মরিয়া: হুকাহারায়। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
তৈলাক্ত বাঁশ। বাঁদর ওঠানামা করছে। অঙ্কটা কষতে গিয়ে জেরবার পড়ুয়ারা। এ ঘটনা কমবেশি সকলেরই জানা। তা বলে, পনেরো ফুটের লম্বা কলাগাছ আঁকড়ে ওঠা নামার কসরতটা!
জলঙ্গির হুকাহারা স্কুল মাঠে ন্যাড়া কলা গাছের উপরে পতপত করে উড়ছে জাতীয় পতাকা। ছুঁতে পারলেই কড়কড়ে পাঁচশো টাকার নোট সঙ্গে একটা এক টাকার কয়েন জুড়ে ৫০১। কিন্তু সরসর করে সেই গাছে ওঠা কি চাট্টিখানি কথা! পতাকা অবশ্য ছুঁতে পারেননি কেউ। তবে ৫০১’র পুরস্কারটা কিন্তু জুটে গিয়েছে আলতাফ শেখের।
পাট খেতের মাঝে ছোট্ট একফালি স্কুলের মাঠ। মাঠের মাঝে বড় একটা কলাগাছ দেখে অনেকেই চমকে উঠেছেন। বলেছেন, ‘বাবার জন্মেও এমন ন্যাড়া কলাগাছ দেখিনি।’ প্রায় পনেরো ফুট গাছের চুড়োয় গুঁজে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পতাকা। মাইক লাগিয়ে লাগাতার চলছে প্রচার। যে ছুঁতে পারবে ওই পতাকা নগদ পুরস্কার তার। তবে প্রতিযোগিতায় নামতে গেলে দশ টাকার একটা এনট্রি ফি রয়েছে। রবিবার, বেলা গড়াতেই সেই মাঠে অভিনব খেলা দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকার মানুষ। এ মাঠে, ফুটবল-ক্রিকেট-কবাডি ছাড়াও খেলা হয়েছে অনেক। সত্তর ছুঁইছুঁই আমজাদ শেখ মসজিদে নমাজ পড়ে রওনা দিয়েছেন মাঠে। বলছেন, ‘‘যেমন কলাগাছ তেমন খেলা। এমন খেলা কম দেখেছি।’’ একে পিচ্ছিল কলাগাছ। তাতে আবার ঘানির তেল মাখানো। ফলে পতাকার দিকে তাক করে যতই চেষ্টা হচ্ছে কোনও কিছুতেই লাভ নেই। ঝাঁপিয়ে কয়েক ফুট উঠলে সুড়ুত করে নেমে যাচ্ছে গোড়ায়। কেউ আবার চোখ বন্ধ করে হাত পা দিয়ে ঝাপটে ধরে থাকছে কিছুক্ষণ। তার পর সড়াৎ করে নেমে আসছে। পতাকা থাকছে অধরাই।
এমন খেলা কেন? আয়োজক রসিদুল হোসেন বলেন, ‘‘ইউটিউবে দেখেছিলাম বাংলাদেশের কোনও প্রান্তে এমন অভিনব খেলার প্রচলন আছে। তখন থেকে আইডিয়াটা মনে ধরেছিল। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বড় কলাগাছ। শেষে তিন দিন ধরে সাত গাঁ ঘুরে চাঁদবিলা থেকে ওই গাছ কলা গাছটা এনেছি নগদ দু’শো টাকা দিয়ে।’’
আর চ্যাম্পিয়ন সেই সদ্য কিশোর আলতাফ বলছে, ‘‘পকেটে টাকা ছিল না। এক বন্ধুর কাছে দশ টাকা ধার করে প্রতিযোগিতায় নামলাম, ও মা পাঁচশো টাকা পেয়েও গেলাম, ভাবতেই পারছি না! এখন সেখান থেকেই বন্ধুর থেকে থেকে নেওয়া দশ টাকা দিয়ে দেব। মিষ্টিও খাইয়ে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy