Advertisement
E-Paper

সবার হাতেই মোবাইল, কে আসবে বুথে

এ যেন অনেকটা ঠিক সুকুমার রায়ের 'হ য ব র ল'-এর মতোই। ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বিড়াল। ছিল টেলিফোন বুথ, হয়ে গেল একটা গ্যাসের ওভেন আর প্রেসার কুকার সরানোর দোকান! 

সুদীপ ভট্টাচার্য 

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩১
রূপান্তর: ছিল টেলিফোন বুথ, হয়েছে গ্যাস সারানোর দোকান। নিজস্ব চিত্র

রূপান্তর: ছিল টেলিফোন বুথ, হয়েছে গ্যাস সারানোর দোকান। নিজস্ব চিত্র

এ যেন অনেকটা ঠিক সুকুমার রায়ের 'হ য ব র ল'-এর মতোই। ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বিড়াল। ছিল টেলিফোন বুথ, হয়ে গেল একটা গ্যাসের ওভেন আর প্রেসার কুকার সরানোর দোকান!

ওটা যে এক সময়ে বুথ ছিল তা বোঝা যায়, পুব দিকের দেওয়াল আলমারির পিছনের দেওয়ালে ‘পাবলিক টেলিফোন বুথ’ লেখাটা চোখে পড়লে।

জায়গাটা কৃষ্ণনগর ঘূর্ণি বেলতলা বাজারে। দোকানঘরে ভর সন্ধেবেলা একটা প্রেসার কুকার সারাতে ব্যস্ত দোকানি তাপস সরকার। সারা ঘর ভর্তি প্রেসারের ঢাকনা, গ্যাসের ওভেন, প্লাস্টিকের নতুন বোতল আর মেরামতির সরঞ্জাম।

বছর দশেক আগের চিত্রটা যদিও এমন ছিল না। তখন এই দোকান ঘরেই দু’-দুটো টেলিফোন সব সময়ে ব্যস্ত থাকত। ভিড় লেগে থাকত দোকান ঘরে। একটায় ছিল এসটিডি বুথ, আর একটা পিসিও। দু’হাজার সাল নাগাদ টেলিফোন বুথটি চালু

করেছিলেন তাপস।

বছর পাঁচেক রমরমিয়ে চলে বুথের ব্যবসা। এর পরই মানুষের বুথের চাহিদা কমতে থাকে ২০১০ সাল নাগাদ। ব্যবসা এতটাই মন্দা যায় যে, বাধ্য হয়ে সে সময়ে বুথের ব্যবসা তুলে দিতে হয় বলে জানান তিনি।

‘‘সবার হাতে তখন মোবাইল চলে এসেছে। বুথে আসবে কে!’’ ২০১৯ সালে বসে স্মৃতিচারণ করেন তাপস।

২০০০ সালের গোড়ার দিক থেকে শহর-মফস্সলে গজিয়ে উঠেছিল টেলিফোন বুথ। শুধুমাত্র বুথ যেমন ছিল, তেমনই অন্য ব্যবসার পাশাপাশি একটি বুথ রেখে উপরি রোজগারও করতেন দোকানিরা। চায়ের দোকান, পানের দোকানে ঝোলানো থাকত কয়েন বুথ।

কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডের পানের দোকানি সুখদেব ঘোষ একটি কয়েন বুথ বসিয়েছিলেন ২০০৯ সাল নাগাদ। প্রথম দিকে মাসে একাধিক বার ছশো টাকা করে রিচার্জ করতে হত। ২০১৪ সালের শেষের দিকে তিনি বাধ্য হয়েই তুলে দেন কয়েন বুথ। কারণ, প্রথম রিচার্জের টাকারই প্রায় পুরোটা পড়ে থাকত ফোনে। বুথের ফোন থেকে ফোনই করতেন না কেউই।

টেলিফোন বুথ নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতি রয়েছে বুথ মালিকদের। কৃষ্ণনগর রেজিস্ট্রি অফিসের মোড়ে টাইপের দোকান বাপি পালের। সেখানেই ছিল তাঁর ফোন বুথ। আজও ধুলোমাখা এসটিডি, আইএসডি, পিসিও লেখা বোর্ড ঝুলছে দোকানের উপরে।

সেই সব দিনের কথা বলতে গেলে আজও আবেগে ভাসেন বাপি—"রেজিস্ট্রি অফিসের পাশেই ডি আই বি অফিস। পাসপোর্ট বা নানা কাজে সেখানে আসতেন মায়াপুর থেকে বিদেশিরা। বিদেশিরাই ছিলেন আমাদের লক্ষ্ণী। এক বার বিদেশে কল হলেই দু’চারশো টাকা বাঁধা ছিল।’’

কিন্তু কালের নিয়মেই এক দিন হারিয়ে গেল টেলিফোন বুথ। বুথের সামনে অপেক্ষা করা লম্বা লাইন।

Telephone Booth Krishnanagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy