Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ধুলোয় ধুঁকছে জলঙ্গি

নদীর বুক চিরে বাঁক নিয়েছে পাকা ইটের রাস্তা কয়েক বছর ধরেই শুখা মরসুমে এ ভাবে নদীকে বন্ধ করার কাজ চলেছে নাগাড়ে। বছরের পর বছর মাটির বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে রাস্তায়। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে জলঙ্গি নদী কেবল অস্তিত্ব হারাবে না, মানচিত্র থেকে মুছে যাবে বলে জানাচ্ছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।

নদীর উপর গড়ে উঠছে রাস্তা।  ভাবেই চলছে জলঙ্গী চুরি। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

নদীর উপর গড়ে উঠছে রাস্তা। ভাবেই চলছে জলঙ্গী চুরি। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩২
Share: Save:

নামে নদী, তবে তার বুকের উপরে আড়াআড়ি রাস্তা, হেলেদুলে ট্রাক চলাচল সে পথে। কোথাও পাকা সিমেন্টের স্ল্যাব, কোথাও বাঁশের সাঁকো। প্রশ্ন করলে, আশপাশের গ্রামের মানুষ খানিক ভ্রু নাচিয়ে বলছেন, ‘‘নদী, ছিল নাকি!’’ তবে হ্যাঁ, খাতায় কলমে এখনও তার নাম জলঙ্গি। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ ভাবেই চলেছে জলঙ্গি-চুরি।

নদিয়া-মুর্শিদাবাদ সীমান্তে বিভিন্ন ঘাটে জলঙ্গির উপরে এখন এমনই পাকা রাস্তা। ঘাট মালিকেরা এখন নদীতে নৌকা চালানোর বদলে বর্ষা শেষ হতেই ছড়িয়ে দেন মাটি। তার উপরে কয়েক গাড়ি ইট বিছিয়ে দিয়েই পাকা রাস্তা তৈরি করে ফেলা হয়। কেন এমন অত্যাচার? ঘাট মালিকদের দাবি, শুখা মরসুমে নৌকা চলাচল করার মতো পরিস্থিতি থাকে না নদীতে, নৌকার তলা ঠেকে যায় মাটিতে। বাধ্য হয়েই কিছু ইট-মাটি ছড়িয়ে দিয়ে রাস্তা তৈরি করে ফেলেন তাঁরা।

প্রশাসনের কোনও নজর নেই, নজর নেই রাজনৈতিক দলের নেতাদের। শাসক থেকে বিরোধী— কেউই এগিয়ে আসে না নদী বাঁচাতে। বরং বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্যোগে নদীর বুকে তৈরি হয়েছে রাস্তা। এমনকি এলাকার পঞ্চায়েতগুলো অনেক সময় সাহায্য করে নদীর বুকে এমন পাকাপোক্ত রাস্তা তৈরিতে।

ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের রেখা বিবি বলছেন, ‘‘আমাদের নজরে এসেছে, ঘাট মালিকেরা নিয়ম মেনে কাজ করছেন না। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের গাফিলতি আছে, গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি।’’ আর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বিডিও পার্থ মণ্ডল বলছেন, ‘‘কই এমন তো শুনিনি। খোঁজ নেব তো।’’ এই জানা এবং না-জানা, দেখছি এবং দেখব’র তালে পা মিলিয়ে চলেছে জলঙ্গি নিধন।

কয়েক বছর ধরেই শুখা মরসুমে এ ভাবে নদীকে বন্ধ করার কাজ চলেছে নাগাড়ে। বছরের পর বছর মাটির বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে রাস্তায়। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে জলঙ্গি নদী কেবল অস্তিত্ব হারাবে না, মানচিত্র থেকে মুছে যাবে বলে জানাচ্ছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।

এক সময় যে নদীতে স্টিমার চলত সেখানে এখন নৌকা চলাই দায়। সাধারণ মানুষ থেকে মৎস্যজীবী এবং মাঝিদের দাবি, পুরোপুরি সরকারি উদাসীনতার কারণেই নদীর এমন হাল হয়েছে। তাঁরা মনে করেন, একটা সময় এই নদীর উৎসমুখে বাঁধ দিয়ে সরকারি প্রকল্পে তৈরি হয়েছে পাকা রাস্তা, ফলে জলঙ্গি নদীকে বন্ধ্যা করে তোলার পিছনে শুরু থেকেই পরোক্ষ প্রশ্রয় পেয়েছে প্রশাসনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jalangi Jalangi River Scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE