Advertisement
E-Paper

যিনি শেখালেন বর্ণ, তাঁরই মূর্তি চূর্ণ

নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অরুণকুমার মণ্ডল বলেন, “ঘটনাচক্রে আমি নিজে কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র এবং নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের দায়িত্ব সামলাচ্ছি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০১:০৯
মাল্যদান: নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

মাল্যদান: নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

গোলাপি রঙের মলাট। পাতলা একখানি বইয়ের হাত ধরে তাঁর সঙ্গে বাঙালির ‘বর্ণ পরিচয়’ সেই কোন ছেলেবেলায়। জ্ঞানচক্ষু খুলতে তাঁর অবদান সবচেয়ে বড় বলেই হয়ত বারে বারে তাঁরই দিকে ধেয়ে গিয়েছে আঘাত। শুধু জীবিত কালেই নয়, মৃত্যুর পরেও মেলেনি রেহাই।

সময়টা ১৯৪২। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। জাপানি বোমার ভয়ে কাঁপছে কলকাতা। ঈশ্বরচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর নামাঙ্কিত কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলেন স্থানান্তরিত করা হবে কলেজ। দু’টি শাখায় বিভক্ত হয়ে বিদ্যাসাগর কলেজের একটি চলে গেল সিউড়িতে। অন্য অংশটি নবদ্বীপে। সেটা ছিল ১৯৪২ সালের ৫ মার্চ। নবদ্বীপে নতুন করে যাত্রা শুরু করল বিদ্যাসাগর কলেজ। পরবর্তী কালে যুদ্ধ মিটলে কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে পুনরায় পঠনপাঠন শুরু হলেও নবদ্বীপ বা সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজও একই সঙ্গে চলতে থাকে। তাই কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে মূর্তি ভাঙার ঘটনায় তোলপাড় নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্রসমাজ। প্রবল রোদ উপেক্ষা করে বুধবার দুপুরে নবদ্বীপ কলেজে ভিড় জমান শ’য়ে শ’য়ে পড়ুয়া। কালো ব্যাজ পরে মঙ্গলবার রাতের ঘটনার প্রতিবাদ জানান তাঁরা। কলেজের শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী-সহ সকলে এ দিন কলেজে বিদ্যাসাগর মূর্তিতে মাল্যদান করেন। তার পর এক ধিক্কার মিছিল বার হয়।

নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অরুণকুমার মণ্ডল বলেন, “ঘটনাচক্রে আমি নিজে কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র এবং নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের দায়িত্ব সামলাচ্ছি। সুতরাং আমার কাছে এটা কত বড় আঘাত, তা বলে বোঝাতে পারব না। এই ঘটনার নিন্দা করার ভাষা নেই। ঘটনার প্রতিবাদে নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের পড়ুয়ারা একত্রিত হয়েছে।”

কলেজের প্রাক্তন ছাত্র আইনজীবী ও এক সময়ের কংগ্রেস নেতা ষষ্ঠীভূষণ পাল বলেন, “সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনেও মূর্তি ভাঙা হয়েছে। কিন্ত সেই প্রেক্ষাপট এবং মঙ্গলবার কলকাতায় যা ঘটল তার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। নকশালরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তা বলে ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তিভাঙা, সীমাহীন অসভ্যতা। এটা কোনও ভাবেই মানা যায় না।”

কলেজের আর এক প্রাক্তনী নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “এ কাজ বর্বরোচিত। মনীষীদের মূর্তিকে সম্মান করার জন্য যে শিক্ষা প্রয়োজন, তা এখানে কোনও রাজনৈতিক দল তার কর্মী সমর্থকদের দেয় না। সুতরাং মনীষীদের মূর্তি যদি রক্ষা করতেই না পারি তা হলে গড়ার দরকার কি? যদি ভাঙার জন্যই শুধু গড়া হয় তা হলে আমি বলব বন্ধ হোক মূর্তি গড়া। বন্ধ হোক মূর্তি বসানো।”

ধিক্কার মিছিলের তখন প্রস্তুতি চলছে। কলেজের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে এ নিয়েই আলোচনা করছিল একদল পড়ুয়া। গলায় একরাশ ক্ষোভ নিয়ে ইতিহাস অনার্সের প্রথম বর্ষের সুধীন বিশ্বাস বা বিকম প্রথম বর্ষের সৌম্যজিত অধিকারীকেরা বলে, “যতবার ভাবছি ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি, যারা মূর্তিটা ওই ভাবে ভাঙল তারা কী সত্যি মানুষ নাকি অন্য কিছু? বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশত বর্ষের প্রাক্কালে এটাই কি শ্রদ্ধার্ঘ্য? মূর্তি যারা ভেঙেছে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

ততক্ষণে মিছিল থেকে স্লোগান উঠেছে “যিনি শিখিয়েছিলেন বর্ণ, তাঁর মূর্তি করেছে চূর্ণ, ধিক্কার ধিক্কার।”

দুপুরের রোদে শব্দগুলো ছড়াতে ছড়াতে মিছিল এগিয়ে চলে।

Vidyasagar College Vandalization Ishwar Chandra Vidyasagar TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy