Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘দিদি’ ফিরবেন না, অবাক গাংনাপুর

কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলে আনতে হবে কিন্তু, মাসিমণিকে বারবার করে বলে দিয়েছিল সে। তার আদরের ‘পুটিমা’ কোনও আবদারই ফেলে না। কিন্তু এ বার কী হল! বড়রা সবাই বলছে তার সব চেয়ে ছোট্ট মাসিটা নাকি আর বাড়িই ফিরবে না। বছর এগারোর খুদের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

সুপর্ণা বিশ্বাস।—ফাইল চিত্র।

সুপর্ণা বিশ্বাস।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০২:৩৭
Share: Save:

কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলে আনতে হবে কিন্তু, মাসিমণিকে বারবার করে বলে দিয়েছিল সে। তার আদরের ‘পুটিমা’ কোনও আবদারই ফেলে না। কিন্তু এ বার কী হল! বড়রা সবাই বলছে তার সব চেয়ে ছোট্ট মাসিটা নাকি আর বাড়িই ফিরবে না। বছর এগারোর খুদের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

দিন চারেক আগে স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে সিকিম বেড়াতে গিয়েছিলেন গাংনাপুর থানার দেবগ্রামের মেঠোপাড়ার শিক্ষিকা বছর তিরিশের সুপর্ণা বিশ্বাস। মঙ্গলবার রাতে গ্যাংটকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে গিয়ে ধাক্কা মারে সুপর্ণাদের গাড়িটি। জখম হন চালক-সহ চার জন। সুপর্ণাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। বুধবারই সে খবর পৌঁছে যায় পরিবারের কাছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপর্ণাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা আত্মীয়পরিজন অনেকেই চলে এসেছেন সেখানে। পাশেই এক তরুণীর কাকার বাড়িতে গিয়ে বসেছিল বছর এগারোর স্বরাজ রায়। মনমরা খুদে নাগাড়ে বলে চলেছে, ‘পুটিমা’ তার জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলে আনবে বলছে। তবু সবাই বলছে মাসিমণি নাকি আর ফিরবে না। সব চেয়ে ছোট মাসি। আদর করে স্বরাজ তাই মাসিকে পুটিমা বলে ডাকত। সেই ছোট্ট মাসিটা নাকি নেই! মঙ্গলবার দুপুরেও তো মাসির সঙ্গে কথা হয়েছিল তার। আর বুধবারই বড়রা কী সব বলছে, ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া স্বরাজের বিশ্বাস
হচ্ছে না।

স্কুলে গরমের ছুটি পড়েছে। কচিকাচাদের নিয়ে তাই সুপর্ণা ও তাঁর দিদি স্মৃতিকণা বিশ্বাস গ্যাংটক গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পরে ফেরার কথা। গ্যাংটকের নামচির কাছে এসে দুর্ঘটনা ঘটে। সুপর্ণাদের গাড়িটা সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে পাহাড়ের ঢালে। দরজা খুলে গিয়ে ছিটকে পড়ে যান সুপর্ণা। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

রানাঘাট-২ নম্বর ব্লকের দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের মেঠোপাড়ায় বাড়ি সুপর্নাদের। তাঁরা তিন বোন এবং এক ভাই। বোনেদের মধ্যে তিনিই সব চেয়ে ছোট। ইতিহাস নিয়ে কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করার পর বছর ছয়েক হল পাড়ার ওই স্কুলে পড়াতেন। ওই স্কুলেই চাকরি করছেন তাঁর দিদি স্মৃতিকণাও।

একসময় অনেক কষ্ট করে তাদের দিন কেটেছে। বাবা সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস অন্যের জমিতে কাজ করে খুব কষ্টে ছ’জনের সংসার চালিয়েছেন। দুই মেয়ে স্কুলে চাকরি পাওয়ার পর থেকে সংসারে একটু স্বাচ্ছন্দ্য এসেছিল। রাস্তার ধারে বেড়া দেওয়া ঘরটা সবে পাকা হতে শুরু করেছিল। এর মধ্যেই স্রেফ একটা ঘটনায় সব ওলট-পালোট করে দিল, বলছিলেন পাড়া-প্রতিবেশীরাই।

সুপর্ণার ভাই সৌরভ রানাঘাট কলেজের বিএসসি-র ছাত্র। বললেন, “মা অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুর রোগে ভুগছেন। বাড়ির সব দিক সামলাতো দিদি। ভাবতেই পারছি না দিদি আর ফিরবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gangtok Accident teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE