যানজটে আটকে পড়েছে টুকটুক। ধৈর্য হারিয়ে নেমে যাচ্ছেন যাত্রী।
রাস্তা দু’ধার জুড়ে হকারদের পসরা। ফুটপাথ বলে কিছু নেই। কখনও ফুটপাথে জায়গা না হওয়ায় সেই পসরা রাস্তায় নেমে এসেছে। তার উপরে রাস্তায় সারাক্ষণ টুকটুক, রিকশা, ভ্যান, মোটরবাইক, সাইকেল, গাড়ি, ম্যাটাডোরের ভিড়। অফিসের ব্যস্ত সময়ে টাইমে মানুষের ঢল। সব মিলিয়ে প্রাণ হাতে করে যাতায়াত! বহরমপুর ‘মোহনা’ বাস টার্মিনাসের সামনে রাস্তায় দিনের পর দিন এমন যানজটে থমকে নাগরিক জীবন।
ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়নি তা নয়। বছর কয়েক আগে বহরমপুর পুর-কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় হকার উচ্ছেদ করে। কিছু দিনের জন্য হলেও ফিরে এসেছিল স্বাভাবিক জীবন। কিন্তু সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সেই সময় হকারদের পাশে দাঁড়ায়। এতে উৎসাহিত হয়ে অস্থায়ী দোকান ঘর গড়ে তুলে নতুন করে ব্যবসা ফেঁদে বসেন হকাররা। ফলে ফের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বেশি দিন সময় লাগেনি। হকারদের অনেকেই আবার কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনে নাম লেখান। ফলে বহরমপুর পুর-কর্তৃপক্ষের হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত কার্যত ঠান্ডা ঘরে ঢুকে যায়। যানজট মুক্ত করতে হকারদের উচ্ছেদ করা যে জরুরি তা মানছে পুর-কর্তৃপক্ষ। তবে মালদহ স্টেশনের হকার উচ্ছেদের পরিণতির কথা ভেবে বহরমপুর পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য এখনই ‘অল আউট’ করতে পারছে না।
বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, ‘‘উচ্ছেদের সাত দিন আগে থেকে মাইকে প্রচার চালানো হবে। তার পরেও নিজেরা স্বেচ্ছায় সরে না গেলে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই উচ্ছেদ করা হবে।’’ তাঁর কথায়, সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করে ওই হকার উচ্ছেদ খুব জরুরি। আমরা পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদের পক্ষপাতী নই। কিন্তু যারা পুরনো বাসস্ট্যান্ডের হকার হিসেবে তালিকায় নাম ছিল, তাদের নতুন বাসস্ট্যান্ডে জায়গা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও রাস্তা দখল করে নতুন করে হকার বসছে। আমরা তা কিছুতেই নেব না।’’ কে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত তা উচ্ছেদের সময়ে দেখব না বলেও হুমকি দেন পুরপ্রধান।
সমবায়িকা মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার ওই রাস্তা বহরমপুরের সবচেয়ে ব্যস্ত ও জনবহুল রাস্তা বলে পরিচিত। এ দিকে, ওই রাস্তার দু-পাশে সারি দিয়ে সাজানো রয়েছে হকারদের বিভিন্ন দোকান। সবচেয়ে বেশি রয়েছে ফলের দোকান। এতে রাস্তা যেমন সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে, তেমনি স্বাভাবিক যাতায়াতও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে রিকশা, টুকটুক, মোটরবাইক, সাইকেল, পথচারীদের ভিড়ে ওই রাস্তা সর্বক্ষণের জন্য ব্যস্ত থাকে। ওই যানজট ঠেলে বাসস্ট্যান্ডের ভেতর থেকে বাস বের করতে গিয়ে ওই যানজট আরও পাকিয়ে যায়। নিত্য বাস যাত্রী সমিতির পক্ষে তৌসিফুল ইসলাম তুহিন বলেন, ‘‘যানজটের কারণে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস বের হতে পারে না। গরমের মধ্যে বাসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। অফিস-কাছারি-স্কুল-কলেজে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। সব মিলিয়ে প্রতি দিন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে পদক্ষেপ করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।’’ প্রশাসনিক স্তরে পদক্ষেপ করার পাশাপাশি মানবিকতার দিক থেকেও বিষয়টি দেখা উচিত বলে তিনি জানান।
এ দিকে, বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না তুলে হকার উচ্ছেদ হলে তাঁদের নিয়ে আন্দোলনের পথে নামারও হুমকি দিয়েছেন সিটু’র জেলা সম্পাদক তুষার দে। তিনি বলেন, ‘‘স্বাভাবিক যান চলাচলের জন্য, পরিবহণের স্বার্থে এবং শহরের উন্নয়নের জন্য হকারদের সরানোর প্রয়োজন হলে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে রুজি-রোজগারের স্বার্থে ওই হকারদের পুনর্বাসন দিতেই হবে।’’ তিনি জানান, ওই হকারদের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলে তবেই উচ্ছেদ করার জন্য এর আগে বাম আমলে বিল পাশ হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারও ওই সংক্রান্ত একই বিল এনেছে। এখন বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না তুলে হকার উচ্ছেদ মেনে নেব না।
হকারদের কারণেই ওই রাস্তায় যানজট হয়ে থাকে বলে মনে করেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে হকার উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে গড়িমসি করা হচ্ছে। পুরসভারও সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।’’
বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলে ওই হকারদের পুনর্বাসন দিয়ে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা চলছে। সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধানের উপায় ভাবা হচ্ছে।’’ এ দিকে, ২৭ মে একটি বৈঠক ডাকা হলেও মুর্শিদাবাদ পুরসভায় পুরপ্রধান নিয়োগ অনুষ্ঠানের জন্য তা স্থগিত রাখা হয়। নীলরতনাবু ওই বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এসডিওকে অনুরোধ করেন। পুরপ্রধান নির্বাচন শেষ। কিন্তু তারপরে আর বৈঠক নিয়ে কাউকে উচ্চবাচ্য করতে শোনা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy