Advertisement
E-Paper

খুচরোর খোঁচায় খাবি খাচ্ছেন দুই জেলার মানুষ

ঘরের মেঝেতে রাশি রাশি এক, দুই, পাঁচ ও দশ টাকার কয়েন। স্তূপাকার সেই খুচরো গুনতে নাস্তানাবুদ দুই সেবায়েত। গোনা শেষ হতে দেখা গেল, টাকার অঙ্ক প্রায় চল্লিশ হাজার ছুঁই ছুঁই। যা দেখে মাথায় হাত প্রাচীনমায়াপুরের মন্দির কর্তৃপক্ষের।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ১৪:০০
হিমসিম: খুচরো নিয়ে বিপাকে মন্দির কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব চিত্র

হিমসিম: খুচরো নিয়ে বিপাকে মন্দির কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব চিত্র

এই খুচরো লইয়া কী করিব?

মঠ-মন্দির-বাজারহাট-ফেরিঘাটে কান পাতলেই কানে আসছে হাহাকারটা। কিন্তু এই খুচরো ঝামেলা থেকে মুক্তির পথই বা কী? কারও কাছেই তা স্পষ্ট নয়।

পুলিশ: ‘খুচরো কেস নিয়েই মাথাখারাপ। এখন খুচরো নিয়েও যদি পুলিশগিরি করতে হয় তাহলে তো মুশকিল!’

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ: ‘এ তো তৈরি করা সমস্যা। খুচরো নিতে সকলেই বাধ্য।’

ব্যবসায়ী: ‘বাধ্য বললেই হল! ব্যাঙ্কই নিতে চাইছে না।’

পাবলিক: ‘এ তো আচ্ছা দিন এল মশাই! খুচরো নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা চলছে!’

নিট ফল খুচরোর খোঁচায় খাবি খাচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা।

ঘরের মেঝেতে রাশি রাশি এক, দুই, পাঁচ ও দশ টাকার কয়েন। স্তূপাকার সেই খুচরো গুনতে নাস্তানাবুদ দুই সেবায়েত। গোনা শেষ হতে দেখা গেল, টাকার অঙ্ক প্রায় চল্লিশ হাজার ছুঁই ছুঁই। যা দেখে মাথায় হাত প্রাচীনমায়াপুরের মন্দির কর্তৃপক্ষের।

দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ যাঁর টানে নবদ্বীপে ছুটে আসেন সেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান আশ্রমের প্রণামী বাক্সে চল্লিশ হাজার বিরাট কোনও টাকা নয়। উৎসবের মরসুমে খুচরোর পরিমাণ পঁয়ষট্টি থেকে সত্তর হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আগে ওই খুচরো নেওয়ার জন্য মন্দিরে ভিড় করতেন শহরের ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু বেশ কয়েক মাস হল ছবিটা বদলে গিয়েছে। এখন সবার পকেটেই উপচে পড়ছে খুচরো। আর সেই কারণেই এখন প্রণামী বাক্সই হয়ে উঠেছে ভয়ের কারণ। অধ্যক্ষ অদ্বৈতদাস মহারাজ জানাচ্ছেন, ভোগ, পূজারী, মন্দিরের কর্মীদের বেতন-সহ মন্দিরের দৈনিক খরচ চলে ওই প্রণামীর টাকা থেকেই। কিন্তু এখন কেউই খুচরো নিতে চাইছেন না। সবথেকে অসুবিধা হচ্ছে বাজার করতে। বিক্রেতারা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা কোনও ভাবেই খুচরো নেবেন না। মন্দিরের লোকজন দেখলে তাঁরা জিনিস পর্যন্ত বিক্রি করতে চাইছেন না।

বিষ্ণুপ্রিয়া সেবিত মহাপ্রভু মন্দির পরিচালন সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলছেন, ‘‘প্রণামী ও দানের অর্থ দিয়েই নিত্যভোগের ব্যয় নির্বাহ করা চিরাচরিত প্রথা। এ দিকে মুদি তো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ধারে জিনিস নিন। পরে সময় মতো শোধ করবেন। কিন্তু খুচরো নিতে পারব না।’ কী বিপদ বলুন তো!” মন্দির কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, সামনে ঝুলন, জন্মাষ্টমীর মতো উৎসব। তার পরে দুর্গাপুজো, কোজাগরী এবং রাস। খুচরোয় ভরে উঠবে প্রণামী বাক্স। তখন কে বইবে এই খুচরোর বোঝা!

সমস্যাটা একই রকম পড়শি জেলা, মুর্শিদাবাদেও। বাজার থেকে রেলের টিকিট কাউন্টার, সাইকেল গ্যারাজ থেকে চায়ের দোকান, সর্বত্রই একটাই কথা— ‘খুচরো নিতে পারব না।’ বেলডাঙায় মোটরবাইকে হাওয়া দিয়ে জয়ন্ত মণ্ডল খুচরো দিয়েছিলেন। তাঁকে শুনতে হয়েছে, ‘নোট দিন, আমরা খুচরো দিচ্ছি।’ জয়ন্তবাবু বলছেন, ‘‘অথচ মাস কয়েক আগে খুচরো না দিলেই বাবুদের মুখ ভার হয়ে যেত।’’

কালীতলার রথের মেলায় কিছু উপার্জনের আশায় গোপাল ঠাকুর সেজে বসে ছিল শৌভিক মণ্ডল। বেলাশেষে থালায় যা টাকা পড়েছিল তা গুনতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই কিশোর। বহরমপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুকেরাও এক টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কোনও কারণ ছাড়াই কে বা কারা কবে থেকে ঠিক করে দিলেন ছোট এক টাকা বা অন্য কয়েন চলবে না?

মুর্শিদাবাদ জেলার ম্যানেজার অমিত সিংহ বলেন, “বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। মূলত এক টাকার কয়েন নিয়েই সমস্যা বেশি। কোনও কয়েনই অচল নয়।” ব্যাঙ্কে খুচরো না নেওয়া প্রসঙ্গে অমিতবাবু জানান, কয়েন গুনতে সময় লাগে বলে ব্যাঙ্কের অনান্য কাজ ব্যহত হয়। তবে ব্যাঙ্ক যে একেবারেই কয়েন নিচ্ছে না এ কথা ঠিক নয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে সময় নির্দিষ্ট করে খুচরো জমা দিচ্ছেন।

নদিয়া জেলার লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সুগত লাহিড়ী বলছেন, ‘‘এ সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। ২০১২ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকায় বলা আছে যে, কেউ এক টাকা থেকে শুরু করে দশ টাকা মূল্যের কয়েনে এক বারে হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে পারেন। যাঁকে দেওয়া হবে তিনি নিতে বাধ্য। আট আনার কয়েনে জমার অঙ্কটা দশ টাকা। যদি কেউ তা নিতে অস্বীকার করে তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”

আমজনতার প্রশ্ন, যায় তো বটে, কিন্তু নিচ্ছেটা কে?

Retailer Bank Coin খুচরো নবদ্বীপ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy