Advertisement
E-Paper

যুব নেতা খুনে ফের বাণী-আবীর কাজিয়া

গুঞ্জনটা শুরু হয়েছিল রবিবার বিকেল থেকেই।জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তাঁকেই।ঠিক সেই মুহুর্তে রানাঘাটের যুব তৃণমূল নেতা খুনে ফের উঠল তাঁর দিকেই আঙুল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৭:০১
অরুণ সিকদার। —নিজস্ব চিত্র।

অরুণ সিকদার। —নিজস্ব চিত্র।

গুঞ্জনটা শুরু হয়েছিল রবিবার বিকেল থেকেই।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তাঁকেই।

ঠিক সেই মুহুর্তে রানাঘাটের যুব তৃণমূল নেতা খুনে ফের উঠল তাঁর দিকেই আঙুল।

এ দিন সকালে গাংনাপুরে বাজার থেকে ফেরার পথে মোটর বাইকে আসা জনা চারেক দুষ্কৃতীর গুলিতে রাস্তাতেই খুন হন দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অরুণ সিকদার (৪২)। তৃণমূল নেতা আবীররঞ্জন বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অরুণ খুনের পর এ দিন দুপুরে আবীর স্পষ্টই জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘যারা নির্বাচনে জোটের হয়ে কাজ করে দলীয় প্রার্থীদের হারিয়েছিল, সেই বাণীকুমারের লোকেরাই এ কাজ করেছে।”

যা আরও এক বার, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, নেত্রীর ঘনঘন নির্দেশ সত্ত্বেও তৃণমূল আছে তৃণমূলেই, দলে গোষ্ঠী কোন্দলের বিরাম নেই। অভিযোগ শুনে এ দিন বাণী অবশ্য বলেন, ‘‘কে কী বলছে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

সোমবার সকাল, সাড়ে আটটা নাগাদ ছেলেকে স্কুলের গাড়িতে চড়িয়ে বাজার সেরে মোটরবাইকে গাংনাপুরে বাড়ি ফিরছিলেন অরুণ। তিনি রানাঘাট-২ ব্লকের তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গাংনাপুর স্টেশন বাজার এলাকায় আচমকা তাঁর মোটরবাইক ঘিরে ধরে ধরে জনা চারেক যুবক। খুব কাছ থেকে দু’টি গুলি করা হয় তাঁকে ঘটনাস্থলেই মারা যান অরুণ।

হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, একটি গুলি লাগে বুকে অন্যটি পেটের নিচের দিকে। ধারাল অস্ত্র দিয়েও তাঁকে কোপান হয় বলে জানান চিকিৎসকেরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেকেন্ড কয়েকের মধ্যেই অপারেশন সেরে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

ঘটনার কথা জানতে পেরেইবোমা ফাটান আবীর। গত বিধানসভা নির্বাচনে আবীর রানাঘাট (দক্ষিণ) কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন। তিনি একা নন, শান্তিপুর এবং রানাঘাটের অন্য প্রার্থীরাও ফল প্রকাশের পরে বাণীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন দলনেত্রীর কাছে। ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাণীকে সভাধিপতির পদ থেকে সরিয়ে দিতেও সময় নেননি। তাঁর জায়গায় পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ দীপক ঘোষকে সভাধিপতি করার কথা ঘোষণাও করে দিয়েছিল দল। তবে ছবিটা বদলে গিয়েছিল তার পরেই। বাণীকে ফের ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল গত দু’দিন ধরে। এদিন সন্ধ্যায় সে ব্যপারে দলীয় বৈঠকও ডাকেন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। তবে সে ঘোষণা এখন স্থগিত রাখা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিন, ওই খুনের পরে, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে সকাল এগারোটা থেকে গাংনাপুর রেলগেটে অবরোধ করে তৃণমূল কর্মীরা। এর ফলে রানাঘাট-বনগাঁ শাখায় রেল চলাচল থমকে য়ায়। চাকদহ–আঁইশমালী রাস্তায় যানবাহনও বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টা দুয়েক পর প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে অবশ্য অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। ততক্ষণে রাস্তায় তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ সুপার শিশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তল্লাশি শুরু হয়েছে।”

তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে খুনের ঘটনা গাংন‌াপুর এলাকায় নতুন নয়। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে এই গাংনাপুর স্টেশনের কাছেই তৃণমূলনেত্রী তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ঝুমুর বসুর এক আত্মীয়, আমিত বসুর বাড়িতে খুন হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী তাপস মজুমদার। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তাকে অমিতবাবুর বাড়ির উঠোনে গুলি করে খুন করা হয়। তাপস ছিলেন বাণীকুমারের পরিচিত অনুগামী। সেই খুনের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছিল আবীরবাবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। সেই খুনে আঙুল উঠেছিল অরুণ সিকদার দিকে। এ দিন তিনিই খুন হয়ে গেলেন।

আবীর-বাণীর ‘সুসম্পর্ক’ জেলায় সকলেরই জানা। ২০১১ সালে ‘বহিরাগত’ প্রার্থী আবীররঞ্জন বিশ্বাসকে মেনে নিতে পারছিলেন না এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একটা অংশ। সেই সময় আবীরবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট হিসাবে তাকে নিয়ে এলাকা চষে ফেলে ছিলেন বাণী রায়। জিতেও গিয়েছিলেন আবীর। কিন্তু সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে তারপরেই।

এ বার ফল প্রকাশের পরে, নানা মহল থেকে নেত্রীকে বোঝানো হয়, নদিয়ায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে পরাজয়ের পিছনে রয়েছেন বাণী। দিন কয়েক পরে পাল্টা বোঝানোও শুরু হয়, নদিয়ায় সংগঠনে বাণীর বিকল্প নেই। তার জেরেই বাণীর প্রত্যাবর্তণ প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। তা হলে?

দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর বলছেন, ‘‘কেউ তো দেখেনি, কে খুন করেছে। তাই কোনও অভিযোগ করছি না।’’

Miscreants Leader TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy