Advertisement
০২ মে ২০২৪

স্বেচ্ছার বন্ধে সুনসান শহর

স্কুলে ঢুকে লুঠ এবং বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীর উপরে অত্যাচারের ঘটনার পরে পেরিয়েছে ছ’দিন। ঘটনার প্রতিবাদে এসইউসি-র ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল রানাঘাট। পুর-এলাকার ১৯টি ওয়ার্ডে দোকানপাট খোলেনি বললেই চলে। অধিকাংশ স্কুল, কলেজ ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা বন্ধ ছিল। সরকারি অফিস-কাছারিতে ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় কম। বন্ধ মানে একটা কর্মনাশা দিন, এ কথা মেনে নিলেও বন্ধের এমন সর্বাত্মক চেহারা শেষ কবে দেখেছেন, মনে করতে পারেননি অনেক রানাঘাটবাসী।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রানাঘাটে যান ‘আমরা আক্রান্ত’-র অম্বিকেশ মহাপাত্র, মৌসুমী কয়াল, জগদীশ বিশ্বাস, প্রমীলা বিশ্বাস-সহ ১৬ জন সদস্য। তাঁরা রানাঘাট হাসপাতাল সুপারের কাছে মাদার সুপিরিয়রের খোঁজ নেন। এর পর স্কুল ঘুরে দেখা করেন প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যদের সঙ্গেও। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন মৌসুমীদেবী।—নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রানাঘাটে যান ‘আমরা আক্রান্ত’-র অম্বিকেশ মহাপাত্র, মৌসুমী কয়াল, জগদীশ বিশ্বাস, প্রমীলা বিশ্বাস-সহ ১৬ জন সদস্য। তাঁরা রানাঘাট হাসপাতাল সুপারের কাছে মাদার সুপিরিয়রের খোঁজ নেন। এর পর স্কুল ঘুরে দেখা করেন প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যদের সঙ্গেও। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন মৌসুমীদেবী।—নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৪
Share: Save:

স্কুলে ঢুকে লুঠ এবং বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীর উপরে অত্যাচারের ঘটনার পরে পেরিয়েছে ছ’দিন। ঘটনার প্রতিবাদে এসইউসি-র ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল রানাঘাট। পুর-এলাকার ১৯টি ওয়ার্ডে দোকানপাট খোলেনি বললেই চলে। অধিকাংশ স্কুল, কলেজ ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা বন্ধ ছিল। সরকারি অফিস-কাছারিতে ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় কম। বন্ধ মানে একটা কর্মনাশা দিন, এ কথা মেনে নিলেও বন্ধের এমন সর্বাত্মক চেহারা শেষ কবে দেখেছেন, মনে করতে পারেননি অনেক রানাঘাটবাসী।

রানাঘাটে সংগঠন তেমন জোরদার নয় এসইউসি-র। দলের জেলা সম্পাদক মৃণাল দত্তের দাবি, “রানাঘাট-কাণ্ড নিয়ে এলাকাবাসীর প্রতিবাদ এ দিন বন্ধের মাধ্যমে ভাষা পেয়েছে। তাই বন্ধ সফল এবং সর্বাত্মক।”

“হয়নি তো। তেমন সাড়া মেলেনি ওদের ডাকা বন্ধে”, প্রতিবাদ করছেন রানাঘাটের পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের বিধায়ক (রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম) পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু নদিয়া জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “এ দিন গোটা শহর ছিল বন্ধের পক্ষে। যেটা বাধা দেওয়ার ক্ষমতা শাসক দলেরও ছিল না।” প্রায় একই সুর সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র গলায়।

দিনভর রানাঘাট ঘুরে যা দেখা গেল, তা-ও শাসক দলের বিধায়কের দাবির সঙ্গে মিলছে না। শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, ব্যস্ত ও জনবহুল এলাকা চাবি গেট, জিআরপি মোড়, রথতলা গেট, ছোটবাজার, থানার মোড় এলাকা ছিল সুনসান। গাড়িঘোড়াও ছিল না। দু’-একটি ছাড়া পুর-এলাকার ১৯টি ওয়ার্ডেই বন্ধ ছিল দোকানপাট। সন্ধ্যার পরেও সেগুলি সে ভাবে খোলেনি।

মহকুমাশাসকের অফিস-সহ অন্য সরকারি কার্যালয় খোলা থাকলেও সেখানে সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় কম। প্রশাসন সূত্রের দাবি, বুধবারই এসইউসি-র বন্ধের ডাক দেওয়ার কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ায় সরকারি কমীদের হাজিরাও তুলনায় কম ছিল। তবে সে দাবি মানেননি মহকুমাশাসক (রানাঘাট) রাজর্ষি মিত্র।

নদিয়ারই ধানতলার বরণবেড়িয়া গ্রাম থেকে এ দিন রানাঘাটে মালপত্র কিনতে এসেছিলেন প্রসাধনী জিনিসের ব্যবসায়ী কানাই বিশ্বাস। সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রানাঘাটে নেমে বন্ধের কথা শুনে দস্তুরমতো হতাশ হয়ে পড়েছিলেন লুকোচ্ছেন না তিনি। তবে জুড়ছেন, “যখন শুনলাম, রানাঘাট-কাণ্ডের প্রতিবাদে বন্ধ, তখন হতাশাটা অনেকটাই কেটে গেল। এটা তো এই এলাকার কাছে স্পর্শকাতর ও আবেগের বিষয়। প্রতিবাদ তো হওয়ারই কথা।” স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, “রানাঘাটে বাজার বন্ধ থাকে সোমবার। সপ্তাহের মধ্যে ফের দোকান বন্ধ রাখলে আর্থিক লোকসান হবে। কিন্তু গত শুক্রবার (রানাঘাট-কাণ্ডের দিন) বাইরের জগতের কাছে রানাঘাটের সম্মানের যে ক্ষতি হয়েছে, তার তুলনায় এই ক্ষতিটুকু কিছুই নয়। তাই স্বেচ্ছায় দোকান বন্ধ রেখেছিলাম।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে রানাঘাট পুরসভার সামনে পুরকর্মীদের একাংশের সঙ্গে বন্ধ পালন করা নিয়ে এসইউসি কর্মীদের সামান্য বচসা ছাড়া, অন্য অশান্তির খবর নেই তাদের কাছে। সকাল থেকেই রানাঘাটের ওই স্কুলের সামনে বসে ছবি এঁকে, গান গেয়ে প্রতিবাদ-কর্মসূচি চালিয়েছেন ‘রানাঘাট প্রতিবাদী মঞ্চ’-এর সদস্যেরা। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ রানাঘাটে পৌঁছন ‘আমরা আক্রান্ত’-র অম্বিকেশ মহাপাত্র, মৌসুমী কয়াল, জগদীশ বিশ্বাস-সহ ১৬ জন সদস্য। তাঁরা রানাঘাট হাসপাতালে নিগৃহীতা সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে দেখা করে, স্কুল ঘুরে যান প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যদের কাছেও। এ দিন সন্ধ্যায় বন্ধ ওঠার পরে স্থানীয় বেশ কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়ারা শহরে মিছিল করে। মিছিল করে এসএফআই। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষের নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও এ দিন রানাঘাটে গিয়েছিল।

এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী প্রবীর বিশ্বাস, গৃহবধূ মনিকা গোমসদের বক্তব্য, “বন্ধ মানেই অহেতুক কাজের দিন নষ্ট করে লোকজনকে অসুবিধায় ফেলা। কিন্তু এই প্রথম দেখলাম, কারো গা-জোয়ারিতে মাথা নুইয়ে নয়, স্বেচ্ছায় বন্ধ পালন করল গোটা শহর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE