Advertisement
E-Paper

চেনা ছক ভেঙে সাফল্য

উচ্চ মাধ্যমিকে মুর্শিদাবাদ জেলায় সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের ছাত্র রায়ান দালাল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭১। ফুটবলের ভক্ত রায়ান ৬টি বিষয়ের মধ্যে ৫টিতেই লেটার নম্বর পেয়েছে। তার মধ্যে পদার্থবিদ্যায় ৯৯, জীববিদ্যায় ৯৫, রসায়নে ৯৪, ইংরেজিতে ৯৫, বাংলায় ৮৮ এবং অঙ্কে ৬১ নম্বর পেয়েছে রায়ান। তার কথায়, ‘‘ধরা বাঁধা নিয়মের মধ্যে পড়াশোনা করতে আমার কোনও দিনই ভাল লাগে না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০০:২৩
উপরে বাঁ দিক থেকে চন্দন বিশ্বাস, দিগ্বিজয় বসু,
নীচে বাঁ দিক থেকে রায়ান দালাল ও মৈত্রেয়ী মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

উপরে বাঁ দিক থেকে চন্দন বিশ্বাস, দিগ্বিজয় বসু, নীচে বাঁ দিক থেকে রায়ান দালাল ও মৈত্রেয়ী মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

উচ্চ মাধ্যমিকে মুর্শিদাবাদ জেলায় সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের ছাত্র রায়ান দালাল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭১। ফুটবলের ভক্ত রায়ান ৬টি বিষয়ের মধ্যে ৫টিতেই লেটার নম্বর পেয়েছে। তার মধ্যে পদার্থবিদ্যায় ৯৯, জীববিদ্যায় ৯৫, রসায়নে ৯৪, ইংরেজিতে ৯৫, বাংলায় ৮৮ এবং অঙ্কে ৬১ নম্বর পেয়েছে রায়ান। তার কথায়, ‘‘ধরা বাঁধা নিয়মের মধ্যে পড়াশোনা করতে আমার কোনও দিনই ভাল লাগে না। পড়তে যখনই ইচ্ছে করেছে, তখনই বই খুলে বসেছি।’’ তবে নিয়ম করে প্রতিদিন বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলা রুটিন থেকে বাদ যায়নি। প্রিয় ফুটবলার ক্রিস্টিয়ান রোনাল্ডো, প্রিয় দল রিয়াল মাদ্রিদ। রায়ানের বাবা বহরমপুর গার্লস কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিদ্যুৎবিকাশ দালাল জানান, রায়ান ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠতে পারত না। রাতেই সে পড়ত বেশি। পরীক্ষার দু-মাস আগে থেকে সে রাত জেগে পড়াশোনা করত। ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র রায়ান আইসিএসই বোর্ডের পরীক্ষায় প্রায় ৯৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়। প্রতিটি বিষয়ের জন্য গৃহশিক্ষক ছিল। তার ভাল রেজাল্টের পিছনে ওই গৃহশিক্ষকদের অবদান রয়েছে বলে জানায় রায়ান। তার অবসর সময় কাটে গল্পের বই পড়ে। প্রিয় লেখক তালিকায় রয়েছেন সত্যজিৎ রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, চেতন ভগত, রাসকিন বন্ড। রায়ান কবিতা পড়তেও ভালবাসে। পাহাড়ের সৌন্দর্য তাকে টানে। ভাল লাগে মাটন বিরিয়ানি ও চিকেন চাপ। সব্জি একদম না পসন্দ। তবে মায়ের হাতের চিলি চিকেন রায়ানের ‘মোস্ট ফেভারিট’। বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায় সে। কারণ, মা মণিকাদেবী স্পাইনের রোগী। মায়ের মতো কাউকে যাতে কষ্ট পেতে না হয় সেই জন্য নিউরোলজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রায়ানের।

মুর্শিদাবাদে মেয়েদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে মহারানি কাশীশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মৈত্রেয়ী মণ্ডল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৬৮। সব কটি বিষয়েই লেটার নম্বর রয়েছে তাঁর। বাংলায় ৮৮, ইংরেজিতে ৯০, পদার্থবিদ্যায় ৯৮, রসায়নে ৯৮, জীববিদ্যায় ৯৪ ও অঙ্কে ৯১ পেয়েছে সে। ওই স্কুল থেকেই ২০১৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৪১ নম্বর পেয়ে স্কুলে দ্বিতীয় হয়েছিল মৈত্রেয়ী। তখন থেকেই মনের মধ্যে ভাল ফল করার একটা অদম্য জেদ ছিল। তারই ফল সে এ বার পেল বলেই মনে করছে তার পরিবার। বাবা শশাঙ্কশেখর মণ্ডল বিএসএনএলের এজিএম পদে বহরমপুরে কর্মরত, মা কৃষ্ণা মণ্ডল গৃহবধূ। তার অবসর সময় কেটেছে টিভিতে সিরিয়াল ও কার্টুন দেখে। মৈত্রেয়ীর কথায়, ‘‘যে কোনও গল্পের বই পড়তে ভাল লাগে। তবে প্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায় ও প্রিয় চরিত্র ফেলুদা।’’ খেলা দেখতে অবশ্য কোনও দিনই মৈত্রেয়ীর ভাল লাগে না। প্রিয় খাবার তেলেভাজা। মৈত্রেয়ী ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়।

নদিয়ায় একই নম্বর পেয়ে সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে দু’জন। একজন তেহট্ট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র চন্দন বিশ্বাস। উচ্চ মাধ্যমিকে এ বছর সে পেয়েছে মোট ৪৮০ নম্বর। ওই একই নম্বর পেয়েছে কল্যাণী স্প্রিংডেল হাই স্কুলের ছাত্র দিগ্বিজয় বসুও। তেহট্ট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র চন্দন এই নম্বর পেয়ে সকলকে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সে নিজেও উচ্ছ্বসিত। তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৯৫, ইংরেজিতে ৯৮, রসায়নে ৯৪, অঙ্কে ৯৭ ও পদার্থবিদ্যায় ৯৬। চন্দনের বাবা শ্যামলকুমার বিশ্বাস কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। তেহট্টের সিনেমাহলপাড়ার বাড়িতে মা ও বোনের সঙ্গে থাকে চন্দন। চন্দনের মা তপতীদেবী বলেন, “খুব শান্ত স্বভাবের চন্দন বরাবরই ক্লাসে প্রথম হয়। কিন্তু ও বদমেজাজি। অল্পতেই রেগে যায়। তবে বাড়িতে পড়ার জন্য ওকে কোনওদিন বলতে হত না। ওর এই ফলে আমরা সকলে খুব খুশি।’’

চন্দনের পাঁচ জন গৃহশিক্ষক ছিলেন। প্রতিদিন গড়ে দশ ঘণ্টা করে সে পড়াশোনা করত। যে কোনও ধরনের মিষ্টি ও খিচুড়ি চন্দনের পছন্দ। প্রিয় সিনেমা থ্রি ইডিয়টস, পছন্দের অভিনেতা আমির খান ও আলিয়া ভট্ট। প্রিয় গায়ক অরিজিৎ সিংহ ও শ্রেয়া ঘোষাল। সত্যজিৎ রায় ও শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বুঁদ হয়ে পড়ে। পছন্দের ফুটবলার মেসি হলেও প্রিয় দল ব্রাজিল। তেহট্ট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মানিককুমার ঘোষ বলেন, “এত ভাল ফল আমাদের স্কুলে এর আগে কখনও হয়নি। ওর এই ফলে আমরা গর্বিত।” চন্দন পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ে গবেষণা করতে চায়।

অন্য দিকে, ৪৮০ নম্বর পেয়েও আফশোস কাটছে না দিগ্বিজয়ের। মাত্র এক নম্বরের জন্য উচ্চ মাধ্যমিকেও রাজ্যে দশম স্থান ফস্কে গেল তার। বাংলায় ৯৭, ইংরেজিতে ৯২, অঙ্কে ৭০, জীববিদ্যায় ৯৯, পদার্থবিদ্যায় ৯৭ এবং রসায়নে ৯৫ পেয়েছে সে। দিগ্বিজয় জানায়, দু-বছর আগে, মাধ্যমিকের ফলেও তার এই একই ঘটনা ঘটেছিল। সে বারেও মাত্র এক নম্বরের জন্য সে দশম স্থান অধিকার করতে পারেনি। কল্যাণী বি ব্লকের বাসিন্দা দিগ্বিজয় নার্সারি থেকেই এই স্কুলে পড়ছে। প্রতি বিষয়ে তার গৃহশিক্ষক ছিল। মাঝে মাঝে সে নিজেও গৃহশিক্ষকের ভূমিকা পালন করত। সহপাঠীদের কোথাও কোনও অসুবিধা হলে সেই শিক্ষকের ভূমিকা পালন করত। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত ক্রিকেট, ফুটবল ও ও ব্যাডমিন্টন খেলত। সিন্থেসাইজার বাজানো, ছবি আঁকা, ছবি তোলা, গান লেখা—কোনওকিছুই সে বাদ দিত না। এ দিনও স্কুল থেকে রেজাল্ট নিয়ে ফিরে সে মাঠে গিয়েছিল ফুটবল খেলতে। দিগ্বিজয়ের কথায়, ‘‘অত নিয়ম করে লেখাপড়া করিনি। সারাদিনে খুব বেশি হলে ছ’ঘণ্টা পড়তাম।’’ চিকিৎসক হতে চায় দিগ্বিজয়। মা ধরিত্রীদেবী বলেন, ‘‘আমার ছেলে কোনও দিনই বাঁধা ছকে চলেনি। আমি চেয়েছিলাম, সব কিছুর মধ্যে থেকেই ও বড় হোক।’’

student HS result 2015 HS result news Amir Khan Alia Bhatt cristiano ronaldo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy