Advertisement
E-Paper

এক রাজ পরিবারে ১৩টি পুজো, এড়োয়ালি আজ পরিচিত কালীগ্রাম নামে

প্রায় ৪০০ বছর আগে এই কালীপুজোর প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামজীবন রায়। তখন রাজবাড়িতে একটি পুজোই হত। সেই পুজোয় সমস্ত ধর্মের মানুষের নিমন্ত্রণ থাকত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৫৮
কালীগ্রামের কালী পুজো। নিজস্ব চিত্র।

কালীগ্রামের কালী পুজো। নিজস্ব চিত্র।

একসঙ্গে ১৩টি কালী পুজো হয়। তাই এই গ্রামকে কালীগ্রাম নামে চেনেন আশপাশের মানুষ। মুর্শিদাবাদে কান্দির এই গ্রামের আসল নাম যদিও এড়োয়ালি। প্রায় ৪০০ বছর আগে এখানে একটি কালীপুজোই হত রায় পরিবারে। কিন্তু পরে সেই একটি পুজো থেকেই তৈরি হয় ১৩টি কালী পুজো। এড়োয়ালি-সহ গোটা এলাকা মেতে ওঠে এই পুজোকে কেন্দ্র করে। তবে এ বার করোনা বিধি মেনেই হচ্ছে সেই পুজো।

গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় ৪০০ বছর আগে এই কালীপুজোর প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামজীবন রায়। তখন রাজবাড়িতে একটি পুজোই হত। সেই পুজোয় সমস্ত ধর্মের মানুষের নিমন্ত্রণ থাকত। দূরদূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ এসে এই পুজোতে নাচ-গান করতেন। রাজারা খুশি হয়ে উপহার দিতেন। প্রজাবৎসল রাজা রামজীবন সবার মঙ্গল কামনায় ছাগ, মেষ, মহিষ বলি দিতেন।

প্রথমে এই রাজপরিবার ‘রায় রাজপরিবার’ নামে পরিচিত থাকলেও রাজা রামজীবন রায়ের বংশধরেরা বিভিন্ন প্রজাবৎসল কাজের জন্য ব্রিটিশদের থেকে ‘চৌধুরী’ উপাধি লাভ করেন। সেই থেকেই এই রাজপরিবার রায়চৌধুরী পরিবার নামে পরিচিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই একটি পরিবার ভাগ হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ভাগ হয় পুজোও। রাজা রামজীবনের ৩ প্রপৌত্র ছিলেন দেবদত্ত, ইন্দ্রমণি এবং শ্যামসুন্দর। তাঁদের রাজবংশ যথাক্রমে বড় পাঁচানি, ছোট পাঁচানি এবং ছয়ানি রাজপরিবার নামে পরিচিত।

বড় পাঁচানি পরিবারে ৫টি কালীর পুজো হয় যথাক্রমে ধর্ম, ষষ্ঠী, বেল, কুল, টুংগী এবং শ্যামরূপী। ছয়ানি রাজ পরিবারের ৪টি কালী পুজো হয় যথাক্রমে বড়মা, মঠ, নিম ও চাতর বুড়ি নামে। আর ছোট পাঁচানি রাজ পরিবারে ৪টি কালী পুজো হয় ধর্ম বা ষষ্ঠী, মোল, আমড়া এবং বেল নামে। এই বেল কালীটিতে শুধু ঘট পুজো করা হয়। এখানে ধর্মকালী ও ষষ্ঠীকালীকে বড় পাঁচানি ও ছোটপাঁচানি রাজপরিবার পালা করে পুজো করে। বেশির ভাগ কালীকেই ‘বুড়ি’ বলে ডাকা হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, যে গাছের নীচে যে ঠাকুরের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তার নামানুসারে কালী মায়ের নাম রাখা হয়। বড় পাঁচানির বেল, ছোট পাঁচানির মোল এবং ছয়ানির মঠ কালীতে পঞ্চমুণ্ডীর আসন বিদ্যমান। বড় পাঁচানির বেলকালীতে একমাত্র বাঘছালের আসনে বসে পুরোহিত পুজো করেন। এই বেল কালী এবং মঠ কালীতে কারন বা মদ দিয়ে ঘট ভরা হয়।

বড় পাঁচানির রাজা চন্দ্রকান্ত রায়চৌধুরী বেলকালীতে পুজো করানোর জন্য সাধক বামাখ্যাপাকে অনুরোধ করে আনতেন এবং ছয়ানির রাজা কার্তিক রায়চৌধুরীও তাঁকে এনে এক বার মঠ কালীতে পুজো করিয়েছিলেন বলে কথিত আছে।

কালের নিয়মে রাজত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেলেও রাজদের প্রতিষ্ঠা করা পুজোগুলো আজও চলে আসছে বংশ পরম্পরায়। মহারাজ রাজা রামজীবন রায়ের প্রতিষ্ঠিত কালীপুজোর জৌলুস আজও একই ভাবে বজায় রেখেছেন রায়চৌধুরী রাজপরিবারের সদস্যরা। এই পুজো দেখতে আজও ভিড় জমান বিভিন্ন জেলার মানুষ।

Murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy