Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Ghost Rumor

Ghost rumor: ভূতের ভয় কাটাতে জলপড়ায় আস্থা স্কুল

ধুলিয়ান শহরের বুকে ওই বালিকা বিদ্যালয়ের নাম বাণীচাঁদ আগরওয়ালা বালিকা বিদ্যালয়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ওই স্কুলে ২৭০০ ছাত্রী রয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

বিমান হাজরা
ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২ ০৫:৫৪
Share: Save:

একবিংশ শতাব্দীতেও ছাত্রীদের ভূতের ভয় কাটাতে স্কুলে ডাকা হল পুরোহিত ও মৌলবীকে। শিক্ষিকাদের সামনেই স্কুলের হোস্টেলে ‘জিনে হানা’ দিয়েছে নিদান দিয়ে বোতলের মধ্যে জল ভরে তাতে জলপড়া দিলেন তারা। স্কুলের এই কাণ্ডে হতবাক জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলছেন, “স্কুলের উচিত ছিল অন্ধ কুসংস্কারকে প্রশ্রয় না দিয়ে ছাত্রীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলে বিষয়টি নিয়ে বোঝানো। তা না করে এ ভাবে ধর্মগুরুদের ডেকে আনা ঠিক হয়নি।” স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষকেরাও এই ঘটনায় হতবাক।

ধুলিয়ান শহরের বুকে ওই বালিকা বিদ্যালয়ের নাম বাণীচাঁদ আগরওয়ালা বালিকা বিদ্যালয়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ওই স্কুলে ২৭০০ ছাত্রী রয়েছে। বিড়ি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা বলে গরিব ঘরের ছাত্রীদের থাকার জন্য স্কুলের পাশেই একটি ছাত্রী হস্টেল গড়ে তোলে সর্ব্ব শিক্ষা মিশন। লক ডাউনের পর সেই হস্টেলটি চালু হয়েছে মাস দেড়েক হল। আপাতত সেখানে রয়েছে ৭৫ জন। রাঁধুনি রয়েছে। রয়েছে সর্বক্ষণের জন্য দুজন প্রহরীও। এক একটি ঘরে ছাত্রী রয়েছে ২০ থেকে ৩০ জন করে। সকলেই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া।

ছাত্রীদের দাবি, দিন ছয়েক থেকে গভীর রাতে নূপুরের আওয়াজ ভেসে আসছে তাদের কানে। মনে হচ্ছে কেউ যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর সেই থেকেই ভয় পেয়ে আতঙ্কে রয়েছে তারা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কাকলি ঘোষ বলেন, “চারিদিকে লোকালয়। উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হস্টেলটি। এত দিন কিছুই হয়নি। হঠাৎই দিন ছয়েক থেকে ভূতের আতঙ্কের কথা বলছে ছাত্রীরা। প্রতিদিন তাদের হস্টেলে গিয়ে বোঝানো হয়েছে। ভুতের যে অস্তিত্ব নেই তারা নিজেরাও সেটা মানছে, বুঝছে। পরক্ষণেই রাত হলেই ওদের যেন মনে হচ্ছে নূপুরের শব্দ কানে আসছে। কেউ যেন পাশেই ডোবার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”তিনি বলছেন, “হতে পারে রাতে ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনছে তারা। সকলের মধ্যেই কিছু কিছু সংস্কার রয়ে গিয়েছে। সেটাই মানসিক ভাবে চেপে বসেছে তাদের উপর। সেই ভেবে তাদের মানসিক ভয় কাটাতেই এলাকার পরিবেশ বুঝে স্থানীয় দুই মৌলবী ও পুরোহিতকে ডেকে আনা হয়। তারা মন্ত্র পড়ে কী করেছেন, সেটা আমার কাছে বড় নয়। তাদের দিয়ে মেয়েদের মানসিক ভয়টা কাটানোই মূল। মেয়েদের মধ্যে এই আস্থাটা ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য ছিল।”

পাশেই জয়কৃষ্ণপুর হাইস্কুলেও বছর কয়েক আগে একই সমস্যা দেখা দেয় ছাত্রীদের হস্টেলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন আলি বলেন, “ছাত্রীদের অনেক করে বুঝিয়ে ছিলাম। কিন্তু ভূতের ভয় যায়নি। তখন গ্রামের অনেকেই আমাকে ঝাড়ফুঁকের পরামর্শ দিলেও আমি তা মানিনি। আমি নিজেই ওই হস্টেলে রাতে এক মাস কাটিয়েছি ছাত্রীদের সঙ্গে। রাতের বেলায় মেয়েদের সাক্ষী রেখে আমিও ঘুরে বেড়াতাম পাড়ে। আমি বলতাম কোথায় ভূত? আমাকে তো ধরছে না? এই ভাবে ছাত্রীদের মন থেকে ভয় কাটিয়েছিলাম। এখন সব ঠিক রয়েছে।” বিজ্ঞান মঞ্চ জানিয়েছে, তারা ওই স্কুলে যাবে। ভূতের ভয় ও কুসংস্কার কাটাতে যা যা করা দরকার তা করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ghost Rumor school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE