বছর দশেক আগেও কালীগঞ্জের মুসলিম ভোটারদের একাংশ বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে ছিলেন। তার প্রমাণ ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর জয় (যিনি পরে তৃণমূলে চলে যান)। কিন্তু তার পরে তাদের হিন্দু ভোটের অনেকটা যেমন কেটে নিয়েছে বিজেপি, মুসলিম ভোটের সিংহভাগ জড়ো হয়েছে তৃণমূলের বাক্সে। সংখ্যালঘু-প্রধান এই কেন্দ্রে মুসলিম ভোট তৃণমূলই মূলত ধরে রাখবে নাকি বাম-কংগ্রেস তার একটা অংশ ছিনিয়ে আনতে পারবে, তার উপরে এই কেন্দ্রের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করছে। একই কথা বিজেপির হাতে থাকা হিন্দু ভোটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
কালীগঞ্জে সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। গত এক দশকে এর বড় তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকে থেকেছে। কিন্তু সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, চাকরি বাতিল, সরকারি পরিষেবায় অনিয়ম ইত্যাদি নিয়ে একটা অন্য রকম বাতাবরণ তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি। বিরোধীরাও এগুলিই প্রচারে আনছে, যদিও তা থেকে তারা কতটা ফায়দা পাবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
রবিবাসরীয় প্রচারের ফাঁকে কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখ বলেন, “রাজ্যে শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েরা বসে আছে। চাকরি পাবে কারা? যারা চাকরি কিনতে পারবে! এর পরেও কি মানুষের হুঁশ ফিরবে না?” বিজেপি প্রার্থী আশীষ ঘোষের দাবি, “চাকরি বাতিলের প্রভাব পড়বেই। সংখ্যালঘু ভাইরাও বুঝতে পারছেন যে তাঁদের উপর অন্যায় হচ্ছে।”
তবে বিজেপি কার্যত চাইছে, বাম-কংগ্রেস জোট তৃণমূলের থেকে মুসলিম ভোট কেটে নিক আর তাদের হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত থাক। অর্থাৎ মুখে ‘সংখ্যালঘু ভাই’ আওড়ালে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এই জেলায় বিজেপির আসল হাতিয়ার ধর্মীয় মেরুকরণ। আশীষদের হিসাব, “বাম-কংগ্রেস নিজের ভোট ধরে রাখতে পারলে জয় আমাদের নিশ্চিত।”
তবে সব কিছু সত্ত্বেও এখনও কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে তৃণমূল। বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপদ এবং সেই সঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথীর মতো সামাজিক প্রকল্পগুলি সামনে আনছে তারা। তাদের প্রার্থী আলিফা আহমেদ দাবি করছেন, “আমাদের দল কোনও দিন চায়নি যে কেউ চাকরি হারাক। সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন করেছে।”
এই দ্বিমেরু রাজনীতির মাঝখানে পড়ে খানিক দিশাহারা সিপিএম-কংগ্রেসের রুটিরুজির রাজনীতি। সেই কারণে মূলত মুসলিম ভোট জোটের দিকে না ফিরলে শুধু তত্ত্বকথায় চিঁড়ে ভিজবে না বলেই ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ধারণা। তবে ভোটারদের একাংশ দোলাচলে রয়েছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বড় কুলবেড়িয়ার এক বাসিন্দা বলেন, “যা দুর্নীতি হয়েছে তা মানা যায় না। তবু ভয় হয়, বিজেপি জিতলে কী হবে! ভোটটা কাকে দেব, ধন্দে আছি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)