Advertisement
০৫ মে ২০২৪
E-Pharmacy

E-Pharmacy: ই-ফার্মেসিতে আইন অস্পষ্ট, রাশ টানে কে

অনলাইনে অনিয়ন্ত্রিত বিক্রির ফলে ওষুধের অপব্যবহার বাড়তে পারে, এমন অভিযোগ তুলে ২০১৭ সালে দিল্লি হাইকোর্টে একটি আবেদন দায়ের করেন কিছু চিকিৎসক।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২২ ০৬:০৩
Share: Save:

ই-ফার্মেসি বা অনলাইনে ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ নাকি বৈধ—তা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য প্রচারিত না হওয়ায় এর উপর রাশ টানা যাচ্ছে না বা নজরদারি চালানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ড্রাগ কন্ট্রোল কেন এ ব্যাপারে একেবারে নীরব, তারও কোনও উপযুক্ত জবাব মেলেনি।

ই-ফার্মেসি মানে হল, যেখানে ক্রেতা ওষুধ অনলাইনে অর্ডার করেন এবং তার টাকা অনলাইনে বা ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’তে দেন। ওষুধ তাঁর বাড়ি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ, সেখানে কোনও ওষুধের দোকানের অস্তিত্ব থাকে না। ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক আইনে অনলাইনে ওষুধ বিক্রির নিয়মকানুন সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। কারণ, ওই আইন যখন চালু হয়েছিল, তখন অনলাইন ফার্মেসি ছিল না। ২০১৫ সালের অগস্টে দিল্লিতে সব রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলারদের নিয়ে ৪৮তম ‘ড্রাগস কনসালটেটিভ কমিটি’র বৈঠক হয়। সেখানে অনলাইন ফার্মেসিগুলির জন্য নির্দেশিকা তৈরি করার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়। সেই অনুযায়ী মুম্বই, দিল্লি, কর্নাটক, ওড়িশার ড্রাগ কন্ট্রোলারদের নিয়ে গড়া হয় একটি সাব-কমিটি। ২০১৮ সালের অগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় সরকার অনলাইন ফার্মেসিগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি খসড়া আইনবিধি তৈরি করে। উদ্দেশ্য ছিল, ই-ফার্মেসির কথা মাথায় রেখে ড্রাগ ও কসমেটিক্স আইন সংশোধন করা। কিন্তু তার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিষয়টি একই ভাবে ফাইলবন্দি রয়ে গিয়েছে। কোনও অগ্রগতি হয়নি।

অনলাইনে অনিয়ন্ত্রিত বিক্রির ফলে ওষুধের অপব্যবহার বাড়তে পারে, এমন অভিযোগ তুলে ২০১৭ সালে দিল্লি হাইকোর্টে একটি আবেদন দায়ের করেন কিছু চিকিৎসক। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ১২ তারিখ দিল্লি হাইকোর্ট অনলাইন ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পর অন্য এক আবেদনের ভিত্তিতে মাদ্রাজ হাইকোর্টও জানায়, যতদিন না কেন্দ্র অনলাইনে ওষুধ বিক্রির ব্যাপারে কোনও আইন করছে ততদিন কোনও ই-ফার্মাসি চেন্নাইতে ওষুধ বেচতে পারবে না। ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতেও বলে আদালত। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করতে এখনও দেখা যায়নি।

বরং এরই মধ্যে দেশে ১১টি ই-ফার্মেসি স্টার্ট আপ সংস্থাকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়ান ইন্টারনেট ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন’ বা আইআইপিএ তৈরি হয়েছে। তারা সব নিয়মকানুন মেনে ব্যবসা চালানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। কেন্দ্র ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র স্বপ্ন সফল করতে চাইছে বলে এই সংস্থাগুলিরও ব্যবসায় কোনও সমস্যা এখনও পর্যন্ত হচ্ছে না। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষে দেশে ই-ফার্মেসির ব্যবসা ২৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে। সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন অবশ্য কেন্দ্রকে দ্রুত ই-ফার্মেসি নিয়ে আইন প্রণয়নের করার ব্যাপারে জোর দিচ্ছে। কিন্তু যত দিন না তা হচ্ছে তত দিন ই-ফার্মেসির দাপটে সাধারণ ওষুধের দোকান মার খাচ্ছে। কারণ, ই-ফার্মেসি ওষুধে অনেক বেশি ছাড় দিতে পারছে।

নদিয়া জেলার ওষুধ ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে গোপীনাথ দে বলেন, “আসলে বহুজাতিক সংস্থাগুলির চাপের কাছে মাথা নত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সব দেখেও না দেখার ভান করে আছে।” বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এ নিয়ে দফায়-দফায় সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। প্রতি জেলায় ড্রাগ কন্ট্রোল, জেলাশাসক, বিধায়ক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

কেন ই-ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে না ড্রাগ কন্ট্রোল? নদিয়ার ড্রাগ কন্ট্রোলার কৃষ্ণাঙ্গ ভট্টাচার্য বলেন, “ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া এটা নিয়ন্ত্রণ করেন। এ বিষয়ে রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই। সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের পূর্বাঞ্চল দফতর এর উত্তর দিতে পারবেন।” তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ই ফার্মেসির ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি খসড়া আইনের প্রস্তাব তৈরি করে বিভিন্ন মহলে মতামতের জন্য পাঠানো হচ্ছে।”

অনলাইন ফার্মেসির স্থানীয় কর্মীরা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ই-ফার্মেসির যে জায়গাগুলি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে তা হল, এ ক্ষেত্রে প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে কিনা জানা যাচ্ছে না। নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে কিনা জানা যাচ্ছে না। ই-ফার্মেসির তরফে কোনও ফার্মাসিস্ট প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ দিচ্ছেন কিনা জানা যাচ্ছে না। ভুল করে অন্য ওষুধ সরবরাহ করা হলে রোগী যদি খেয়াল না করেন তা হলে বিপদের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

E-Pharmacy medicines
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE