হলে, সেই হাড় হাভাতে মানুষটার ছেলে সৌরভ, ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে সাফল্য কুড়োয়!

অমরনাথ মুখোপাধ্যায় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অবশ্য বলছেন, ‘‘ছেলেটা বাস্তবিকই মেধাবী।’’ তবে এই হা-অন্ন সংসারেও সৌরভের দিদির টিউশনির সামান্য আয়, দাদু-ঠাকুমার বিড়ি বাঁধা রোজগার বাঁচিয়ে ছেলেটার জন্য রাখা হয়েছিল চার-চারজন গৃহ শিত্রক। নাম মাত্র টাকায় তাঁরাও সৌরভকে দেখিয়ে দিয়েছেন আটকে যাওয়া অঙ্ক, বিজ্ঞান কিংবা ইংরাজি।

যা শুনে স্কুলের এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘বলতে খারাপ লাগলেও এমন দুঃস্থ পরিবারের ছেলেকে পরিয়ে কেউ পয়সা নেয়!’’

তবে তার বই-খাতার ভার তুলে নিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষকেরাই। প্রয়োজন হলেই তাঁরা সে সব বাড়ি পৌঁছে দিতেন। মাঝেমধ্যে সে সব জোগাত গৃহশিক্ষকরা। স্কুলের উঁচু ক্লাশের ‘দাদা’রাও যে সময়ে-অসময়ে সাহায়অয় নিয়ে এগিয়ে এসেছে, সৌরভ জানাচ্ছে সে কথাও। স্কুলের শিক্ষকরা তার পড়াশোনা নিয়ে সব সময়েই নজরও রেখেছে আলাদা ভাবে। দু’এক জন গ্রামবাসীও এগিয়ে এসেছেন উদার হাতে।

কাগ্রামের তাঁতিপাড়ার এই উদারতাই ফিরিয়ে দিয়েছে সৌরভ। গ্রামের বাসিন্দারা তাই খোলা গলয়া বলছেন, ‘‘আমাদের মুখ রেখেছে ছেলেটা।

মাথা নীচু করে আঙুল দিয়ে মাটিতে দাগ টানার পাঁকে ছেলেটি জানায়, ‘‘জানি না হবে কিনা, তবে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। তবে, তার জন্য অনেক টাকা চাই তো, অত টাকা আসবে কোথা থেকে!”

তার দিদি পাপিয়া সাহা এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পড়াশোনা করার ফাঁকে টিউশন করে সে-ও। ভাইয়ের পড়াশোনার একটা খবর জুগিয়েছে ওই সদ্য কিশোরীও। আর উত্তমবাবু বলেন, “ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। মেয়েটাও পড়তে চাইছে। শুনতে ভাল লাগে, কিন্তু কোথা থেকে কী সংস্থান হবে জনি না। এক কাঠা জমিও নেই যে বিক্রি করে জোগান দেব টাকার!’’

খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর, মাটির দু’টি অপরিসর কামরা। সেখানেই গাদাগাদি করে দাদু, ঠাকুরমা, কাকা, কাকিমা মিলিয়ে দশ মাথাক সংসার। সেই স্বল্প পরিসরেই পড়াশোনার জন্য এক টুকরো জায়গা বেছে নিয়ে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিয়েছিল ছেলেটি। সেখানেই বসে সৌরভ বলছে, ‘‘সব সময় তো ইচ্ছা পূরণ হয় না, হয়তো হবে না!’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy