Advertisement
E-Paper

চাপড়ায় শিশু অপহরণ, হুমকির নালিশ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে

শিশু অপহরণে নাম জড়াল তৃণমূলের এক নেতার। নদিয়ার চাপড়ার ওই অঞ্চল সভাপতির নাম আইনাল শেখ ওরফে কাংলা। অপহৃত ওই শিশুর বাবার অভিযোগ, হাজু শেখকে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য ভয় দেখাচ্ছেন কাংলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:৪৯

শিশু অপহরণে নাম জড়াল তৃণমূলের এক নেতার। নদিয়ার চাপড়ার ওই অঞ্চল সভাপতির নাম আইনাল শেখ ওরফে কাংলা। অপহৃত ওই শিশুর বাবার অভিযোগ, হাজু শেখকে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য ভয় দেখাচ্ছেন কাংলা। হাজুর কথায়, ‘‘ওই নেতা বলেছে, অভিযোগ তুলে নিলে আমার ছেলের মৃতদেহ পাব। নইলে সেটাও পাব না।’’

বুধবার জেলার পুলিশ সুপারের কাছে তৃণমূলের ওই নেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন হাজু। তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাংলাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কাংলার এক আত্মীয়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে বাড়ির সামনে খেলছিল বছর চারেকের শামিম শেখ। তখন তাকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। শামিমের বাবা হাজু শেখ তাঁর দাদা কাজু শেখ, ভাইঝি আলিয়া বিবি ও আলেয়ার প্রেমিক কালাম শেখের বিরুদ্ধে চাপড়া থানায় অপহরণের অভিযোগ করেন। পুলিশ সোমবার রাতেই ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে।

কাংলা অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত দু’তরফেরই আত্মীয়। ছেলেকে না পেয়ে সোমবার রাতে পেশায় গাড়ির চালক হাজু যান কাংলার বাড়িতে। কাংলা সেদিন তাঁকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। পরের দিন তিনি ফের ওই নেতার কাছে গিয়েছিলেন। তখনই তাঁকে কাংলা এমন হুমকি দেন বলে অভিযোগ। হাজু জানান, তাঁরা তৃণমূল করেন। কাংলা তাঁদের আত্মীয়। আবার তৃণমূলের বড় নেতাও। পুলিশের সঙ্গে তাঁর দহরম-মহরম আছে। কাংলার আশ্বাসে হাজু ভেবেছিলেন, ছেলেকে ফিরে পাবেন। কিন্তু হাজুর ভুল ভাঙে পরের দিন।

হাজুর অভিযোগ, ‘‘পরের দিন ওর বাড়িতে যাওয়ার পরে কাংলা আমাকে পুলিশের কাছ থেকে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। নানা ভাবে ভয় দেখাতে থাকে। শেষে বলে, আমি অভিযোগ তুলে নিলেই নাকি ছেলের মৃতদেহ ফিরে পাব।’’ এরপরেই বুধবার হাজু জেলার পুলিশ সুপারের কাছে কাংলার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। হাজু জানান, কাংলার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে শামিম আর বেঁচে নেই। সেই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট যে, গোটা বিষয়টি কাংলা জানেন। ‘‘কাংলাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তো পুলিশ সব জানতে পারবে। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও পুলিশ কাংলাকে ধরছে না।’’— বলছেন হাজু।

কেন অপহরণ করা হল শামিমকে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিয়া বিবির সঙ্গে গ্রামেরই কালাম শেখের সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি জানান হাজু ও প্রতিবেশীদের একাংশ। দিন পনেরো আগে এই নিয়ে কালাম ও আলিয়ার সঙ্গে হাজুর গণ্ডগোলও হয়েছিল। অভিযোগ, উচিথ শিক্ষা দিতে চরম ক্ষতি করে দেবে বলে সেই সময় কালাম হাজুকে হুমকি দিয়েছিল। তবে এই অপহরণের পিছনে নেহাতই ‘শিক্ষা’ দেওয়া উদ্দেশ্য, নাকি তার সঙ্গে অন্য কোন কারণও রয়েছে তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

ঘটনার তিন দিন পরেও পুলিশ শামিমের কোনও সন্ধান না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ চাপড়ার বাসিন্দারা। তৃণমূলের ওই নেতা কাংলা শেখের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘একটা মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে অসহায় এক বাবাকে এমন কথা বলতে পারে। কাংলা শেখ যে সব জানেন সেটা তো এই ঘটনা থেকেই পরিষ্কার। আমরা চাই কাংলাকেও গ্রেফতার করুক পুলিশ।’’

পুলিশ কাংলাকে গ্রেফতার করছে না কেন?

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে আমরা তিন জনকে গ্রেফতার করেছি। দু’জনকে আটকও করা হয়েছে। প্রয়োজনে কাংলাকেও গ্রেফতার করা হবে।’’

তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে কাংলা বলেন, ‘‘অপহৃত ওই শিশু আমার আত্মীয়। তাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের সঙ্গে একাধিক বার কথা বলছি। আমার ছেলেরাও ওকে খুঁজছে। আসলে সিপিএম এটাকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করেছে। ওরাই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে এমন অভিযোগ করিয়েছে।’’

যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সামশুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘‘এটা একেবারেই হাস্যকর অভিযোগ। আমরা নই, ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন অপহৃত শিশুটির বাবা।’’

chapra nadia tmc leader kidnapping chapra kidnapping tmc leader accused
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy