Advertisement
E-Paper

অঙ্ক বদলে গিয়েছে বায়োস্কোপে

ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার উপস্থিতিও বেড়েছে অনেক। প্রধান শিক্ষক প্রণয় সরকার  বলছেন, ‘‘২০১৭ সালে স্কুলে এসেছিল প্রোজেক্টর-সহ ডিজিট্যাল শিক্ষাক্রমের সামগ্রী। সেটাই ভোল বদলে দিয়েছে।’’

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪০
 নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

লসাগু-গসাগুর লড়াইটা এখন বদলে গেছে ‘বায়োস্কোপের’ মজায়। বদলে দিয়েছে একটা প্রোজেক্টর মেশিন।

যে ক্লাসের আগে, ঘুম ঘুম, জ্বর জ্বর, সেই ক্লাশে এখন উপচে পড়া ভিড়। ছেলেমেয়েরা বলছে, ‘‘পিরিয়ডটা একটু লম্বা করা যায় না!’’ তৃতীয় শ্রেণির টুনি প্রামাণিক যেমন, অঙ্কের দিদিমনির ভয়ে ক্লাসে আসতেই ভয় পেত। সেই অঙ্কের ক্লাশের দিকে এখন তাকিয়ে থাকে সে। একটু লজ্জা লজ্জা হেসে বলছে, ‘‘ঠিক বায়োস্কোপের মতো।’’

ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার উপস্থিতিও বেড়েছে অনেক। প্রধান শিক্ষক প্রণয় সরকার বলছেন, ‘‘২০১৭ সালে স্কুলে এসেছিল প্রোজেক্টর-সহ ডিজিট্যাল শিক্ষাক্রমের সামগ্রী। সেটাই ভোল বদলে দিয়েছে।’’ সে ব্যাপারে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ছিল না। তাই, কম্পিউটার ও ডিজিট্যাল প্রাথমিকের পাঠক্রমে চালু করা যায়নি। স্কুলের চার শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার পর ১ জুলাই থেকে ডিজিট্যাল পাঠক্রম চালু হয়েছে। তার পর থেকেই খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলে আসার যেমন আগ্রহ বেড়েছে, তেমনই সহপাঠীদের নিয়ে দল বেঁধে স্কুলে আসার প্রবণতা বেড়েছে।”

গ্রামের ওই প্রাথমিকের স্কুলে ডিজিট্যাল পঠনপাঠন শুরু হতেই মাস খানেকের মধ্যে স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার বেড়েছে ২২ শতাংশ। ডিজিট্যাল ক্লাস, যা ছাত্রদের ভাষায় ‘সিনেমার মধ্যে পড়া’। পড়ুয়াদের স্কুলে আসার আগ্রহ বাড়াতে পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের দেখানো হয়েছে ছোটদের সিনেমা। ছাত্রছাত্রীরা দেখে ফেলেছে ‘চাঁদের পাহাড়’। ছাত্রদের উৎসাহ বেড়েছে তাই নয়, অভিভাবকদের মধ্যে কৌতূহল বেড়েছে ‘সিনেমার পড়া’র ক্লাশে ছেলেমেয়েদের ঠেলেঠুলে পাঠানো।

৭৪ বছরের পুরনো ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৬৮ ছাত্রছাত্রীর জন্য রয়েছেন ৯ শিক্ষকশিক্ষিকা। প্রোজেক্টরের মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসে পড়ান হচ্ছিল ‘আমাদের পরিবেশ’। শিক্ষক খগেন্দ্রনাথ দাসের হাতে ধরা কম্পিউটারের মাউস। পর্দায় ভেসে উঠছে মানব শরীরের নানা অঙ্গের ছবি। পর্দায় ওই ছবি ভেসে উঠতেই উঠে দাঁড়ায় দিলরুবা খাতুন। মিলিয়ে দিল হাতের সঙ্গে বাহুকে—‘হাত দিয়ে ধরি, খাই ও মারি।’ প্রতি দিন প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির মধ্যে একটি করে শ্রেণির ক্লাশ নেওয়া হচ্ছে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে। শিক্ষিকা শতাব্দী রায় বলছেন, “প্রোজেক্টরে ক্লাস চালু শুরুর পর দিন থেকেই হাজিরা বেড়েছে, অনিয়মিত ছিল যারা তারাও ভিড় করছে।’’ স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ৮২ বছরের পশুপতি মন্ডল বলছেন, “আমাদের সময় বিদ্যুৎ ছিল না স্কুলে। চেয়ার-বেঞ্চ ছিল না বললেই চলে। প্রোজেক্টরের সাহায্যে শিক্ষাদান—কখনও ভাবিনি। এখন যুগ বদলেছে, তাল মিলিয়ে শিক্ষার ধরনও বদলেছে। নিজের স্কুলের এই উন্নয়নে ভাল লাগছে।” ফরাক্কার সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, “জেলায় প্রোজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষাদান সর্বত্র চালু করা যায়নি। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ ভাবে পড়ানোয় পড়ুয়াদের আগ্রহ বেড়েছে।’’

School Smart Class
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy