E-Paper

দেশরাজের মুখ চিনবেন কুসুম, নিশ্চিত দুলাল

অনেকগুলো মুখের মধ্যে থেকে চিনে নিতে হবে সেই মুখটিকে। যে মুখ কুসুম মল্লিক দেখেছিলেন ২৫ অগাস্টের সেই অভিশপ্ত দুপুরে। যে মুখ বলেছিল, ‘আন্টি, আপনার সঙ্গে কথা আছে।’

সুস্মিক হালদার

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:২৪

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আর কয়েকটা ঘণ্টা।

তার পরেই মুখোমুখি হতে হবে সেই মুখটার।

অনেকগুলো মুখের মধ্যে থেকে চিনে নিতে হবে সেই মুখটিকে। যে মুখ কুসুম মল্লিক দেখেছিলেন ২৫ অগাস্টের সেই অভিশপ্ত দুপুরে। যে মুখ বলেছিল, ‘আন্টি, আপনার সঙ্গে কথা আছে।’ পাশ থেকে তাঁর ক্লাস এইটে পড়া ছেলে চেঁচিয়ে বলেছিল— ‘এ তো দেশরাজ!’

আর তখনই চোখের পলক না ফেলে ঝটিতি পিস্তল তাক করেছিল বছর উনিশ-কুড়ির সেই মুখ।

চমকে উঠেছিলেন কুসুম। তখনও তিনি জানেন না, পাশের ঘরেই মেঝে রক্তে ভাসিয়ে লুটিয়ে আছে তাঁর উনিশ বছরের মেয়ের লাশ। মাথায় ভরা তিনটে সিসের বুলেট।

স্কুল থেকে ছেলেকে আনতে যাওয়ার আগে টেবিলের উপর তরকা-রুটি ঢেকে রেখে গিয়েছিলেন কুসুম। ঈশিতা স্নান করে বেরিয়ে খাবে। মেয়ে ভাত খেতে খুব একটা ভালোবাসত না। সেই খাবার আর খাওয়া হয়নি তার। টি-শার্ট আর টাওয়েল পরে স্নানাগার থেকে বেরিয়ে আসতেই আততায়ী তার উপরে চড়াও হয়।

তার পর... সব ঝাপসা। বাড়ি ভর্তি লোক। পড়শি, পুলিশ, সংবাদমাধ্যম। ক্যামেরা ঝলসানি। সকলের চোখের অলখে টেবিলের না-খাওয়া সেই খাবার পড়েছিল একই ভাবে।

সেভেন এমএম পিস্তলের ঘোড়া (ট্রিগার) টেনেছিল ছেলেটা— ক্লিক! মুহূর্তের প্রতিবর্তে মাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল ছেলে। গুলি করছে ছেলেটা! কিন্তু গুলি ছোটেনি! এক হ্যাঁচকায় ছেলেকে টেনে নিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে ধড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন কুসুম।

চোখের পলকে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় দেখে ফেলা সেই মুখ কুসুম চিনতে পারবেন তো? আজ, বুধবার, কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধানাগারে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন (টিআই) প্যারেডে আঙুল তুলে শনাক্ত করতে পারবেন তো— এই সেই ছেলে, এই সে!

গত কয়েক দিন ধরে ঠিক মতো খাওয়া নেই, ঘুম নেই, কথা নেই কুসুমের। শরীর-মন অবসন্ন। তবু তাঁর স্বামী, নিহত ঈশিতা মল্লিকের বাবা দুলাল মল্লিক নিশ্চিত, কুসুম পারবেনই। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “না, এতটুকু ভুল হওয়ার সম্ভবনা নেই। কুসুম ঠিক ওকে চিনতে পারবে। ওই মুখ ও ভুলবে না।” তিনি আরও নিশ্চিত ছেলের কারণে। দুলাল বলেন, “কাঁচরাপড়ায় থাকতে আমার ছেলে তো মাঠে দেশরাজের সঙ্গে খেলত। ও তো সে দিন এক বার দেখেই চিনতে পেরেছিল। ও তো চিনতে পারবেই!”

গোলমালের শুরুটা উত্তর ২৪ পরগনার সেই কাঁচরাপাড়াতেই। সেখানে কেন্দ্রীয় স্কুলে পড়ত প্রাক্তন সেনাকর্মী দুলালের ছেলে আর ছোট মেয়ে ঈশিতা। প্রাক্তন বিএসএফ জওয়ানের ছেলে দেশরাজ ইশিতারই সহপাঠী । বন্ধুমহলের দাবি, দু’জনের ঘনিষ্ঠতা ছিল। সম্প্রতি ঈশিতা সেই সম্পর্ক থেকে সরতে চাওয়ায় দেশরাজের মাথায় ‘খুন চেপে যায়’। পিস্তল জোগাড় করে ঈশিতাকে সে ঘুরপথে হুমকি দিতে থাকে। ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা সাবধান করলেও শোনেনি।

যদিও ঈশিতার বাবা-মা প্রথম থেকেই বলে এসেছেন, মেয়ের সঙ্গে দেশরাজের কোনও সম্পর্কের কথা তাঁদের জানা ছিল না। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, “সম্পর্কে টানাপড়েনের জেরেই যে এই খুন, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। শনাক্তকরণ পর্ব মিটে গেলে দেশরাজকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারলেই বিস্তারিত ভাবে সব জানতে পারব।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Krishnanagar Murder Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy