Advertisement
০৯ মে ২০২৪
Accident

Accident: চিকিৎসায় মাত্র দুই চিকিৎসক কেন, উঠল প্রশ্ন

রবিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে  হাসপাতাল চত্বরে মৃতদের পরিবারের লোকেরা ভিড় করতে থাকেন। অনেকেই হাসপাতাল চত্বরেই মাটিতে কাঁদতে-কাঁদতে মাটিতে শুয়ে পড়েন। 

স্ত্রীর মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বামী।

স্ত্রীর মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বামী। নিজস্ব চিত্র।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৫৫
Share: Save:

সাড়ে চার বছরের অনন্যার মৃতদেহের উপরে আছড়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদছিলেন অমিত মুহুরি। রবিবার ভোরে হাসপাতালের নিস্তব্ধতাকে ফালাফালা করে দিয়ে সেই কান্না ধাক্কা খাচ্ছিল জরুরি বিভাগের দেওয়ালে।

হাঁসখালির দুর্ঘটনায় মেয়ে অনন্যার সঙ্গে মারা গিয়েছেন অমিতের স্ত্রী অনিতাও। মারা গিয়েছে বোন শ্রাবণী মুহুরি ও পরিবারের আরও একাধিক সদস্য। অমিত একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছেন। কারণ, তিনি পিছনের একটি গাড়িতে আসছিলেন। রবিবার সকালে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে শূন্যদৃষ্টি নিয়ে অমিত বলছিলেন, ‘‘এ ভাবে একা কেন বেঁচে রইলাম? এমন শাস্তি কেন পেলাম? এর থেকে মরে যাওয়াই ভাল ছিল।”

হাঁসখালির দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ১৭ জন। আহত অন্তত ৭। রবিবার ভোর হওয়ার আগেই হাসপাতালে ভিড় করতে শুরু করেছিলেন মৃত ও আহতদের পরিবারের লোকজন। চার দিকে তখন কান্নার রোল আর চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের তৎপরতা। একের পর এক আহতদের ঢোকানো হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারে।

এরই মধ্যে উঠেছে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। যথেষ্ট সংখ্যায় চিকিৎসক না খাকায় একাধিক আহত মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মৃত অমর বিশ্বাসের শ্যালক ভীম বিশ্বাস, জামাই চিরঞ্জীব মণ্ডলেরা হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই অভিযোগ তোলেন, “একেবারে চিকিৎসা পাননি আহতেরা। কোনও ডাক্তার আসেননি। অমরের মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল। তাঁর দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি।” যদিও তাঁদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে সার্জারি বিভাগের অন কল ডিউটি ছিল অম্লান পাল চৌধুরীর। তিনি রাতে হাসপাতালেই ছিলেন। আহতদের হাসপাতালে আনার সঙ্গে-সঙ্গে তিনি চিকিৎসা শুরু করেন। মিনিট পনেরোর মধ্যে চলে আসেন অস্থি বিভাগের চিকিৎসক শঙ্কর রায়। জরুরি বিভাগে ছিলেন চিকিৎসক শান্তনু গুহ।

প্রশ্ন উঠছে এত বড় দুর্ঘটনা, এত জন আহত। এঁদের চিকিৎসার জন্য মাত্র দু’জন চিকিৎসক কেন? কেন আরও চিকিৎসককে ডেকে আনা হল না? সার্জেন ও অর্থপেডিক সার্জন ছিলেন আপারেশন থিয়েটারের ভিতরে। তা হলে বাইরে ওয়ার্ডের যন্ত্রণায় কাতরানো রোগীদের চিকিৎসা করলেন কারা?”

এক পুলিশকর্মীর কথায়, “আমরা এত দিন দেখে এসেছি যে, এ রকম ঘটনা ঘটলে রাতেই একাধিক চিকিৎসক চলে এসে সকলে মিলে পরিস্থিতি সামাল দিতেন। কিন্তু এ বার তেমন কিছু দেখলাম না। শনি-রবিবার বলেই কি এই অবস্থা?

এত জন মৃতপ্রায় রোগীর দায়িত্ব মাত্র দু’জন চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেওয়া হল?”

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “তখন হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জরুরি বিভাগ মিলিয়ে পাঁচ জন চিকিৎসক ছিলেন। চিকিৎসকের অভাব হওয়ার কথা নয়। চিকিৎসারও ত্রুটি হয়নি। আমরা রাতেই সর্বোচ্চ পরিষেবা দিয়েছি।”

রবিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে হাসপাতাল চত্বরে মৃতদের পরিবারের লোকেরা ভিড় করতে থাকেন। অনেকেই হাসপাতাল চত্বরেই মাটিতে কাঁদতে-কাঁদতে মাটিতে শুয়ে পড়েন। তাঁদের সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। আসেন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ বাডির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE