Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ছিঁড়ল না শিকে

‘কাটা ঘায়ে’ প্লেটের ছিটে

পুলিশের নির্দেশে ডোমকল থানায় অনাস্থায় সই করা ১৪ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে যান প্রদীপ চাকী। সেখানেই জানতে পারেন তিনি নন, জাফিকুল ইসলাম হবেন ডোমকলের নতুন পুরপ্রধান।

নেমপ্লেট পড়ে রইল দোকানেই। নিজস্ব চিত্র

নেমপ্লেট পড়ে রইল দোকানেই। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস সৈয়দ
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

নীলচে ফাইবারের উপরে দুধ সাদা অক্ষরে জ্বলজ্বল করছে— ‘চেয়ারম্যান প্রদীপ চাকী’।

ডোমকলের জয়রামপুরে শীর্ণ গলিতে ছোট্ট দোকানটায় সেই প্রদীপ চাকীর উপরে এখন ঈষৎ ধুলো। শখ করে বরাত দেওয়া নেমপ্লেট আর নিতে আসেননি তিনি।

ডোমকলের সাইনবোর্ড লেখা সেই দোকানে অবহেলায় পড়ে রয়েছে আরও একটি নেমপ্লেট— ‘চেয়ারম্যান, ডোমকল মিউনিসিপ্যালিটি’, দোকানি মাসাদুল মণ্ডল বলছেন, ‘‘হ্যাঁ বড় আশা নিয়ে প্রদীপবাবু নেমপ্লেট দু’টো লিখতে দিয়েছিলেন। কিন্তু বরাত মন্দ। তাঁর আর চেয়ারম্যান হওয়া হল না। নেমপ্লেটও নিতে আসেননি।’’

জুনের মাঝামাঝি ডোমকলের ২১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৫ জন একজোট হয়ে তৎকালিন পুরপ্রধান তৃণমূলের সৌমিক হোসেনের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে এসেছিলেন। ওই কাউন্সিলরদের জোটবদ্ধ করা থেকে অনাস্থার চিঠিতে সই-সাবুদ করানো, তলবি সভার আগে নিজের বাড়িতে রেখে যাবতীয় খানাপিনার বন্দোবস্ত করা—সব করেছিলেন প্রদীপ। এমনকি পুরপ্রধান মনোনয়নের আগে উদ্যোগী হয়ে কাউন্সিলরদের নিয়ে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত।

এর পরে গত ৪ অগস্ট দিঘা থেকে ডোমকলে ফিরে আসেন তাঁরা। পরের দিন ৫ অগস্ট ছিল পুরপ্রধান মনোনয়নের সভা। ওই দিন সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রদীপ জানতেন, তিনিই হবেন ডোমকলের নতুন পুরপ্রধান। কিন্তু সকাল সাড়ে ১টার মধ্যেই বদলে যায় যাবতীয় হিসেব।

পুলিশের নির্দেশে ডোমকল থানায় অনাস্থায় সই করা ১৪ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে যান প্রদীপ চাকী। সেখানেই জানতে পারেন তিনি নন, জাফিকুল ইসলাম হবেন ডোমকলের নতুন পুরপ্রধান। সে নিয়ে পুলিশকে দোষারোপ করতে ছাড়েননি তিনি।

তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘পুরপ্রধান পদ থেকে সৌমিককে সরিয়ে দেওয়ার কারিগর ছিলেন প্রদীপ চাকী। ‘পুরস্কার’ হিসেবে তাঁকে পুরপ্রধান করা হবে বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকেও আশ্বাস পেয়েছিলেন। ফলে তলবি সভার পরেই তিনি ‘চেয়ারম্যান’ লেখা নেমপ্লেট যেমন বানাতে দিয়েছিলেন, তেমনি ‘ভাইস’ শব্দ মুছে ‘চেয়ারম্যান’ লেখা গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে।’’

প্রদীপ অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি কোনও নেমপ্লেট তৈরি করতে দিইনি। হয়তো আমার গাড়ির চালক নেমপ্লেট বানাতে দিয়েছিল।’’

যদিও ওই দোকান মালিক বলছেন, ‘‘ডোমকলের নতুন পুরপ্রধান এবং এক জন কাউন্সিলর আমার আত্মীয় হন। ফলে ডোমকল পুরসভার যাবতীয় সাইনবোর্ডের কাজ আমার দোকান থেকেই হয়।’’ সেই মতো তলবি সভার পরেই ওই দুটো নেমপ্লেটের বরাত দিয়েছিলেন প্রদীপ চাকী।

তবে ডোমকল মহকুমা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, চেয়ারম্যানের দৌড়ে প্রদীপ চাকী একা নন, অনাস্থার চিঠিতে সই করেছিলেন, এমন দু’জন কাউন্সিলর এবং স্ত্রী কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে ডোমকলের দু’জন তৃণমূল নেতা নিজেদের পুরপ্রধান হিসেবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। ওই চার জনেই তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহলে ‘পুরপ্রধান’ হচ্ছেন বলেও দাবি করলেও প্রদীপ চাকীর মতো তাঁরা কেউ আগ বাড়িয়ে চেয়ারম্যান লেখা নেমপ্লেট অবশ্য করাননি।

তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস তাঁরা নেমপ্লেট বানাতে দেননি। নয়তো কী লজ্জার শেষ থাকত না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Name Plate TMC Leader Municipal Chairman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE