Advertisement
E-Paper

টাকা ক’খানা পেলে ওষুধটা কিনতাম বাবা

টানাটানির সংসার, তার উপর মাঝে মধ্যেই তাঁর আবার হৃদরোগের ব্যামো। দু-দু’বার হাসপাতালে ঘুরে এলেও ওষুদের যা ছ্যাঁকা লাগা দাম, ছেলেদের কাছে চাইতে কিঞ্চিৎ সঙ্কোচই হয়েছিল। তক্তপোশের তলা থেকে তাই হাঁড়ির ভিতর রাখা গামছা মোড়া নোট ক’খানা বের করেছিলেন ভগবতী।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৯
দাবি: পুরনো নোট বদলাতে কলকাতার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

দাবি: পুরনো নোট বদলাতে কলকাতার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

টানাটানির সংসার, তার উপর মাঝে মধ্যেই তাঁর আবার হৃদরোগের ব্যামো। দু-দু’বার হাসপাতালে ঘুরে এলেও ওষুদের যা ছ্যাঁকা লাগা দাম, ছেলেদের কাছে চাইতে কিঞ্চিৎ সঙ্কোচই হয়েছিল।

তক্তপোশের তলা থেকে তাই হাঁড়ির ভিতর রাখা গামছা মোড়া নোট ক’খানা বের করেছিলেন ভগবতী। তার পর ছেলের কাছে লজ্জা-লজ্জা মুখে বলেছিলেন, ‘‘ওষুধ ক’টা কিনে দিবি বাবা, বুকে বড্ড ব্যাথা!’’ মায়ের হাতে নোটের গোছা দেখে হাঁ হয়ে গিয়েছিল ছেলের মুখ, এক ঝাঁক পুরনো পাঁচশো টাকা!

দু’দুটো গাই গরু, তাদের দুধ আর দেওয়ালে লেপটানো ঘুঁটে বেচে গত কয়েক বছরে যা আয় করেছিলেন, হাঁড়ির ভিতর সযত্নে তা সরিয়ে রেখেছিলেন বৃদ্ধা। ঈষৎ মলিন, দশ খানা পাঁচশো টাকার নোট। কিন্তু, নোট বাতিলের ছায়ায় সে টাকা ম্লান হয়ে গিয়েছে তার খবর ভগবতীর কাছে পৌঁছয়নি। নাকাশিপাড়ার চিচুড়িয়া গ্রাম, আশপাশের ওষুধের দোকানে বার কয়েক ধর্না দিয়েও লাভ হয়নি।

ভরসা বলতে ছিল তাঁর নাতি বাবুসোনা সরকার। ভগবতী বলছেন, ‘‘নাতি আমার বড় ভরসা। লেখাপড়া করে তো!’’ গত ভোটে রানাঘাট (উত্তর-পূর্ব) আসনে সিপিএমের প্রার্থীও হয়েছিল কলেজ পড়ুয়া ছেলেটি। তার হাত বুধবার সটান কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কে হাজির হয়েছিলেন বিরাশি বছরের ভগবতী। আরবিআইয়ের সিঁড়িতে বসে ঘুমই এসে গিয়েছিল বুঝি। নাতি এসে খবর দেন, ‘‘চল, বাড়ি চল। ও টাকা আর ফেরত হবে না।’’

দিল্লির রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে বলিরেখা দীর্ণ সেই বুড়োর মুখটা মনে পড়ে গিয়েছিল বাবুসোনার। বলছেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে টিভি, সোশ্যাল সাইটে খুব ঘুরছিল— আত্মহননের হুমকি দিয়ে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে আছেন বৃদ্ধ।’’ আর্জি, ‘হুজুর মাই-বাপ’, সামান্য ক’টা তো টাকা নতুন নোট করে দাও না! দিল্লির সেই মুখটাই যেন নাকাশিপাড়ার ভগবতী হয়ে বুধবারের বিকেলে নেমে এসেছিল আরবিআইয়ের সিঁড়িতে।

বাবুসোনা জানান, নোট ক’খানা নিয়ে বাড়ির লোক যখন হাপিত্যেশ করছেন, তখন খোঁজ করে জানতে পেরেছিলেন, ২৯ থেকে ৩১ ‘স্পেশ্যাল ডে’। শুধু প্রবাসী নয়, সকলের পুরনো নোটই নাকি ভাঙিয়ে দেবে আরবিআই।

ভুলটা ভাঙে, বৃদ্ধাকে ঘাড়ে নিয়ে ট্রেন-বাস-ভ্যান রিকশা ঠেঙিয়ে দেড়শো কিলামিটার রাস্তা উজিয়ে শহর কলকাতায় পৌঁছে।

নভেম্বরে নোট বাতিলের ধাক্কায় দেশ জুড়ে সাড়ে তিন মাসের হয়রানির ছবিটা থিতিয়ে আসার মুখে ফের যেন উস্কে উঠেছে। শেষের ক’দিন দিল্লি, পুণে, পটনার হা়ড় হাভাতে কয়েকটা মুখ— আরবিআইয়ের সিঁড়িতে কান্না চেপে যাঁরা অপেক্ষা করছিলেন একটাই আর্জি নিয়ে— টাকা ক’টা বদলে দেওয়া যায় না!

ভগবতী বলছেন, ‘‘নতুন টাকা পেলে ওষুধগুলো কিনতে পারতাম বাবা, বুকে বড্ড ব্যাথা যে!’’

Reserve Bank banned currency Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy