সাড়ে পাঁচ বছরে বকেয়া দেড় কোটি!
জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের কর্মী আবাসনে প্রায় ২০০ পরিবারের বাস। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থেকে চিকিৎসক সকলেই রয়েছেন ওই আবাসনে। গত সাড়ে পাঁচ ধরে সেই সব পরিবারের বিদ্যুতের বিল মেটাচ্ছে হাসপাতাল। মেটানো টাকার পরিমাণটা প্রায় দেড় কোটি!
সেই বকেয়া আদায় করা তো কোন ছাড়, এখনও বিদ্যুতের বিল মিটিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অনেকেরই ঘরে লাগানো এসি মেশিন। শীতে রুম হিটার। এমনকী রান্নাও চলছে হিটারে।
হাসপাতালের এক কর্তা বলছেন, “এসি বা হিটার তো কোন ছাড়, এমনও দেখা গিয়েছে গরমে ঘরের মধ্যে পোষা কুকুর ও ছাগলকে বেঁধে রেখে চালিয়ে রাখা হয়েছে ফ্যান।’’ এর ফলে একাধিক বার ট্রান্সফর্মার পুড়ে গিয়েছে। ফলে বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে হাসপাতালের রোগীদের। দাবি ওই কর্তার।
শেষ পর্যন্ত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সফর্মারের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয়েছে আবাসন-সহ গোটা মহকুমা হাসপাতালের বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন। প্রতিটি ফ্ল্যাটেই সাব-মিটার রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল ও আবাসনের মূল মিটার একটাই। পুরো বিল আসে হাসপাতালের নামে।
সরকারি নিয়মে, হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিলের টাকা খরচের জন্য নিজস্ব ফান্ড না থাকলেও ট্রেজারি থেকে তা পাশ করে করে দেওয়া হয়। তাই জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল খাতে লক্ষ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। আর তাতেই পার পেয়ে যাচ্ছে আবাসনের বিদ্যুতের বিলও।
রাজ্য পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ শাখা জঙ্গিপুর হাসপাতালের বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে। বিষয়টি যে পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ শাখার কর্মীরা জানেন না তা নয়। ২০১১ সালের জুলাই মাস পর্যন্তও সব আবাসন ঘুরে ঘুরে বিদ্যুতের বিল আদায় করেছেন তাঁরা। কিন্তু তারপর থেকে গত সাড়ে ৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ বিল আদায়ের কাজ বন্ধ। কর্মী সংকটের দোহাই দিয়ে বিদ্যুতের বিল আদায়ের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে দফতর।
মহকুমা হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কর্মী আবাসনের বাসিন্দাদের থেকে বিদ্যুতের দাম আদায়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। তারা সে কাজটা করছে না।”
সুপার জানান, পূর্ত দফতরের কর্তাদের বলা হয়েছে আবাসনগুলির বিদ্যুতের লাইন আলাদা করে দিতে। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। তার ফলেই সাড়ে ৫ বছর ধরে বিদ্যুতের বিল মেটাচ্ছে হাসপাতাল। যেটা মাসে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। সমস্যা নিয়ে আবাসনের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। বকেয়া বিদ্যুতের বিল-সহ প্রতি মাসের বর্তমান বিল মেটাতে হবে বলে তাঁদের জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্মীর অভাবে সেটাও এখনও করা যায়নি।
কিন্তু দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ ব্যবহার করার পর যে সমস্ত কর্মী ইতিমধ্যেই বদলি হয়ে চলে গিয়েছেন তাঁদের বকেয়া বিল আদায় করবে কে?
সুপারের সাফাই, “বদলি হয়ে যেখানে গিয়েছেন বকেয়া টাকা সেখান থেকেই কর্মীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে।”
পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র মানসকুমার দাস জানান, আগে কর্মী ছিল। রিডিং নিয়ে নিয়মিত বিল আদায় করা যেত। একই সমস্যা ছিল জেলার কান্দি মহকুমা হাসপাতালেও। সেখানেও বিরাট প্রচুর টাকা বকেয়া রয়েছে। আবাসনের কর্মীরা নিজেরাই সেখানে উদ্যোগী হয়ে মিটার রিডিং নিয়ে বর্তমান ও বকেয়া বিল মেটাতে শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, “আলাদা ট্রান্সফর্মার বসিয়ে আবাসনের জন্য পৃথক লাইন দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।”
আবাসনের এক বাসিন্দা অবশ্য বলছেন, “আবাসনের কেউ বলেনি বিদ্যুৎ বিল দেব না। বকেয়া সব বিলই কিস্তিতে মিটিয়ে দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু তা ধাপে ধাপে নিতে হবে।’’