কোটি কোটি টাকার সাইবার প্রতারণার অভিযোগে মুর্শিদাবাদের হরিহারপাড়া থেকে গ্রেফতার তিন জন। ধৃতেরা হল রাকেশ মণ্ডল ও সাহাবুল শেখ এবং আব্দুর রউফ শেখ। পুলিশ সূত্রে খবর, কমিশনের লোভ দেখিয়ে অশিক্ষিত গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করত ওই প্রতারক দল। ধৃতদের আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার সকালে গোপন সূত্রে খবরের ভিত্তিতে হরিহরপাড়া কিসান মান্ডি এলাকায় অভিযান চালায় হরিহরপাড়া থানা ও সাইবার থানার যৌথ বাহিনী। সেখানেই তিন যুবককে একসঙ্গে বসে পরিকল্পনা করার সময় হাতেনাতে পাকড়াও করেছে পুলিশ। ধৃত সাহাবুলের বাড়ি ডালটনপুর এলাকায়। আব্দুর শেখের বাড়ি শিবনগর এলাকায়। ধৃতদের কাছ থেকে মিলেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের পাশবই, এটিএম কার্ড, মোবাইল ফোন এবং বেশ কয়েকটি সিম কার্ড। অভিযুক্তেরা বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৭ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। তবে ওই কাণ্ডে মূলচক্রী এখনও অধরা। তাঁর খোঁজ শুরু করেছে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ।
জানা গিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার বাসিন্দা এক মহিলাকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে নোটিস পাঠানো হয়। মহিলার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য চাওয়া হয় হরিহরপাড়া থানার কাছে। বিষয়টির গুরুত্বপূর্ণ বুঝতে পেরে ওই মহিলা ও তাঁর ছেলে পুলিশের দ্বারস্থ হন। তদন্ত শুরু করে হরিহরপাড়া থানার পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে, অভিযোগকারী মহিলার দিনমজুর ছেলের অ্যাকাউন্ট বই ব্যবহার করে কয়েক কোটি টাকার সাইবার দুর্নীতি করেছেন ওই তিনজন। কিছু কমিশন দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ওই মহিলা ও তাঁর ছেলের অ্যাকাউন্ট নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগে জানানো হয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে হরিহরপাড়া থানার পুলিশ। মঙ্গলবার হরিহরপাড়া কিসান মান্ডিতে অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও এটিএম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের পাসবই উদ্ধার হয়।
তদন্তে উঠে এসেছে, মূলত উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা সরিয়েছেন ‘প্রতারকেরা’। মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত তিন ওই চক্রে ‘এজেন্ট’ হিসাবে কাজ করতেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ডোমকল ও রাজস্থানের একটি সাইবার প্রতারণা চক্রের সঙ্গে গত বছর কয়েক মাস আগে যোগাযোগ হয়। গত কয়েক মাসে তাঁরা ৮-১০ কোটি টাকা বিভিন্ন ভাবে তুলে নিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাজিদ ইকবাল বলেন, ‘‘সাইবার প্রতারণার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে। মূল পাণ্ডাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’’