Advertisement
E-Paper

ন’বছর পরে জেগে উঠল ভেন্টিলেটর

শেষতক নড়েচড়ে বসল যন্ত্রটা। সরু লিকলিকে পাইপ ছুঁয়ে ওষুধ নামল গলায়, অজস্র বুদবুদ ছড়িয়ে জেগে উঠল অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্যালাইনের টিউব চুঁইয়ে ফ্লুইড নেমে এল শরীরে— রোগীর ধড়ে যেন প্রাণ এল ফের!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১০

শেষতক নড়েচড়ে বসল যন্ত্রটা। সরু লিকলিকে পাইপ ছুঁয়ে ওষুধ নামল গলায়, অজস্র বুদবুদ ছড়িয়ে জেগে উঠল অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্যালাইনের টিউব চুঁইয়ে ফ্লুইড নেমে এল শরীরে— রোগীর ধড়ে যেন প্রাণ এল ফের!

ন’বছর ঘুমিয়ে থাকার পরে জেগে উঠল কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালের ভেন্টিলেটর।

২০০৭ সাল, নদিয়া জুড়ে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়তে হাসপাতালে রোগীর মিছিল লেগে গিয়েছিল। হাপড়ের মতো বুক ওঠা নামা করছে, শ্বাসকষ্ট। সঙ্গে বিবিধি অসুবিধা।

‘একটা ভেন্টিলেটর থাকলে আরও ক’টা রোগী বাঁচানো যেত’— কথাটা কানে যেতেই নড় চড়ে বসেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যভবনে তদ্বির করে মাস কয়েকের মধ্যেই আনানো হয়েছিল ভেন্টিলেটর। একটা নয়, তিন-তিনটে।

তবে, মেশিন এলেও তারা আর রা কাড়েনি। হাসপাতালের তদানীন্তন এক কর্তা সে সময়ে বলেছিলেন, ‘‘আরে যন্ত্র তো চিকিৎসক নয়, চিকিৎসকেরা এগিয়ে না এসে ওরা সাড়া শব্দ করবে কী করে, ও তো কোমায় চলে গিয়েছে!’’

হাসপাতালের এক কোণে পড়ে থাকতে থাকতে সেই ভেন্টিলেটর ত্রয়ীকেও এক সময়ে ‘জরা’ গ্রাস করেছিল তাই। কিন্তু চিকিৎসকদের এমন প্রলম্বিত অনীহা কেন?

এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অনীহার মূল কারণ, কাজের দায় চাপবে তাই?

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের এক শ্রেণির চিকিৎসক অতিরিক্ত কাজের চাপ না নেওয়ার জন্য নানা বাহানা করে আটকে রাখছিলেন ভেন্টিলেটরের ইনস্টলেশন বা চালু করার কাজটা।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা হাসপাতালের দু’টি ক্যাম্পাসের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে মাত্র চার জন অন্যাসথেসিস্ট ছিলেন। দুটো ক্যাম্পাস সামলে ভেন্টিলেশন ওয়ার্ডের জন্য অতিরিক্ত চাপ তাঁদের কেউ-ই নিতে চাইছিলেন না। কারণ ভেন্টিলেশন ওয়ার্ড চালু হলে যে কোন মুহুর্তে এক জন অন্যাসথেসিস্টের প্রয়োজন হবে। কাউকে না কাউকে সর্বক্ষণের জন্য থাকতে হবে, যাঁকে চাইলেই পাওয়া যাবে। সেই অতিরিক্ত চাপ নিতে রাজি ছলেন না তাঁরা।

মেডিসিন বিভাগের এক অংশের চিকিৎসকদের তরফেও একটা বাধা আসছিল বলে জানা গিয়েছে। কারণ সে ক্ষেত্রে তাদের উপরেও একটা অতিরিক্ত দায়িত্ব এসে পড়বে। এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “অ্যানাসথেসিস্টের সংখ্যা এখন ছ’জন। ফলে আর কোন কথা শোনোর জায়গা নেই। আমরা ঠিক করেই ফেলেছিলাম যে এ বার যেমন করেই হোক ভেন্টিলেশন পরিষেবা চালু করতে হবে।”

জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের এক অংশের অবশ্য দাবি, ভেন্টিলেশন ওয়ার্ড চালু করার জন্য দরকার বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীর। গত ন’বছরে সে ব্যাবস্থা তৈরি করতে পারেনি হাসপাতাল। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের পরিকাঠামোও তৈরি ছিল না হাসপাতালে।

বছর দুয়েক আগে হাসপাতালে সিসিইউ চালু হওয়ার পরে, চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে সমস্যা না থাকলেও বাকি পরিকাঠামোর পাশাপাশি অন্য একটা সমস্যা কিন্তু থেকেই গিয়েছিল।

গত দু’বছর ধরে সেই স্তব্ধ ভেন্টিলেটর ফের চালু করার চেষ্টা শুরু করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। বৃহস্পতিবার, সেই উদ্যোগেই সাড়া মিলল। জরুরীকালীন ভিত্তিতে চালু করা হয়েছে একটি ভেন্টিলেটর।

হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “এত দিন আমাদের জেলায় কোথাও ভেন্টিলেশন ছিল না। কলকাতায় রেফার করতে হত। আশা করছি, সেই দুর্দিন মুছবে।’’

ventilator Krishnanagar Sadar District Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy