Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
অতিমারিতে বন্ধ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র
Malnutrition

malnutrition: অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা বাড়ল তিন গুণ

প্রতি মাসে বরাদ্দ চাল, ডাল, আলু দেওয়া হলেও বন্ধ রান্না করা খাবার দেওয়া। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ ছিল শিশুদের ওজন মাপার কাজ।

অপুষ্টির শিকার শিশুকে পরীক্ষা করছেন পুষ্টিবিদ।

অপুষ্টির শিকার শিশুকে পরীক্ষা করছেন পুষ্টিবিদ। নিজস্ব চিত্র।

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৩৩
Share: Save:

করোনা আবহে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। প্রতি মাসে বরাদ্দ চাল, ডাল, আলু দেওয়া হলেও বন্ধ রান্না করা খাবার দেওয়া। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ ছিল শিশুদের ওজন মাপার কাজ।

অতিমারির আগে কেন্দ্রের প্রকল্পভুক্ত চিকিৎসক এক থেকে দেড় মাস অন্তর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে গিয়ে শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেন। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ তা-ও। স্বাভাবিক ভাবেই, শিশুদের পুষ্টি, বৃদ্ধি ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা বুঝতে পারছিলেন না দফতরের কর্মীরা। গত জুলাইয়ে শিশুদের ওজন মাপার কাজ শুরু হতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ আইসিডিএস এবং স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। আধিকারিকরা লক্ষ্য করেছেন, করোনা আবহে ‘গুরুতর চরম অপুষ্টির শিকার’ শিশু বা ‘লাল বাচ্চার’ সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। বেড়েছে ‘হলুদ’ শিশুর সংখ্যাও। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত হরিহরপাড়া এবং নওদা ব্লকে ‘লাল বাচ্চা’র সংখ্যা ছিল তিনটি করে। জুলাইয়ে ওজন মাপার কাজ শুরু হতে দেখা যায়, দুই ব্লকে ‘লাল বাচ্চা’র সংখ্যা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৪০ ও ৩৮। জিয়াগঞ্জ,কান্দি, সুতি, ফরাক্কা-সহ জেলার বিভিন্ন ব্লকে বেড়েছে অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা। জেলা জুড়ে ‘লাল বাচ্চা’র সংখ্যা ৩১৪ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০০। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সিরাজ দানেশ্বর বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ও আইসিডিএস দফতরের আধিকারিকরা তৎপর রয়েছেন। অপুষ্টির শিকার শিশুদের পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ২৭টি শিশু পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি।’’

ওই দফতর সূত্রে খবর, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু থাকাকালীন উপভোক্তাদের খিচুড়ি, ডিম-ভাত দেওয়া হত। মাঝেমধ্যে পুষ্টিকর লাড্ডু, ছাতুও দেওয়া হত। এ ছাড়া, পুষ্টিবিদ ও দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী ওই খাবার পরিমাণ মতো দেওয়া হত। কেন্দ্র খোলা থাকলে সেখানেই খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হত শিশু, প্রসূতি ও সন্তানসম্ভবা মা-দের। করোনা কালে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকায় বর্তমানে প্রত্যেক উপভোক্তাকে দু'কেজি চাল, দু'কেজি আলু ও তিনশো গ্রাম মুসুর ডাল দেওয়া হয়। কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ও লাল ও হলুদ বাচ্চার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই খাবার শিশুদের ঠিকমত খাওয়ানো হয় কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন দফতরের কর্মী, আধিকারিকরা।

শ্রীপুর গ্রামের নার্গিস বিবি বলেন, ‘‘আমার এক বছর আট মাস বয়সী শিশুর ওজন জুলাই মাসে ছিল ৬ কেজি ৩০০ গ্রাম। তিন মাসে ওজন নেমে গিয়েছে ৪,২০০ কেজিতে।’’ এমন অনেক শিশুই এখন গভীর ভাবে অপুষ্টির শিকার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা কমাতে ইতিমধ্যে ব্লকে ব্লকে শিশুর স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর তাদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা। হরিহরপাড়ার সিডিপিও অর্ণব চক্রবর্তী জানান, ব্লকের ১৮ জন শিশুকে পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হবে।’’ মাস কয়েক আগেও জেলার তিনটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে গভীর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা থাকত শূন্যের আশেপাশে। মাসখানেকের মধ্যে সেই সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। বর্তমানে জেলার তিনটি পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২৭ জন শিশু ভর্তি আছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বলেন, ‘‘শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malnutrition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE