প্রতিবন্ধকতা পদে পদে। কেউ স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে। কারও বাড়িতে টনটনে অভাব। তবুও হার মানেনি ওরা। ওদের কাছে পড়াশোনাটা ছিল যুদ্ধের মতো। যেখানে হেরে যাওয়া মানেই লক্ষ্য থেকে ছিটকে যাওয়া। কিন্তু তেমনটা হতে দেয়নি ওরা। শত বাধা ডিঙিয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল করেছে রাজীব দণ্ডপাট, বেলডাঙার প্রিন্সি ঘোষ কিংবা ডোমকলের আসামেল মণ্ডল।
নবদ্বীপের আরসিবি সারস্বত মন্দিরের ছাত্র রাজীব এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছে ৪১৩ নম্বর। যদিও রাজীবের আসল বাড়ি নবদ্বীপ থেকে প্রায় আড়াই’শো কিলোমিটার দূরে ঘাটালের খড়ারে। দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া আর লেখাপড়া শেখার জন্য রাজীব নিজের গ্রাম, বাবা, মাকে ছেড়ে যখন নবদ্বীপে এসেছিল তখন সে ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। রাজীবের লেখাপড়ায় তখনই ইতি টেনে দিতে চেয়েছিলেন তার বাবা। ঋণে জর্জরিত ভাগচাষি তারকনাথ দন্ডপাটের সাফ যুক্তি ছিল, দু’বেলা খাবার জোটে না। বাড়ি পর্যন্ত মহাজনের কাছে বন্ধক দিতে হয়েছে। এমন অবস্থায় আবার পড়াশোনা করা তো বিলাসিতা!
ঠিক সেই সময়ে নবদ্বীপের রামকৃষ্ণ সেবা সমিতির এক মহারাজের নজরে পড়ে রাজীব। সেই মহারাজই তাকে নবদ্বীপে নিয়ে আসেন। প্রথমে রামকৃষ্ণ সেবা সমিতি এবং পরে বিবেকানন্দ যুব মহামণ্ডলের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় রাজীবের লড়াই। সে ভর্তি হয় নবদ্বীপ সারস্বত মন্দির স্কুলে। মাধ্যমিকেও সে ভাল রেজাল্ট করে। একাদশ শ্রেণিতে সে ভর্তি হয় কলাবিভাগে। যুব মহামণ্ডলের ছাত্রাবাসে থেকে অধ্যাপক শিহরণ চক্রবর্তী ও স্কুলের শিক্ষকদের অকুন্ঠ সাহায্যে ফের উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর পায় সে।