Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মনোজকে সরিয়েই দিল টিএমসিপি

পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেনি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে টুঁ শব্দও করছে না। কিন্তু শান্তিপুরের মনোজ সরকারের ডানা ছাঁটল তাঁর নিজের সংগঠন টিএমসিপি। এবং তা যে শান্তিপুর কলেজে গোলমাল করার কারণেই, তা-ও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হল।

মনোজ সরকার

মনোজ সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪০
Share: Save:

পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেনি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে টুঁ শব্দও করছে না। কিন্তু শান্তিপুরের মনোজ সরকারের ডানা ছাঁটল তাঁর নিজের সংগঠন টিএমসিপি। এবং তা যে শান্তিপুর কলেজে গোলমাল করার কারণেই, তা-ও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হল।

গত ২৯ অগস্ট শান্তিপুর কলেজে ঢুকে এক দল যুবক আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে শিক্ষককে শাসনোর পর থেকেই মনোজকে নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল তৃণমূল অনুগামী ছাত্র সংগঠন। পুলিশের কাছে দায়ের হওয়া অভিযোগে সরাসরি মনোজের নাম না থাকলেও তাঁকে ধরার জন্য চাপ বাড়ছিল পুলিশের উপরে। তৃণমূলও যে তাঁকে নিয়ে সন্তুষ্ট নয় তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়।

এ বার সেই মতোই পদক্ষেপই করল টিএমসিপি। বুধবার স‌ংগঠনের শান্তিপুর শহর সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল মনোজকে। কেন এই ব্যবস্থা নেওয়া হল, তা-ও গোপন করেননি টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি জয়া দত্ত। তিনি বলেন, “মনোজ সরকারকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রধান কারণ শান্তিপুর কলেজের গন্ডগোল। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসছিল।’’ যদিও এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি রাজীব দাসের মতে, গোটা ব্যাপারটাই লোক দেখানো। তাঁর কটাক্ষ, “পুলিশ মনোজকে গ্রেফতার করবে কী করে? ও তো তৃণমূলের সম্পদ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখবেন, ওকে আবার বড় পদ দিয়ে ফিরিয়ে আনবে।”

শান্তিপুর কলেজের পরিচালন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে কিছু দিন ধরেই গোলমাল দানা বাঁধছিল। তাদের অপছন্দের শিক্ষকেরা যাতে নির্বাচনে লড়তে না পারেন তার জন্য তাঁদের হুমকি দিচ্ছিল টিএমসিপি। তার জেরে প্রথমে নবেন্দু বসাক নামে এক শিক্ষককে রাস্তায় টোটো থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়। কয়েক দিন পরেই কলেজে ঢুকে অঙ্কের শিক্ষক অমরজিৎ কুণ্ডুকে মারধর করে এক দল যুবক। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে তাঁকে শাসানোও হয়। ওই ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকলে পরে অধ্যক্ষার ঘরে বসানো ক্যামেরার ফুটেজে ওই যুবকদের অনেককেই দেখা যায়। হাত উঁচিয়ে অধ্যক্ষাকে শাসাতে দেখা যায় মনোজকে। শুধু তা-ই নয়, মূলত তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গেরা গোলমাল পাকিয়েছিল বলেই কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জয়া বলেন, ‘‘কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য কে হবেন, সেটা দেখা ছাত্রদের কাজ নয়। সংগঠনের গাইড লাইন মেনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে কাজ করতে না পারলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে।” অধ্যক্ষা চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে অন্তত এক জন মনোজের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। কিন্তু মনোজ সে দিন থেকে বেপাত্তা। পরে আনন্দবাজারকে তিনি ফোনে জানিয়েছিলেন, আত্মসমর্পণ করতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা-ও তিনি করেননি। এ দিন বারবার তাঁর মোবাইলে ফোন করা হলেও তা বন্ধ ছিল।

এর পরেও মনোজকে কেন ধরা হচ্ছে না, সে বিষয়ে কোনও কথাই অবশ্য বলতে চাননি নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া। তবে কি জেলার এক বা একাধিক তৃণমূল নেতা তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন? জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য দাবি করেন, “আমরা কেন পুলিশকে কিছু বলতে যাব? পুলিশকে নির্দেশ দেওয়ার অধিকার আমাদের নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manoj Sarkar Suspended TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE