কয়েক শো মানুষ মিলে সোমবার মাঝেরচড়ের ইটভাটা-সংলগ্ন যে সরকারি জমি দখল করতে গিয়েছিল তা খাতায়কলমে আবাসন দফতরের। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, প্রায় সাড়ে তিনশো বিঘে জমি রয়েছে ওই এলাকায়। বেশ কিছু বছর আগে কিছু লোক ইট ভাটার ওই জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিতে শুরু করেছিলেন। সেই সময় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। জমিদখল আটকানোর জন্য তখন আবাসন দফতর জমির বিভিন্ন জায়গায় নোটিস টাঙিয়ে দেয়। কিন্তু সে সব নোটিস কিছু দিনের মধ্যেই খুলে ফেলে এলাকার প্রভাবশালী কিছু লোক। অভিযোগ, আবার সেখানে শুরু হয় জমি দখল এবং তা হতে থাকে শাসক দলের কিছু স্থানীয় নেতার মদতে। এরই ফলশ্রুতি সোমবারের জমি দখল সংক্রান্ত গোলমাল।
সোমবার যেখানে জমি দখল করতে এসেছিল জনতা সেই মাঝেরচড় ইটভাটার পাশে গ্রামীণ এলাকায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সোমবার স্থানীয় অনেকে অভিযোগ জানালেন, ‘‘সরকারি খালি জমি টাকার বিনিময়ে বেহাত হয়েছে। সেখানে অবৈধ ভাবে একের পর এক বাড়ি তৈরি হয়েছে।’’এ রকমই একটি বাড়ির মালিক অর্জুন দাস এ দিন খোলাখুলি বললেন, ‘‘বছর তিনেক আগে স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতাকে টাকা দিয়ে জায়গা কিনেছে আমার জামাই। জমির কোনও কাগজ এখনও মেলেনি।’’ তবে অর্জুন সেই নেতাদের নাম জানাতে চাননি।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার বিজেপির স্বাস্থ্য সেলের নেতা কৃষ্ণ মাহাতো কল্যাণীর মহকুমাশাসকের কাছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ভক্তিভূষন রায়ের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কৃষ্ণবাবু বলছেন, ‘‘ভক্তিবাবু শহরের নেতা হলেও গ্রামীণ মাঝেরচরেও ওঁর প্রভাব রয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে ওদের শহরের নেতারা গিয়ে গ্রামে ভোট করিয়েছিলেন। ভক্তিবাবু ও তাঁর লোক জনই সরকারি জমি টাকা নিয়ে বিক্রি করেছেন।’’ এলাকার এক বৃদ্ধ বললেন, ‘‘জমি দখল হয় রাতে। রাতেই ঘর তৈরি হয়। আশপাশের কিছু পাড়া তো এ ভাবেই গজিয়ে উঠেছে। দখল করার ইচ্ছা আছে বলেই তো আবাসন দফতরের নোটিস খুলে ফেলা হয়েছে।’’
ভক্তিবাবু পাল্টা বলেন, ‘‘ আমার সম্পর্কে এ সব অপপ্রচার চলছে।’’ আর শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কুর বক্তব্য, ‘‘দল কখনই তোলাবাজিকে সমর্থন করে না। আমি নিজে অবৈধ ভাবে তৈরি কিছু বাড়ি ভেঙে দিয়েছি। ভবিষ্যতে বাকিগুলিও ভাঙব।’’ কল্যাণী ব্রিক ফিল্ডের সহকারি অধিকর্তা সত্যজিত চট্টোপাধ্যায় এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সোমবার সকালে কল্যাণীর প্রান্তে মাঝেরচড়ে সরকারি ইটভাটার জমি দখল করে নিয়েছিলেন কয়েক শো জনতা! জমিতে সিমেন্টের ছোট পিলার, কাঠের খুঁটি, দড়ি বেঁধে দিয়েছিলেন তাঁরা। দখলকারীরা জানিয়েছিলেন, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে তাঁদের। দিনের পর দিন তাঁরা দেখছেন, শাসক দলের কিছু স্থানীয় নেতা টাকার বিনিময়ে সরকারি জমি বেপাড়ার লোকেদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাঁরা এসে দিব্যি জমি দখল করে বসে ঘরবাড়ি বানিয়ে নিচ্ছেন। অথচ তাঁরা এলাকার লোক হয়ে জমি পাচ্ছেন না।
সোমবার দুপুরে ঘটনার কথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ভক্তিভূষন রায়, কল্যাণী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তপন মণ্ডল ও পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনোজ বিশ্বাস। ভক্তিবাবু মাঠে নেমে পড়ে পিলার তুলতে শুরু করেন আর দড়িগুলি পোড়ানোর নির্দেশ দেন। তাতেই তুলকালাম কাণ্ড শুরু হয়। তাঁদের সামনেই লোকজন বলতে থাকেন, ‘‘স্যার আমাদের জমি দখল করতে দিচ্ছেন না। আর ওই দেখুন আপনাদের নেতারা টাকা নিয়ে লোক বসিয়েছেন। জমিতে ঘর তৈরি করেছেন। আমাদের পিলার ভাঙতে হলে ওদের ঘরও ভাঙতে হবে।’’ শুরু হয় বচসা, হাতাহাতি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দখলকারদের সরিয়ে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy